সাবরিনা স. সেঁজুতি:
ভেঞ্চার ক্যাপিটাল (Venture Capital) পুঁজিবাদ সমাজের এক জনপ্রিয় সংযোজন, যা বিশ্বের নানা দেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
ব্যক্তিগত মালিকানার একটি ধরন বলতে পারেন এই ভেঞ্চার ক্যাপিটালকে যেখানে বিনিয়োগকারীরা নতুন এবং সম্ভাবনাময় ব্যবসায়ীদের উদ্যোগ বা ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করে থাকেন। সাধারণত নামিদামী এবং ধনী বিনিয়োগকারীরা এতে বিনিয়োগ করেন, যেমন, বিনিয়োগ ব্যাংক এবং অন্য কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান।
তবে আজকে আমার আলোচনার বিষয় ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কী বা কীভাবে পরিচালিত হয় তা নয়। আজকে কথা বলবো আমেরিকার ভেঞ্চার ক্যাপিটালে লিঙ্গ বৈষম্য এবং বর্ণবাদের অনুশীলন নিয়ে।
আমেরিকার ভেঞ্চার ক্যাপিটালে নারী এবং কালোদের সংখ্যা লক্ষণীয়ভাবে অত্যন্ত নগণ্য। হার্ভার্ড বিজনেসের এক গবেষণায় দেখা গেছে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল থেকে বিনিয়োগপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোক্তাদের মধ্যে ৬৫ শতাংশে কোন নারী এবং ৮১ শতাংশে কোন কালো ব্যক্তি নেই। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ইন্ডাস্ট্রিতে প্রফেশনাল পদে কালো বা ল্যাটিনদের সংখ্যা তিন শতাংশেরও (৩%) কম। তাদের মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা রয়েছে অতি ক্ষুদ্র অংশের। এর ধারাবাহিকতায় ভেঞ্চার ক্যাপিটালের উচ্চপদে কালো নারীদের সংখ্যাটিও প্রায় শূন্যের কোঠায়। কারণ কালো নারীরা প্রথমত নারী, তার উপর কালো। সেকারণে তাদের প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায়িক উদ্যোগে ইচ্ছুক বিনিয়োগকারীও খুঁজে পাওয়া খড়ের গাঁদায় সুঁই খোঁজার মতো অবস্থা।
বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটা বিষয় খুবই প্রচলিত, তা হলো তারা মূলত স্ব-সম্প্রদায়ের মধ্যেই বিনিয়োগ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। যেহেতু বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কালো নারীদের সংখ্যা সর্বসাকুল্যে এক শতাংশ, ফলে খুবই ক্ষুদ্র পরিমাণ বিনিয়োগ যায় কালো নারী উদ্যোক্তাদের ঝোলায়।
আশার কথা হলো বর্ণবাদ এবং লিঙ্গ বৈষ্যম্যের শিকার কালো নারীরা এত প্রতিকূলতার মাঝেও টিকে আছেন। গত ছয় বছরে তাদের ব্যবসা পঞ্চাশ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৮ সালের হিসাব মতে, উদ্যোক্তা হিসেবে কালো নারীদের সংখ্যা ২০১৬-র তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। যদিও ভেঞ্চার ক্যাপিটাল থেকে তারা পাচ্ছিলেন ২৪৭.৭ বিলিয়নের মাত্র ০.০৬ শতাংশ।
ভেঞ্চার ক্যাপিটালে কালো-নারী উদ্যোক্তাদের এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটানোর লক্ষ্যে এবছরের মাঝামাঝিতে চারজন সফল কালো নারী, সারা কুইন্সট (Sarah Kunst), মারসিডিস বেন্ট (Mercedes Bent), সিডনি সাইকেস (Sydney Sykes) এবং সিডনি থমাস (Sydney Thomas) নতুন নতুন উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে এসেছেন। এই চার নারী তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রতিজ্ঞা করেছেন ভেঞ্চার ক্যাপিটালে তারা কালো নারীদের অবস্থার পরিবর্তন আনবেনই।
এ বিষয়ে থমাস বলেন, “ভেঞ্চার ক্যাপিটালে কালো নারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি আজ সময়ের দাবি”। সেই লক্ষ্যে তিনি কালো নারীদের (যারা ভেঞ্চার ক্যাপিটালের সাথে জড়িত) নিয়ে একটি দল গঠন করেছেন। দলটির লক্ষ্য হলো নিয়মিত ত্রৈমাসিক সভার আয়োজন করা এবং একে অপরের সাথে নিজেদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা। অন্যদিকে, থমাসের মতো সাইকেস শুরু করেছেন BLCK VC, যেখানে সাইকেস নানা বর্ণের উদ্যোক্তাদের একত্রিত করে একটি ইনক্লুসিভ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কমিউনিটি গড়ে তুলেছেন।
যখন ভেঞ্চার ক্যাপিটালের উপর মহলে একজন কালো ব্যাক্তি খুঁজে পাওয়াই কষ্টসাধ্য ছিল, তখন বেন্ট হলেন সেই ভেঞ্চার ক্যাপিটালের একমাত্র আফ্রিকান-আমেরিকান নারী পার্টনার। ভেঞ্চার ক্যাপিটালে তার সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষমতা দ্বারা তিনি প্রতিনিয়ত বর্ণ এবং লিঙ্গ বৈষম্য দুর করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সবশেষে যার কথা না বললেই নয়, তিনি হলেন সারা কুইন্সট, যার প্রতিষ্ঠান ‘ক্লিও ক্যাপিটাল’ সাধারনত টেকনোলজিতে বিনিয়োগ করে থাকে এবং যেখানে সব বর্ণের মানুষকে সমান অধিকার দেওয়া হয়।
বর্তমানে এই চারজন অসাধারণ নারী একসাথে একই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন যাতে ভেঞ্চার ক্যাপিটালে লিঙ্গ ও বর্ণ বৈষম্য দূর করে সেখানে কালো-নারীরদের স্থান সুনিশ্চিত করা সম্ভব হয়। সেই লক্ষ্যে বেন্ট বিনিয়োগ করেছেন কুইন্সটের প্রতিষ্ঠান ‘ক্লিও ক্যাপিটালে’ আর সাইকেস অংশ নিয়েছেন বেন্টের বর্ণবাদ প্রতিরোধ স্কাউট প্রোগ্রামে। অন্যদিকে থমাস কুইন্সটের সাথে চুক্তিতে এসেছেন যেখানে তারা শুধু নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করবেন। ব্যবসায়িক লাভ ক্ষতি ছাড়াও এই চার নারী একে অপরকে নানা পরামর্শ দিয়েও সাহায্য করছেন প্রতিনিয়ত। এভাবে তারা একে অপরকে শক্তিশালী করে তুলছেন।
তথ্য সূত্র: Hearst Magazine Media and Investopedia