অন্যের যৌনজীবন যখন আপনার মাথাব্যথার কারণ

শাহরিয়া দিনা:

মানুষ কৌতুহলী প্রাণী। যেকোন বিষয় তার কৌতুহলের অন্ত নাই। কৌতুহল থেকেই আবিস্কারের সূত্রপাত। তো, আবিষ্কার যারা করে ইতিহাস তাদের স্মরণীয় করে রাখে। স্বভাবতই ইতিহাসে স্মরণীয় হবার থেকে ইতিহাসের পাঠক বেশি, তার চেয়ে বেশিসংখ্যক বাঙালি অন্যের ব্যক্তিগত ইতিহাস জানতে আগ্রহী। এই ব্যক্তিগত ব্যাপারের মধ্যে টপমোস্ট প্রায়োরিটি হচ্ছে অন্যের প্রেম-বিয়ে তথা কারো সেক্সুয়াল লাইফ।

কেউ প্রেম করছে শুনলে মন উসখুস করে জানতে, আচ্ছা তারা কী বলে? তারা যে একসাথে হলে আর্কিমিডিসের নতুন সূত্র কিংবা ম্যালথাসের জনসংখ্যা তত্ত্ব অথবা পুঁজিবাদি ব্যবস্থা সমাজতন্ত্র কায়েমের কত বড় প্রতিবন্ধকতা এইসব আলোচনা করে না তাতো আমরা জানি। তাহলে করেটা কী?

একটা ছেলে/মেয়ে সিঙ্গেল। পড়াশোনা শেষ, জব করছে, কিন্তু এখনো বিয়ে করছে না। কেন করছে না? তাহলে সে কীভাবে থাকে? তার কি সেক্স কম? পতিতালয়ে যায় নাকি? একবারও ভাবি না, এই ছেলেটার বা মেয়েটার হয়তো পরিবারের প্রতি দায়িত্ব আছে। নিজেকে বিয়ের জন্য আর্থিক এবং মানসিকভাবে তৈরি করার ব্যাপার আছে।

সবচেয়ে মজার কৌতুহলের জায়গা ডিভোর্সি মেয়েদের একা থাকা। এরচেয়ে রসালো আর কোন বস্তু হয় না। নারী হোক বা পুরুষ ইনিয়ে-বিনিয়ে জিজ্ঞেস করে, আচ্ছা তোমার কষ্ট হয় না? নাহ! তারা আপনার ভাত-কাপড়ের কষ্টের কথা জানতে চায় না, আপনার বাসাভাড়া দিতে না পারার কষ্টের কথাও না, আপনার শরীর খারাপের কষ্টও না, শুধুমাত্র সেক্স ছাড়া থাকতে কীরকম কষ্ট, তা জানতে চান।

বিশালসংখ্যক বাঙালির মানুষের মাথায় মগজের জায়গায় একদলা সেক্স হরমোন দেয়া আছে যার কারণে এদের চিন্তাভাবনা ওই
একটা বিষয়কেন্দ্রিক। এইম ইন লাইফ হচ্ছে একটা বিয়ে করা। ১৩/১৪ বছরেই একেকজন প্রেম-কুমার/প্রেম-কুমারী। ১৫ বছরের মেয়ে প্রেমের টানে ঘর ছেড়েছে, অতঃপর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই শ্বশুরবাড়িতে স্বামীর নির্যাতনের খুন হয়েছে।

চাকরি পেয়েছে, বিয়ে না করলে লোকে কী বলবে ভেবে ঝটপট বিয়ে করেছে। ১০/১২ বছর পর এসে মনে হচ্ছে, জীবনের এটাই চরম ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। কী দরকার ছিল অতো তাড়াহুড়ো করবার! না পারে ছাড়তে, না পারে রাখতে, অতঃপর ইতি-উতি তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

আমাদের সমাজে সেক্স একটা গভীরতম গোপন চিন্তার বিষয়। কৈশোরের শুরু থেকেই ফ্যান্টাসি, মগজের অনেকটা দখলকারী এবং সহজে অন্যের সাথে আলোচনার অযোগ্য। অথচ এখন আবার হাতের মুঠোয় দুনিয়া। স্বাভাবিকভাবে পর্নোগ্রাফিরও দারুণ চাহিদা। এতে পাচ্ছে ভুলভাল শিক্ষা। ব্রেইন আসক্ত হচ্ছে এর নেশায়, সর্বোপরি এই ফ্যান্টাসিকে বাস্তবে রূপ দেয়ার চেষ্টা। ধর্ষণ, বিয়ের প্রলোভনে অনৈতিক শারীরিক মেলামেশা, প্রেমিকের সাথে দেখা করতে গিয়ে ধর্ষণের ঘটনা এইসবের বহিঃপ্রকাশ।

যৌনতা মানুষের সহজাত চাহিদা। এখন এই চাহিদা কে, কীভাবে পূরণ করবে সেটা তার ইচ্ছা। এই দুনিয়ার সবাই একরকম না। কেউ স্ট্রেইট, কেউ গে, কেউ লেসবিয়ান, কেউ বা বাইসেক্সুয়াল। যার যেমন রুচি। সে যতক্ষণ না আপনার কাছে তার এই কেন্দ্রিক কথাবার্তা শেয়ার করছে কিংবা সাহায্য চাইছে, অথবা বিরক্তির কারণ হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার কোন অধিকার নাই তাকে এইসব নিয়ে হেনস্থা করার বা প্রশ্ন তোলার।

অন্যে কীভাবে থাকছে তার চেয়ে নিজের অর্গাজমে মনোযোগী হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। আরেকজনের এইসব খবর নেয়া এবং এই নিয়ে কথা বলাটা প্রমাণ করে আপনি নিজেই স্যাটিসফাইড না। নিজের জীবনে সুখের অভাব বলেই অন্যের ব্যক্তিগত জীবনে নাক গলানোর সময়টা পাচ্ছেন জনাব!

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.