সেক্সটিং এর ফাঁদে বিপর্যস্ত সেন্টিমেন্ট

শাহরিয়া দিনা:

সোশ্যাল মিডিয়া থেকে পরিচয়। হাই/হ্যালো থেকে আলাপচারিতার শুরু। সময় যত যায়, বন্ধুত্ব তত বাড়ে। শেয়ারিং হয় ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ। পরিবারে কে কে আছে থেকে কোথায় গিয়েছিলে, কী খেলে দৈনন্দিন জীবনের টুকটাক সবই উঠে আসে প্রতিদিনের আলাপে। এক পর্যায়ে গভীরতা বাড়ে কথোপকথনে। টেক্সটগুলো পৌঁছায় যৌনতায়।

মেয়েটিও এতোদিনে আপন ভাবতে শুরু করেছে, তাই আপত্তি জানায়নি। গভীর থেকে আরও গভীর হয় সম্পর্ক। আদান প্রদান হয় ন্যুড ছবিরও। অনেকটা সময় কেটে যাওয়ার পর মেয়েটা বুঝতে পারেন, তার ন্যুড ছবি নিয়ে তাকে ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছে। প্রেমের জাল বিছিয়ে তাকে যৌনদাসী বানানো হয়েছে।

প্রথমে লজ্জা আর সঙ্কোচ থেকে সে অবসাদে ভুগতে শুরু করে। এর মধ্যেই আসতে থাকে টাকার জন্য চাপ। টাকা দাও নইলে পরিবারের কাছে পৌঁছে যাবে তোমার ন্যুড। ঘাবড়ে যাওয়া মেয়েটা তুমুল মানসিক চাপে খেই হারিয়ে ফেলে। এ পরিস্থিতিতে কার কাছে যাবে, কী করবে বুঝতে পারে না, কেউ  কেউ আত্মঘাতী হবার চিন্তা করে। করেও ফেলে অনেকে।

সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে এমন ঘটনা অহরহ।

জেনে কিংবা না জেনে অনেকেই জড়িয়ে পরছেন এমন ভয়ংকর ফাঁদে। সেক্সটিং অনেকেই করছেন, তো জেনে নেই সেক্সটিং কি?

সেক্স এবং চ্যাটিং এই দুই শব্দের মিলিত এবং সংক্ষিপ্ত রুপ হচ্ছে সেক্সটিং। অর্থাৎ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সেক্স নিয়ে কোনও কিছু একে অপরের মধ্যে দেওয়া বা নেওয়া হলেই তাকে সেক্সটিং বলা যায়। সেক্স নিয়ে কথা বলা বা নিজেদের অর্ধনগ্ন ছবি বা নগ্ন ছবি শেয়ারকেও সেক্সটিংয়ের আওতায় ফেলা যেতে পারে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয় থেকে প্রেম, প্রণয় সবই হচ্ছে আজকাল। কিন্তু এর উল্টো দিকও রয়েছে। কারও কারও জীবনে চরম বিপদ ডেকে এনেছে। জীবনের সবচেয়ে বড় সর্বনাশের কারণ হয়েছে। সুতরাং সাবধানতার বিকল্প নেই। কাউকে ভালো লাগা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। সেই ভালোলাগা আস্তে-ধীরে বেড়ে ভালোবাসায় রুপ নেয়াটাও অস্বাভাবিক না। আর ভালোবাসা থাকলে সেখানে বিশ্বাস থাকে।

এখন এই বিশ্বাসটা কাকে করছেন সেই ব্যক্তিকে চিনতে হবে। বুঝতে হবে। হ্যাঁ এটাও ঠিক, মানুষকে সঠিক কখনোই চেনা যায় না। আজ যে প্রেমিক, কাল সে প্রতারক! আজ যে জীবনের সবচেয়ে আপন, কাল সে জানের দুশমন। তবে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা সম্ভব। যেমন যে আপনাকে সত্যিকারের ভালোবাসে, আপনাকে নিয়েই জীবনের বাকি পথটা চলতে চায়, তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ না ন্যুড। সুতরাং ন্যুড চেয়ে বাড়াবাড়ি বা ছ্যাচরামি সে করবে না কখনোই।

আচ্ছা একজনের ন্যুড নিয়ে কী করে? কেন চায়? যেখানে আজকাল নেটে সার্চ দিলেই অসংখ্য ছবি চলে আসছে হাতের মুঠোয়, তবুও কেন আপনার কাছেই চাইছে? এর সম্ভাব্য উত্তরগুলোর মধ্যে কিছু হচ্ছে, প্রথমত, মাস্টারবেশন। দ্বিতীয়ত, মেয়েটাকে কব্জা করার আদিম হাতিয়ার। তৃতীয়ত, বন্ধুদের সামনে এইসব ছবি দেখিয়ে ভাব নেয়া। সরি টু সে, এর মধ্যে ভালোবাসার ছিটেফোঁটাও নেই। যদিও তারা ইনিয়ে-বিনিয়ে ভালোবাসাটাকেই হাইলাইট করে।

ভালোবাসায় শরীর আসে, কিন্তু শুধু শরীর দিয়ে ভালোবাসা হয় না। সেখানে আরও অনেকগুলো ফ্যাক্টর কাজ করে। আজকে ন্যুড না দিলে সম্পর্ক থাকবে না বলছে, তাই সম্পর্ক ধরে রাখার জন্য অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিজের গোপনাঙ্গের ছবি দিচ্ছেন, জেনে রাখেন, আপনার এই সম্পর্ক এমনিতেই থাকবে না। ‘বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ’ টাইপ কথাবার্তা থেকে বেরিয়ে আসুন। ‘বিয়ে করবে এই আশায় শারীরিকভাবে মিশেছি’ এইগুলো খুবই হাস্যকর কথা। বিষয়গুলো স্মার্টলি মোকাবিলা করতে শিখুন। যদি ন্যুড দেন এর ক্ষতিকর দিক কী কী আছে ভেবেই দেন। ধরে নেন এখনকার এই ভালোবাসার মানুষটি আজীবন ভালোবাসার হয়ে না-ও থাকতে পারে, তখন পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দিবেন, বুঝেই দেন।

মানুষের ভুল হয়। আপনি মানুষ, সুতরাং ভুল হতেই পারে। আবেগের বশে ভালোবাসা নামক বায়বীয় বিশ্বাসে ভর করে যদি এমন কিছু করেই ফেলেন, তবে কান্নাকাটি ভয়ভীতি বাদ দিয়ে সরাসরি আইনের আশ্রয় নেন। ন্যুড দেবার সময় যেমন কাউকে জিজ্ঞেস করেন নাই, তেমনি দিয়ে বিপদে পড়লে তার জন্য ভুক্তভোগী অন্য কেউ নয়, আপনি নিজেই, এটা মনে রাখেন। কারণ যাকে দিয়েছেন, যে প্রতারণা করেছে, সে কোনো স্বাভাবিক মানুষের গোত্রের মধ্যেই পড়ে না। এর জন্য নিজেকে প্রস্তুতও রাখতে হবে। যেমন করেছেন মিথিলা বা প্রভা। তারা কিন্তু ভেঙে পড়েননি। বরং সটান দাঁড়িয়ে মুখের ওপর জবাব দিয়ে দিয়েছেন, ফলে নিন্দুক বা সমালোচকেরাও হালে পানি পায়নি। কাজেই প্রতারকদের ভয় পেয়ে তাকে আর সুযোগ দেয়া নয়, বরং প্রতিহত করতে পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটে যোগাযোগ করুন। আইন আছে, তার আশ্রয় নিন। যতদিন আপনি কাঁদবেন, ততদিন ওই প্রতারক পুরুষেরা হাসবে, এটা করতে দেবেন না। ভুল থেকে আরও বিপদ নয়, সঠিক পথ চিনে নিতে শিখুন।

এদেশের মোট জনসংখ্যার বিশাল একটা শ্রেণি অভদ্র এবং যৌনকাতর। একদম অপরিচিত মেয়েদের ইনবক্সে নিজের যৌনাঙ্গের ছবি দিতেও এরা লজ্জা পায় না। এইসব আবর্জনা পরিস্কার একদিনে তো হবে না। নিশ্চয়ই ধীরে ধীরে সবাই একদিন সভ্য হবে, ততদিন নিজে সচেতন থাকুন, অন্যদের সচেতন রাখুন। আর জেনে রাখুন, সুশিক্ষিত, ভদ্র, রুচিবান ছেলে কারও কাছে ন্যুড চেয়ে নিজেকে ছোট করে না।

শেয়ার করুন: