‘আগে পার করালে হয়তো বেঁচে যেত মেয়েটা’

felaniউইমেন চ্যাপ্টার: বিএসএফের গুলিতে নিহত কিশোরী ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম সোমবার সাক্ষ্য দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলেন, ‘আজ আমার খুব কষ্ট হচ্ছে এই ভেবে যে কেন আমি আগে পার হতে গেলাম সীমান্ত? ফেলানীকে আগে পার করালে হয়তো বেঁচে যেত মেয়েটা।’

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কোচবিহারে বিশেষ আদালতে এই প্রথম সাক্ষ্য দিলেন ওর বাবা। কোচবিহার শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে সোনারীতে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ১৮১ ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তরে বিশেষ আদালতে শুরু হয়েছে ফেলানী হত্যার বিচার কার্যক্রম।

প্রথম আলোর কলকাতা প্রতিনিধি জানান, কোচবিহারের সার্কিট হাউস থেকে ফেলানির বাবা নুরুল হক এবং মামা আবদুল হানিফকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে বিচারালয়ে নেওয়া হয়। সাক্ষ্য দেওয়ার একপর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন ফেলানীর বাবা। এ সময়ে তাঁকে পাশের ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়।

তিনি আরও জানান, বেলা সোয়া ১১টার দিকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। কোনো সাংবাদিককে সেখানে ঢুকতে দেওয়া হয়নি । কলকাতা, ঢাকা এবং কোচবিহারের কমপক্ষে ২০ জন সাংবাদিক ছয় থেকে আট ঘণ্টা অপেক্ষা করেও বিচারকাজের কোনো তথ্য পাননি। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ফেলানীর বাবা ও মামাসহ আইজীবীকে কড়া নিরাপত্তায় নিয়ে যাওয়া হয় সার্কিট হাউজে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করছেন তাঁরা।

একটি বিশেষ সূত্র জানায়, বেলা সোয়া ১১টার দিকে  আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। এ সময় আদালতে ছিলেন ফেলানীকে ‘গুলিবর্ষণকারী’  বিএসএফের জওয়ান অমিয় বিশ্বাস।  বিচারক ফেলানীর বাবাকে প্রথম জিজ্ঞাসা করেন, ‘কেমন আছেন।’ ফেলানীর বাবা উত্তর দেন, ‘ভালো আছি।’  এরপর বিচারক বলেন, ‘আমরা ফেলানীর হত্যার বিচার করব। আপনি নির্দ্বিধায় বলুন, সেদিনের ঘটনাটি।’ এরপরে  ফেলানীর বাবা সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দেন।

একটি সূত্র থেকে বলা হয়েছে, ফেলানীর মামার সাক্ষ্য মঙ্গলবার নেওয়া হবে। বিচারকাজ পরিচালনার জন্য পাঁচ সদস্যের বিচারক দল নিয়োগ করা হয়েছে।  এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন গুয়াহাটি বিএসএফের ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি (কমিউনিকেশন) সি পি ত্রিবেদী।  প্রথম দিনে বিএসএফের জওয়ান অমিয় ঘোষকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। অমিয় ঘোষ তাঁর হাতে থাকা রাইফেল দিয়ে গুলি করে হত্যা করেন ফেলানীকে ।

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ফেলানী বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম সীমান্তে  বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়। কাঁটাতারের ওপর ঝুলে থাকা ফেলানীর মৃতদেহ নিয়ে সারা পৃথিবীতে হইচই পড়ে যায়। মানবাধিকার সংগঠনগুলো সীমান্তে এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানায়।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.