সস্তা রসিকতা ও কিছু পটেনশিয়াল ধর্ষক

ফারাহ নাজ জাহান:

আমরা রসিকতা বলতে রসবোধ বুঝি। অবশ্যই সেটা কাউকে ছোট বা অপমান করে নয়। আধুনিকতা আর ডিজিটালাইজেশনের এই যুগে রসবোধের সামগ্রীও কম নয়। ফেসবুকের কল্যাণে এই রসবোধে এসেছে আবার কিছু পরিবর্তন। যেকোন কিছু ভাইরাল করা, কাউকে রোস্ট করা, মিমি করা এগুলো
রসবোধের নতুন নাম। এই রসবোধের নামে আবার কিছু সস্তা আর বিকৃত মানসিকতা স¤পন্ন মানুষ কয়েক টাকার ইন্টারনেটের জোরে নিজেদের যারপরনাই হনু মনে করে।

এবার চলুন, একটু গাণিতিক হিসাবে যাওয়া যাক। চলতি বছরের প্রথম থেকে এই ৯ মাসে ধর্ষণ করা হয়েছে ৯৭৫ জন নারীকে, গণধর্ষণ করা হয়েছে ২০৮ জন নারীকে, ধর্ষণ করার পর হত্যা করা হয়েছে ৪৩ জন নারীকে, যৌন হয়রানি করা হয়েছে ১৬১ জন নারীকে, যৌন হয়রানির শিকার হবার পর আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন ১২ জন নারী আর যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৩ জন নারী ও ৯ জন পুরুষ। হিসাবগুলো অন্য কোন দেশের নয়; এই সোনার বাংলার। (সোর্স- মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র)

আমি বলবো না, শুধুমাত্র ডিজিটালাইজেশন বা ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার জন্য আমাদের সোনার ছেলেরা আজ পটেনশিয়াল ধর্ষক। পৃথিবীর বহু দেশে ইন্টারনেট আমাদের থেকেও সহজলভ্য। অথচ তাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি, শাষণ ও বিচার ব্যবস্থা ধর্ষণকে ভাইরাসের মত ছড়িয়ে যেতে দেয়নি। অথচ আমাদের দেশে ধর্ষণ আজ কোভিডের থেকেও বড় ভাইরাসে রূপ নিয়েছে। আমরা সাইবার ক্রাইমটাকে মূল্য দিচ্ছি না বলেই নোংরা বিনোদনের প্রসার, এই সস্তা বিনোদনকে উৎসাহ দেবার পাশাপাশি কিছু পটেনশিয়াল ধর্ষক তৈরি হচ্ছে। অথচ উন্নত দেশে সাইবার ক্রাইমটাকে প্রচণ্ড গুরুত্বের সাথে দেখা হয়। উল্টো আমাদের দেশে ভিক্টিম ব্লেমিং করে বিভিন্ন পোস্টে নোংরা কমেন্ট করা, বিভিন্ন ব্যক্তিকে রোস্ট করে মিমি তৈরি করা, তাদের প্রোফাইলে গিয়ে নোংরা কমেন্ট করা এই বিকৃত মানসিকতার লোকগুলোকে আইনের আওতায় আনা দূরে থাক, এই বুলিংগুলোকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনাই করা হয় না। যে দেশের যুব সমাজের সেক্স এডুকেশন নিয়ে কোন জানা-শোনা নেই অথচ কয়েক টাকার ইন্টারনেটের জোরে ব্ল“ফিল্ম তাদের মোবাইলে এভেইলেবল তাদের দ্বারা ধর্ষণ করাটা অযৌক্তিক কিছুই নয়।

তাই মোবাইল কো¤পানির সস্তা ইন্টারনেট সহজলভ্য না করে সেক্স এডুকেশন বাধ্যতামূলক করাটাই এখন সময়ের দাবী। আর সস্তা রসবোধের জোগানদাতা, কমেন্ট সেকশনে নারী বিদ্বেষী কথা বলা, ধর্মকে ব্যবহার করে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার লোকগুলোকে আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি মানসিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে ধর্ষণ বা যেকোন নিপীড়নই কমিয়ে আনা সম্ভবপর হবে বলে মনে হয়।

লেখক:
Farah Naj Jahan
Psycho-social Counselor
BRAC migration programme

শেয়ার করুন: