ভিটামিন-ডি ডেফিসিয়েন্সি এবং করোনার উল্লাস

তানিয়া পলি:

করোনার সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হলো এ ভাইরাস আমাদের শরীরে প্রবেশ করে শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা তৈরি করতে উঠে পড়ে লেগে যায়। এসময় যার ইমিউনিটি যতো স্ট্রং সে ততো ফাইট করতে পারে এর বিরুদ্ধে। তুলনামূলক দুর্বল ইমিউনিটির লোক ক্রমান্বয়ে আশংকাজনক অবস্থায় পৌঁছাতে থাকে। কারও কারও শেষ পরিণতি মৃত্যু। এটা আমরা ইতোমধ্যে সবাই বুঝতে পারছি।

আমি ডাক্তার নই, তবে ব্যক্তিগত সমস্যায় পড়ে কিছুটা স্টাডি করতে বাধ্য হয়েছি। দুই বছর আগে প্রেগনেন্সি পিরিয়ড থেকে শুরু করে আজ অব্দি সিভিয়ারলি ভিটামিন ডি ডেফিসিয়েন্সির শিকার আমি। রেগুলার মেডিসিন এর পাশাপাশি মাঝেমাঝে ইঞ্জেকশন ও নিতে হয়। আমাদের অধিকাংশ মানুষের শরীরে এই ভিটামিন ডি প্রয়োজনের তুলনায় কম বা খুব কম থাকে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে সমস্যা প্রকট হতে থাকে। আমাদের খাদ্যাভ্যাস আর লাইফ স্টাইল এর জন্য দায়ী।

আমরা সবাই জানি ভিটামিন ডি’ র অন্যতম সোর্স হলো সূর্যের আলো (সকালের রোদ উত্তম)। আমরা বেশিরভাগ মানুষই রোদের এই উপকারিতা থেকে কোন না কোনভাবে বঞ্চিত। আর খাদ্যঘাটতি তো আছেই। করোনার এই দুঃসময়ে ডাক্তাররা দুটো ভিটামিনের উপর বেশি জোর দিচ্ছেন। একটা হলো ভিটামিন-সি, অন্যটা আলোচ্য ভিটামিন-ডি। এ দুটোই আমাদের ইমিউনিটিকে স্ট্রং রাখতে সাহায্য করে। এর মধ্যে ভিটামিন-ডি স্বল্পতা আমাদের শরীরের নানাবিধ সমস্যার অন্যতম এক কারণ।

শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা, ভুলে যাওয়া রোগ, অবসাদ, খিটখিটে মেজাজ, হাড় ক্ষয় ও ব্যথা, মেরুদণ্ডে ব্যথা, মাংসপেশির সমস্যা, হাত-পা কামড়ানো (অনেকে চাবানো বলে), মোটা হয়ে যাওয়া, প্রচণ্ড দুর্বলতাসহ আরও নানাবিধ সমস্যার অন্যতম কারণ ভিটামিন-ডি স্বল্পতা।

করোনা সংক্রমণের মূল আতংক যেহেতু শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা, তাই এ সময় কোনভাবেই ভিটামিন-ডি ঘাটতিকে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। যদি কারো শরীরে করোনা প্রবেশ করতেই পারে, আর যদি ডি স্বল্পতার রোগী পায় তবেই শুরু হয় করোনার উল্লাস। নানাবিধ উপসর্গ দিয়ে শুরু করে আস্তে আস্তে হালকা থেকে মাঝারি কিংবা তীব্র শ্বাসকষ্টের দিকে ধাবিত হয়। এরপর ইমিউনিটির জোরে যে যতক্ষণ পারে টিকে থাকতে পারে।

দেশের বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করে আমাদের মানসিকভাবেই প্রস্তুত থাকতে হবে যে, জ্বর-সর্দির মতই করোনা বছরে দু-চার বার আমাদের এটাক করতে পারে। আর তাই একে মোকাবেলা করার জন্য আমাদের শরীর ও মনকে প্রস্তুত রাখতে হবে। ভিটামিন সি জাতীয় জিনিস দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় রাখার পাশাপাশি অবশ্যই ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবারও রাখতে হবে।

এছাড়া সুযোগ পেলে অবশ্যই সকালের রোদে কিছুক্ষণ থাকার অভ্যাস আমাদের দৈনন্দিন ভিটামিন ডি চাহিদার অনেকাংশ পূরণ করবে।
ভিটামিন-ডি স্বল্পতা পূরণে আমরা যে সব জিনিস দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় রাখার চেষ্টা করতে পারিঃ

১. দুধ-দুধের তৈরি খাবার
২. তৈলাক্ত যেকোনো মাছ, সামুদ্রিক মাছ (টুনা উত্তম)
৩. ডিম
৪. গরুর কলিজা
৫. চিজ
৬. কমলার রস

পাশাপাশি সাপ্লিমেন্ট হিসেবে কড লিভার ওয়েল অন্যতম। এছাড়া ডাক্তারের সাজেশন অনুযায়ী বিভিন্ন সাপ্লিমেন্ট তো রয়েছেই।

এই ভিটামিন-ডি ডেফিসিয়েন্সির জন্য করোনা আক্রান্ত হয়ে বাসার অন্যদের চেয়ে আমি তুলনামূলক বেশি হাড়ের ব্যথাসহ প্রচণ্ড চাপ ধরা বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্টে ভুগেছি। তবে সমস্যা একেবারে চূড়ান্তে পৌঁছায়নি। তিন সপ্তাহ পরে টেস্ট রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পরও সেই কষ্টটা কমবেশি রয়েই গেছে। মনে হয় কতদিন স্বাভাবিকভাবে দম নিতে পারিনি, বুকের উপরে চেপে বসে আছে কিছু একটা।

এখন বড্ড দুঃসময় আমাদের সবার। তাই খাদ্য তালিকায় অবশ্যই প্রয়োজনীয় পরিবর্তন জরুরি হয়ে পড়েছে। আগের চেয়ে খরচের খাতটাও বুঝি বেড়ে গেলো তাই। যে যার সাধ্যানুযায়ীই আমরা সবাই ভালো থাকার চেষ্টা করবো, সচেতন ও সাবধান থাকবো। মোদ্দা কথা, করোনা যুদ্ধ মোকাবেলার জন্য নিজের মন ও শরীরকে প্রস্তুত রাখতে হবে আমাদের।

লেখক: ব্যাংকার

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.