
উইমেন চ্যাপ্টার ডেস্ক: প্রিন্সেস ডায়ানা ও তার প্রেমিক বন্ধু দোদি আল ফায়েদের মৃত্যুকে ঘিরে আবারও কানাঘুষা শুরু হয়েছে। ১৯৯৭ সালে প্যারিসে গাড়ি দুর্ঘটনায় তাদের মৃত্যুর পর যে ষড়যন্ত্রের সন্দেহ করেছিলেন অনেকে, এই হত্যার সাথে ব্রিটিশ বিশেষ বাহিনীর এক সদস্যের জড়িত থাকার খবরে তা আবার নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। নতুন এই তথ্যের প্রেক্ষিতে গোয়েন্দা সংস্থা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড নতুনভাবে তদন্তে নেমেছে।
৭০ লাখ ডলার খরচ করে ফ্রান্স এবং ব্রিটিশ পুলিশের তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছিল, প্রিন্সেস ডায়ানা এবং দোদি ও তাদের গাড়ি চালকের মৃত্যু ছিল নিছক দুর্ঘটনা। কিন্তু ডেইলি মিরর দাবি করেছে, তাদেরকে হত্যা করা হয়েছিল এবং পুরো ঘটনা তখন ধামাচাপা দেওয়া হয়েছিল।
এদিকে দ্য টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই অভিযোগের প্রমাণাদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার জন্য গোয়ান্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্ত প্রক্রিয়াটির অনুমোদন দিয়েছেন স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সবচাইতে অভিজ্ঞ কর্মকর্তা স্যার বার্নার্ড হুগান-হু।
দ্য মিরর জানায়, অবৈধ অস্ত্র রাখার অভিযোগে দোষীসাব্যস্ত সার্জেন্ট ড্যানি নাইটিঙ্গেলের দ্বিতীয় দফায় সামরিক আদালতে মুখোমুখি করায় ডায়ানা হত্যার বিষয়টি আবারও সামনে চলে আসে। বিচারে সাক্ষ্যপ্রমাণ হিসেবে একজন সাবেক সৈন্যের একটি চিঠি উপস্থাপন করা হয়েছে, যেখানে তিনি বলেছেন, বিশেষ বিমান বাহিনী (এসএএস) প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যুর জন্য দায়ী ছিল।
গত শনিবার স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ব্রিটিশ পুলিশ এখন এই হত্যাসম্পর্কিত পাওয়া নতুন তথ্য যাচাই করে দেখছে, সেইসাথে এর সাযুজ্য ও বিশ্বাসযোগ্যতাও পরীক্ষা করে দেখছে। তবে এটা কোনভাবেই পুন:তদন্ত নয় বলে ওই বিবৃতিতে জোরারোপ করা হয়
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ক্রাইম ও অপারেশান’ বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তারা প্রিন্সেস ডায়ানা সহ তাঁর প্রেমিক দোদি ফায়েদ ও ড্রাইভার হেনরি পলের হত্যার বিষয়ে পুরোপুরি তদন্ত করবে। আগের কোন প্রকার সন্দেহ ছাড়া নতুন এই তদন্ত স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে, এমনকি সংস্থাটির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে, তাই তারা খুব ধীরে এগোতে চাচ্ছেন।
১৬ বছর আগে প্যারিসের একটি সুড়ঙ্গপথে দুর্ঘটনায় প্রিন্সেস ডায়ানা মারা যান। ২০০৮ সালের ৭ই এপ্রিল আদালত এই হত্যাকাণ্ডের কারণ হিসেবে চালকের অবহেলা দায়ী করে রায় দেন। ব্রিটিশ রাজ প্রসাদের একজন মুখপাত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, এই ব্যাপারে ডিউক অফ কেমব্রিজ প্রিন্স উইলিয়াম, প্রিন্স হ্যারি বা ক্লারেন্সে হাউস থেকে কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
মি. দোদির বাবা মোহাম্মেদ আল ফায়েদের একজন মুখপাত্র এবিসি নিউজকে এক বিবৃতিতে বলেছেন, এখনই তিনি কোন মন্তব্য করতে চাইছে না, তবে তার পূর্ণ আস্থা আছে ব্রিটিশ মেট্রোপলিটন পুলিশের তদন্তের ওপর। তিনি ফলাফল দেখার ব্যাপারে আগ্রহী।
এর আগে মোহাম্মেদ আল ফায়েদ দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়েছিলেন যে, ডায়ানা এবং তার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে এবং সেই হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রতিটি আইনী লড়াইয়েই তিনি হেরে যান।
তদন্তের উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হচ্ছে: ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট প্যারিসে যে গাড়িটিতে করে ডায়ানা এবং তার বন্ধু দোদি যাচ্ছিলেন, তার গতি ছিল তখন ঘন্টায় ৮৫ মাইলেরও বেশি। চালকসহ তিনজনই মারা যান, পরে প্রমাণ হয় যে, চালক সেসময় মাতাল ছিলেন।
ডায়ানার মৃত্যুর সবচেয়ে বড় তদন্ত হয়েছে ২০০৭-২০০৮ সালে। এতে বলা হয়েছিল, বেআইনী হত্যা এবং চালকের চরম অবহেলা। সেইসাথে পাপারাজ্জিদের দৌরাত্ম্যের কথাও বলা হয়েছিল সেই তদন্তে।
ষড়যন্ত্রের কথা যখন উঠতে শুরু করে তখন ডায়ানার সাবেক ব্যক্তিগত সহকারি প্যাট্রিক জেফসন বলেন, নতুন করে পাওয়া তথ্যগুলোর তদন্ত হওয়া উচিত। তিনি বলেন, ‘ভাবুন তো যে, একজন কেউ এসে কেনেডি হত্যার ব্যাপারে বলছেন, তার কাছে প্রমাণ আছে, সাক্ষী আছে, তখন কি আমরা বলবো, ভুলে যান এগুলো? মোটেও না, আমরা কি করবো? আমরা নতুন করে তা তদন্ত করে দেখবো’।
এ ব্যাপারে বাকিংহাম প্যালেস মুখ খুলছে না। আর স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডও বিস্তারিত কিছুই আর জানায়নি।