রোকসানা বিন্তী:
কিছু কিছু কাজ দূর থেকে অনেক সহজ মনে হয় কিন্তু আসলে ততটা সহজ না, উদাহরণ হিসেবে বলা যায় বাচ্চা পালা!শান্ত শিষ্ট সুইট একটা বাচ্চাকে দেখলে হয়তো অনেকের মনে হয়, “আরে ধুর! এই বাচ্চা পালা কোন বিষয় নাকি! আমি একলাই পাইলা ফেলতে পারবো!”
কিন্তু দেখা যায় আপাতদৃষ্টিতে শান্ত ভদ্র বাচ্চাই ঘুমাইতে গেলে তিনঘণ্টা লাগায়, খাইতে পাঁচ ঘন্টা লাগায়!
বাচ্চার খাওয়া আর ঘুমই তো শেষ না ,খাওয়া রেডি করতে হবে, ফিডার ধুতে হবে, বাচ্চাকে গোসল করাতে হবে, বাচ্চার গরম লাগছে কিনা বা ঠাণ্ডা লাগছে কিনা, আবহাওয়ার সাথে উপযুক্ত কাপড় আছে কিনা, বাচ্চার টয়লেট ঠিকমতো হচ্ছে কিনা, খাবারে পুষ্টি আর ভেরিয়েশন দুইটাই মেইনটেইন হচ্ছে কিনা, এরকম আরও হাজারটা টেনশন থাকে মায়ের মাথায়!
অসুখ বিসুখের কথা না হয় বাদই দিলাম!
হাউজওয়াইফ মা হোক আর ওয়ার্কিং লেডি মা হোক বা স্টুডেন্ট মা হোক, সবাইকেই কমবেশি এই পেইনগুলো নিতে হয়! সেই সাথে আছে ঘর সংসার, রান্নাবান্না! ওয়ার্কিং লেডি মায়েদের জন্য এক্সট্রা অফিসের কাজ! স্টুডেন্ট মায়েদের পড়ালেখার প্রেসার!
তো একবার সেই মায়ের কথা ভাবুন তো!
চিন্তা করুন তার কী ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা!
বাচ্চা সংসার সবকিছু মিলিয়ে যখন মায়ের পাগল পাগল দশা তখন তার উপর চাপিয়ে দেয়া হয় আরেকটি বোঝা যার নাম সামাজিকতা!
সারাদিন হয়তো ফোন একবার হাতে নেয়ার সুযোগ হয়নি কিন্তু সে কেন একে ওকে ফোন দিয়ে খোঁজ খবর নেয়নি, এটা তার দোষ!
বাচ্চার ডায়পার কিনতে গিয়ে হিমশিম খাওয়া মেয়েটা কেন অমুককে ঈদে গিফট দেয়নি!
পুরো সপ্তাহে নিজের জন্য যেই মা একটা ঘন্টাও সময় পায়নি সে কেন তমুককে দাওয়াত দিল না!
দাওয়াত দেয়ার পরও সে কেন এটেন্ড করলো না!
কেন হাসপাতালে রোগী দেখতে গেল না!
ওজন বেড়ে গিয়েছে কেন শুকায় না!
কেন! কেন! কেন!
এমন আরও শত সহস্র কেন!
খাওয়ার সময় নেই, ঘুমানোর ঠিক নেই, চারদিকে যেন কেবল দায়িত্ব আর কর্তব্য!
যখন মায়ের সাথে সবার কথা বলা উচিত ভালোবাসার সুরে তার বদলে পুরো পৃথিবী যেন একসাথে তার সাথে অভিমান করা শুরু করে দেয়!
অভিযোগের তীরে বিদ্ধ করে প্রতিনিয়ত যা কোনভাবেই কাম্য নয়!
জীবনটা তো অনেক বড়!
হুট করে পাহাড়সমান দায়িত্ব মাথায় এসে পরা মা’টাকে সকল সামাজিকতা থেকে কয়েক বছরের জন্য মাফ করে দিয়ে দেখুন কী হয়!
খোঁজ খবর দরকার হলে নাহয় আপনিই ফোন দিন!
তার সুবিধামতো তাকে চলতে দিন!
খারাপ সময় সারাজীবন থাকে না!
বাচ্চা একদিন ঠিকই বড় হবে, ব্যস্ততাও কমে যাবে কিন্তু আজকে সামাজিকতা রক্ষা করতে না পারার জন্য আপনি বাচ্চার মাকে যেই কথাগুলো বলেছেন সেগুলো তার মনে ঠিকই রয়ে যাবে!
আপনাকে দেখলেই তার মনে পড়ে যাবে সেই কথাগুলো!
বর্তমানের একচিমটি ভালোবাসার অভাব আপনি ভবিষ্যতে একড্রাম দিয়েও পূরণ করতে পারবেন না!
কখনোই না…।
উপ পরিচালক
বাংলাদেশ ব্যাংক