দিনা ফেরদৌস:
নারীবাদ নিয়ে আমাদের সমাজে বহু ভ্রান্ত ধারণা আছে। সেই ধারণা থেকে বেশিরভাগই নারীবাদকে পুরুষদের বিরুদ্ধে দাঁড় করান। আর আমি নারীবাদকে দেখি কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায়, ” বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর “।
পুরুষদের সমান অংশগ্রহণ ছাড়া নারীবাদ কোনভাবেই প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব না। নারীবাদ সবসময়ই পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে, পুরুষদের বিরুদ্ধে নয়। যেকোনো নারীও ধারণ করতে পারেন পুরুষতন্ত্র। করে থাকেনও।
তবে আমিও মনে করি নারীবাদের আসলে খুব একটা দরকার নেই, যদি আমরা নারীরা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হই, যেই অধিকারটুকু আমাদের পাবার কথা, সেইটুকু যদি নির্ভিঘ্নে ভোগ করতে পারি সকল নারী । সমস্যা বেশিরভাগ আমাদের নারীদের মধ্যেই, আমরা নিজেদের অধিকার ‘বুঝিয়া পাওয়া’কে অন্যের দয়া মনে করি। অনেক সময় শোনা যায়, মেয়ে পড়াশোনায় আছে তো কী হয়েছে, ভালো স্টাবলিশ পাত্র পাওয়া গেছে, বিয়ে দিয়ে দাও, বর পড়াবে। এই যে মুখে মুখে বরপক্ষও কথা দিলো পড়াবে, তার কি নিশ্চয়তা আছে? এটা কি কাবিনের দেনমোহরের শর্তের মতো কোন শর্ত নাকি যে পাত্রপক্ষ বিয়ের পর মেয়েকে পড়াতে বাধ্য? সামাজিক নিয়মে অনেক মেয়েও মনে করে, আর পড়াশোনা করে কী হবে, ভালো পাত্র তো পেয়েই গেছি, কতো মেয়ে পড়াশোনা শেষ করে ভালো পাত্র পায় না…। মানে এখনও বেশিরভাগ মেয়েই পড়াশোনা করে ভালো পাত্র পাবার জন্যে।
মেয়ের পরিবার যদি দেখে তাদের মেয়ে দেখতে সুন্দর না, তখন মেয়ের মাথায় ঢুকিয়ে দেয় পড়াশোনা করলে ভালো পাত্র পাওয়া যাবে, যোগ্য মেয়েদের জন্যে পাত্রের অভাব হয় না। মেয়ে যোগ্য হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াবে সেই চিন্তা না করে, শুধু বিয়ের জন্যে যোগ্য করে তোলার মনমানসিকতাই যোগ্য মেয়েদেরই অযোগ্য বানিয়ে রাখে। ফলে দেখা যায় সংসারে শিক্ষিত চাকুরিজীবী মেয়েরাও নির্যাতনের শিকার হয়। কারণ সে জীবনে বিয়ে ও সংসার ছাড়া আর কিছু কল্পনাও করেনি।
পরিচিত একজনের এক ঘটনা বলি, যিনি আমার সাথে আলাপ করছিলেন তিনি পাত্রের আত্মীয় হোন। পাত্র শিক্ষিত, সুদর্শন, মার্জিত, ধার্মিক, মধ্যবিত্ত পরিবার তার। এই পাত্রের মূল্য ছিল তার শিক্ষা – সৌন্দর্য, তিনি তাই দেখিয়েই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিদেশি মেয়ে বিয়ে করেন, যেই মেয়ের বিদেশি পাসপোর্ট ছাড়া দেখার মতো কোন সৌন্দর্য নেই (এই কথা তার পরিবার, আত্মীয় স্বজন সকলের মুখে মুখে)। তার মনে কী ছিল কে জানে!
আমাকে যিনি এই ঘটনা বলেন, তিনি বলেছিলেন, আমাদের বিয়ের সময়-ই সন্দেহ হয়েছিল এই মেয়ে সংসার করবে না। বললাম, কেন? বললেন ওই মেয়ে কাবিননামায় সই করার সময় বলেছে ১৮ নং কলামে যেইখানে লেখা আছে, ” স্বামী স্ত্রী’কে তালাক প্রদানের ক্ষমতা অর্পণ করিয়াছে কিনা, করিয়া থাকলে কী কী শর্তে” , মেয়েটি সেই অধিকার চায়। কোন ভদ্রলোকের মেয়ে এইসব অধিকার চায় না। যার ফলে আমাদের কিছু বুঝতে না দিয়ে, আমাদের এতো সুন্দর ভালো ছেলেকে হঠাৎ করে ডিভোর্স দিয়ে দিল। এই বিশ্রী মেয়েটিকেও আমাদের ছেলে কতো কেয়ার করতো! তার কথায় স্পষ্ট, সুন্দরী মেয়েদেরই স্বামীর কাছে থেকে ভালোবাসা, কেয়ার পাবার অধিকার আছে শুধু, আর তাদের ভাষায় যারা বিশ্রী, তারা বরের পায়ে তেল মালিশ করে সংসার করবে।
এই মেয়ে বিদেশে বড় হওয়া, সে নারীবাদ নিয়ে কিছু ভাবেইনি হয়তো জীবনে, তবে সময়মতো তার নিজের অধিকার ঠিকই বুঝে নিয়েছে। লেখাটি পড়ে আপনারাও বুঝতে পেরেছেন, তার চেহারা নিয়ে আশেপাশের লোকজন যদি এমন ধারণা করে, বরের কাছ থেকেও সে নিশ্চয়ই এমন কোন আচরণ পেয়েছে, যে কিছু না জানিয়ে অভিমানে চলে গেছে।
এখন কাবিননামার ১৮ নং কলাম সম্পর্কে আমার জানামতে কিছু বলি, আমাদের দেশের বেশিরভাগ মেয়ে পক্ষেরই ধারণা থাকে, যদি মেয়ের ডিভোর্স দেয়ার অধিকার থাকে তো সেই বিয়ে টিকে না। আরে বাবা দুজন মানুষের যদি একসাথে থাকার ইচ্ছে নাই হয়, তবে কাউকে এইসব নিয়মে আটকে কি জোর করে সংসার করানো যায়? আইন ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে কিছুদিন সিনিয়রদের সাথে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, ১৮ নং কলামের অধিকার না থাকলে, মানসিক নির্যাতন সহ্য করেও বহু মেয়ে সংসার থেকে বের হয়ে আসতে পারছে না। কারণ তালাকের অধিকার পেতে হলে তাকে আগে প্রমাণ করতে হবে যেই যেই বিষয় অনুপস্থিত থাকলে তালাকের অধিকার পাওয়া যায়।
একটি সংসারে নির্যাতন বহু রকমের হয়ে থাকে, কিন্তু শর্তে গেলে দেখা যায়, স্বামী যৌনভাবে অক্ষম কিনা, ভরণপোষণ ঠিকমতো দেন কিনা, পাগল কিনা, বহুকাল যাবৎ কোন যোগাযোগ ছাড়া সংসারে অনুপস্থিত কিনা ইত্যাদি। তো, মামলা টামলার ঝামেলায় অনেকেই মেনে নেয়। আর সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে অর্থনৈতিক সমস্যা। যেহেতু আমাদের সমাজে মেয়েদের তৈরিই করা হয় বিয়ের জন্যে, ফলে নিজেকে যোগ্য আলাদা মানুষ হিসেবে এরা কখনোই ভাবতে পারে না। একা ফাইট করাটাকে তারা ভয় পায়। পাওয়ারই কথা। প্রস্তুতি ছাড়া যুদ্ধ করা যায় নাকি! কিন্তু জীবন তো সবার সমান গতিতে চলে না। আজ রূপ যৌবন আছে, তাই স্বামী পুতুপুতু করে। কাল দুই বাচ্চা জন্মের পর সংসার করতে করতে যৌবন হারিয়ে গেলে যে স্বামী রাত জেগে আরেকজনের সাথে মোবাইলে বা অফিসে সুন্দরী কলিগদের নিরস বৌ’য়ের দুঃখ বলবে না; এমন নিশ্চয়তা দেয়া যায় না।
তাই মেয়েদেরই এই ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। বিয়ের আগে নিজেদের পড়াশোনা শেষ করতে হবে। ক্যারিয়ারিস্ট ছেলেরা কিন্তু ক্যারিয়ার না বানিয়ে বিয়ের স্বপ্ন দেখে না। নারী অধিকার সমাজের কাছ থেকে আশা করার আগে, নিজে নিজের জন্যে কতো জায়গায় ফাইট করেছি, সেটা দেখতে হবে। কী কারণে বোঝা হয়ে আরেক সংসারে যেতে হবে? আর বোঝা যে টানবে সে দুই কথা বলার সুযোগ পেলে ছাড়বে কেন, সেটাও বুঝতে হবে? ফলে পারিবারিক নির্যাতন সহ্য করা আমাদের বেশিরভাগ মেয়েদেরই অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে।
গত ২২সেপ্টেম্বর ২০২০ সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে ভাত রান্না হয়নি বলে ঝগড়া করে স্বামী স্ত্রী’কে কুপিয়ে হত্যা করেন। ( সূত্রঃ প্রথম আলো)
বাইরে থেকে এসে ভাত রান্না না পাওয়ার মধ্যে যতোটা দোষ আছে, খুন তো তার চেয়েও জঘন্য অপরাধ। আমরা ধরেই নেই বেটা মানুষের রাগ থাকবেই। বেটা মানুষেরই আছে শুধু বউ ভালো না লাগলে তালাক দেয়ার অধিকার।
এইসব পুরুষতান্ত্রিক ভাবনাকে আরো শক্ত করতে জুড়ে দেই, ভদ্র ঘরের মেয়েরা তালাক দিতে পারে না, ভদ্র ঘরের মেয়েরা স্বামী শত অন্যায় অত্যাচার করলেও মানিয়ে নেয়, সংসার ছাড়ে না। ঠিক এই জায়গায় কাজ করতে হবে মেয়েদের নিজেদেরকেই। তারা ভদ্র ঘরের মেয়ে হয়ে থাকবে না, নাকি নিজেদের যোগ্য করে, অধিকার সচেতন হয়ে জীবন যাপন করবে?
কথায় আছে না, ” দুধেল গাইয়ের লাত্থিও ভালো “। মেয়েরা এখন যদি মনে করে এতো যোগ্য স্বামী নিয়ে সমাজে কত সম্মান পাই, এই স্বামী যদি একটু বাজে আচরণ করে তো মানিয়ে নেয়া উচিৎ, সেই নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে গেলে তখন কিছু করার থাকে না। এটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। এরপর দেখা যায়, সেই চক্র থেকে বের হয়ে আসা যায় না, আবার থাকাটাও কঠিন। একটা সময় নিজের পরিবার, এমনকি বাচ্চাকাচ্চা বড় হয়ে গেলে তারাও দুর্বল মায়ের কষ্টটা ঠিক বোঝে না।
কথা হচ্ছে, ক্যারিয়ার, বিয়েশাদি, সংসার, এই সবকিছুর উপর নির্ভর করছে জীবনযাপন। গাছের গোড়ায় সমস্যা রেখে উপরে পানি ঢাললে এর সমাধান সম্ভব নয়। এইখানেই নারী-পুরুষ উভয়ের অংশগ্রহণ জরুরি। আপনার মা বা স্ত্রী না হয় দুর্বল, বোঝেন কম, কিন্তু নিজের মেয়েকে অন্তত পড়াশোনা করান, যোগ্য করে গড়ে তুলুন। তাহলে আগামীতে আর কোন বেকুব বউ বা মা পাওয়া যাবে না। আপনি নিজেই তো দেখেছেন সুন্দর চেহারার বেকুব বউকে নিয়ে কতো ঝামেলায় পড়তে হয়, তারচেয়ে পাশে যোগ্য মানুষ থাকলে জীবনে অনেক সহযোগিতা পাওয়া যায়।
পরিবারে মেয়েদের দুর্বলভাবে দেখা আমাদের কালচারের অংশ। এই মেয়েকে দিয়ে পড়াশোনা কিচ্ছু হবে না বিয়ে দিয়ে দাও। ওই মেয়েকে ছেলেরা স্কুল থেকে তোলে নিয়ে গেছে, তারে ভালো জায়গায় বিয়ে দেয়া যাবে না, ওর জন্যে মোটা অংকের যৌতুক রাখতে হবে। এই মেয়ে সুন্দরী, কলেজে গেলে কী না কী করে, ওরে সুপাত্র পাওয়া মাত্রই বিয়ে দিয়ে দাও। এই মেয়ের প্রেমের খবর সারা পাড়া যেনে গেছে, কিছু একটা ছেলে জুটলেই হয়, যার তার কাছে বিয়ে দিয়ে দাও। এই মেয়েটা কালো, এরে পার করা কঠিন আছে, তারে বেশি করে পড়াশোনা করাতে হবে, তবেই যদি শিক্ষা দীক্ষা দেখে শিক্ষিত একটা বলদও আসে, তার কাছে দিয়ে দাও।
এইসব ক্ষেত্রে সকল মেয়েদের পরিবারই যেন হচ্ছে, এক কন্যা দায়গ্রস্ত পরিবার। আর ছেলের পরিবার হচ্ছে, নিয়ে উদ্ধারকারী পরিবার। ফলে ওই সংসারে মেয়েদের প্রথম থেকেই বলার কিছু থাকে না। উল্টো, যদি কোন পরিবারে স্বামী বা শ্বশুরালয়ে একটু ভালোবাসা পায়, তবে মনে করে সে বেশি কিছু পাচ্ছে, সে ওইখান থেকে ভালোবাসা পাবার কথা না। আরে বাবা স্বামী স্ত্রী’র সম্পর্কই তো হচ্ছে, বন্ধুর মতো সম্পর্ক, ভালোবাসার সম্পর্ক। এইখানে দেখা যায়, একদল সারাদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের প্রেমের ছবি পোস্ট করতেই থাকেন, যেন স্বামী স্ত্রীর প্রেম থাকা অস্বাভাবিক কোন বিষয়, একমাত্র দিল্লিকা লাড্ডু তারাই খেয়ে নদী বানিয়ে সাঁতার কাটছেন।
আরো একদল আছেন, ওদের এইসব ছবি সত্য না মিথ্যা প্রেম তা নিয়ে গবেষণা করা, আরে আমরা কি প্রেম করি না, কই ছবি তো দেই না দিনরাত।
আপনি স্বামীর সাথে মোহাব্বতের ছবি সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেন না ভালো কথা, তবে আরেকজনেরটা দেখেও এতো উত্তেজিত হবার কিছু নেই। ভালো আছি, এটা দেখিয়ে বা গবেষণা করে থাকা যায় না। এর জন্যে কিছু যোগ্যতা লাগে। সেই যোগ্যতা বাতাস থেকে আসে না, নিজেকেই অর্জন করে নিতে হয়। সেই যোগ্যতায় কেউ যদি কারো থেকে খুব বেশি তফাৎ এর হয়ে থাকে, তবে সমস্যা পিছু ছাড়বে না।
আপনি সংসারের কোন জায়গায় কম্প্রোমাইজ করবেন, আর কোন জায়গায় ছাড় দেবেন না, এটা নিজেকেই ঠিক করে নিতে হবে। আমাদের জীবনে ঘটনা দুর্ঘটনা থাকবেই। ভুল একটা বয়সে হতেই পারে। তার জন্যে যদি নিজেই নিজেকে দুর্বল ভাবতে শুরু করি, তো দুনিয়ায় কোন শক্তি নেই আমাদের সাহায্য করার। মনে রাখতে হবে সব কিছু নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আপনাকে রাস্তায় নেমে নারীবাদ করার দরকার নেই, নিজের অধিকার আদায় নিজের ঘর থেকে ছোট্ট ছোট্ট বিষয়ে আদায় করে নিতে হবে দায়িত্বের সাথে।
অনেকে বলেন, নারীবাদীরা এতো সচেতন হয়েও তারা কীভাবে নির্যাতনের শিকার হোন?
উত্তরে বলবো, নারীবাদীরা ভিনগ্রহের কোন বাসিন্দা নন, যেই সমাজে নির্যাতকরা আছে, সেই সমাজে যে কেউ নির্যাতনের শিকার হতে পারেন। তবে নারীবাদীরা নির্যাতন সহ্য করে বসে থাকেন না, তারা প্রতিবাদ করেন অন্যায়ের, তারা বেরিয়ে আসেন সেই পরিবেশ থেকে। তারা নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন, লুকিয়ে না রেখে যেইখানে একা সামাল দেয়া সম্ভব হচ্ছে না, সেইখানে সাহায্য নেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাদের লড়ে যাওয়া দেখে আরো মানুষ সচেতন হন। বিশেষ করে যারা মনে করেন তাদের বেরিয়ে আসার আর কোন রাস্তা নেই বা তারা একা, তখন তারাও সাহস পান। তবে সাধারণ আর নারীবাদীদের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, নারীবাদীরা সমস্যার মোকাবিলা করতে প্রস্তুত থাকেন। আপনি হয়তো ভয় পান।
এইখানে আরেকটু বলতে চাই। এই সাহসী পদক্ষেপের জন্যে আপনাকে নারীবাদী হওয়ার কোন দরকার নেই, যদি মনে হয় নারীবাদ দিয়ে কী হবে আমাদের মানববাদ হওয়া উচিৎ। আমি বলবো আপনি ঠিক, আপনি তো একজন মানুষই, আপনার মানবাধিকার অধিকার লঙ্ঘন করার অধিকার কারও নেই, সে আপনি যেই হোন। মানুষ হিসেবে আপনার যেই অধিকার পাবার কথা তার জন্যে তো আপনার আওয়াজ দেয়ার অধিকার আছে, নাকি নারীরা মানবের মধ্যে পড়েন না? যদি পড়ে থাকেন বলে মনে করেন, তো কী কারণে প্রতি মুহূর্তে নিজেকে দুর্বল ভাবছেন? আর অন্যকে সুযোগ করে দিচ্ছেন আপনার ব্যক্তিত্বকে কিনে নিতে?
নারীবাদের দরকার নেই, আপনি নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হলেই হয়। আপনি কী চান, কতটুকু চান তা আগে বুঝতে হবে। আপনার চাওয়া পাওয়ার দায়িত্ব যখন অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেবেন, তখন সে তার সুবিধা মতো চালনা করবে। কী কারণে আপনার বরেরই শুধু অধিকার থাকবে, ভালো না লাগলে আপনাকে তাড়িয়ে দেবার? এটা কি আপনার জন্যে অসম্মানজনক নয়? যে আপনি চাইলেও পারছেন না তাকে বাদ দেয়ার, শুধুমাত্র কাবিননামার ১৮ নং শর্ত পূরণ না করার কারণে!
শুনুন বিয়ে, সংসার এই সবকিছুই ভালো থাকার জন্যে। পড়াশোনা/ক্যারিয়ার এই সবকিছুই অর্থনৈতিক সমস্যা থেকে মুক্তির জন্যে। পড়াশোনা করলে সকলেই যে জ্ঞানী হয়ে যাবে এমন কোন নিশ্চয়তা নেই, কিন্তু পড়াশোনা না থাকলে যে, ভালো জব পাওয়া যাবে না, এটা ৯৯% নিশ্চয়তা দিয়ে বলা যায়। সংসারে আপনার আয় থাকলে শ্বশুর বাড়িতে খাতির এমনিতেই পাবেন। না হলে সারাদিন সংসার করেও শুনতে হবে, সারাদিন ঘরেই তো থাকো।
আর কথা হচ্ছে, আপনাকে কেউ কিছু বললে মুখ বন্ধ করে শুনতে থাকার অভ্যাস করলে, এক সময় আর কিছুই করার থাকবে না। আরেকজনের যেমন আপনাকে কথা শুনানোর কোন অধিকার নেই, তেমনি একজন মানববাদী হিসেবে নিজের উপর হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ না করে, মেনে নেয়াও উচিৎ না। আওয়াজ তুলুন। আপনার অধিকার আদায় করে নিন। কঠিন দুই রাস্তাই। হয় ঘরে নির্যাতন সহ্য করবেন, না হয় বাইরে ফাইট করবেন। ঘরে নির্যাতন সহ্য করতে করতে আপনি শেষ হয়ে যাবেন, নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলতে পারেন। কিন্তু বাইরে ফাইট করলে, নতুন দিনেরও সন্ধান পেতে পারেন। নতুন করে বাঁচা শিখবেন।
ছোটখাটো বিষয় নিয়েও কোন কোন সময় ফাইল করা লাগে। কারণ আমাদের অনভ্যস্ত চোখ কোনকিছুই মেনে নেয় না, যতক্ষণ পর্যন্ত না দেখিয়ে দিচ্ছেন তোকে থোড়াই কেয়ার করি।
আমার এক বড়মা ( বড়মা- বাপ-মায়ের দাদী-নানীদের বলি) বুড়ো বয়সে তার হঠাৎ মনে হলো শাড়ি পরলে তার শরীর বেখেয়ালে দেখা যায়, তাই তার সালোয়ার-কামিজ পরা উচিৎ। তিনি বিশাল সালোয়ার-কামিজের সাথে বড় ওড়নায় মাথা ঢেকে রাখতেন সব সময়। তবুও তাকে নিয়ে সকলের সমালোচনার শেষ ছিল না, বুড়ো বয়সে ভীমরতি, ফ্যাশন করছেন আরো কত শত। তিনি সেইসব কানেই তুলতেন না, বলতেন মরার পর আমার হিসাব আমি দেবো, পিছনে যে বলে গুনাহ তার হবে। পরে এক সময় তার সালোয়ার-কামিজ পরা নিয়ে কথা বলা বন্ধ হয়ে গেলো।
এইখানে বলে রাখা ভালো, কিছু মানুষ সব সময় থাকবে, যারা আপনার ভালো -মন্দ যাই হোক সবকিছু নিয়ে মন্তব্য করে আপনাকে দুর্বল করে রাখতে চাইবে, তা আপনার খুব কাছের কেউও হতে পারেন। কিন্তু নিজের লক্ষ্যে নিজের অধিকার আদায়ে আপনাকেই সচেতন হতে হবে।
ভালো থাকবেন নিজের চেষ্টায়। আপনাকে ভালো না রাখার চেষ্টায় বহু মানুষ এমনিতেই পিছনে লেগে আছে। সচেতন হোন এক্ষুনি, না হলে “সময় গেলে সাধন হবে না “।