বেরিয়ে আসুন ভুল সম্পর্ক থেকে

ওয়াহিদা সুলতানা লাকি:

যে সম্পর্কটি টেনে নিতে নিতে আজ আপনি ক্লান্ত, নিঃসন্দেহে সেটি একটি ভুল সম্পর্ক। প্রায়শই আমরা পারি না এই সব ভুল সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে।আজীবন গ্লানি ভোগ করবার চাইতে বার বার স্যাক্রিফাইস করে করে নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন দেবার চাইতে সুযোগ থাকলে সময় থাকতেই মুক্তি দিন এই সব ভুল সম্পর্কের ধুম্রজাল।

অনেক সময়ই আমরা মুখ বইয়ের বদৌলতে বন্ধু খুঁজে পাবার সহজলভ্যতায় জড়িয়ে পড়ি এইসব বন্ধু থেকে ভালোবাসায় পতিত হওয়া অপরিণত সম্পর্কে।ভালোলাগা থেকেই জন্ম ভালোবাসার। হতে পারে সিনেমার গল্পের মতোই অদেখা কোন মুখ কিংবা সামনে থেকে স্পর্শহীন কোন অবয়ব। আমরা মুগ্ধ হই।কখনো তার রূপে অথবা গুণে। ভালোবাসা সত্যিই বলে কয়ে আসে না। তাই নিজের অজান্তেই হৃদয়ের তানপুরায় বাজে চেনা কোন সুর, কোন ছন্দ।সবটাই তখন কেবল নিজের মনে হয়। নিজের আচরণ, কথায়, ভাবনায়, কাজে কিংবা আদর্শে পেয়ে যাই অবিচল মিল। মনে হয় এই তো সেই জন, যাকে আমার শূন্য হৃদয় এতোটা কাল ধরে খুঁজে চলেছে।

বাস্তবে গঠন হওয়া সম্পর্কগুলোতে চলতে ফিরতেও আসে নানা বিপত্তি। আর অদেখা ভার্চ্যুয়াল সম্পর্কে সে বিপত্তির মাত্রা থাকে ড্যাঞ্জার জোনে লুকায়িত।যতক্ষণে আপনি নিজের মন, প্রাণ, হৃদয় খুলে তার হাতে দিয়ে দিয়েছেন, ততক্ষণে আঁচ করা যায় না কী সেই ডেঞ্জার জোন! হয়তো মনের অজান্তেই শেয়ার করে ফেলেছেন অসংখ্য ব্যক্তিগত কথা। এখানে আপনার কোন দোষ নেই। কেনো দোষ নেই জানেন? কারণ আপনি মন থেকে এই সম্পর্কে পা রেখেছিলেন। ভালোবাসলে একজন মানুষ ততোটাই আপন হয় যতোটা আপন নিজের মাকেও একান্ত ব্যক্তিগত অনুভূতির কথাটি খুলে বলা যায় না। তাই নির্দ্বিধায় আপনি তাকে আপনার সবটাই শেয়ার করে ফেলেছেন।

এখানেই রয়েছে আপনার সুনিপূণ দায়িত্ব। সত্যিই যদি তাকে ভালোবেসে থাকেন মনে মনে অভিমান জন্ম দিয়ে অভিমানের পাহাড়টিকে আর বড় না করে সরাসরিই তাকে প্রশ্ন করুন। সে হয়তো আপনার প্রশ্নকে এড়িয়ে যাবে নানা ছুঁতোয়। একদিন, দুদিন, তিন দিন। আপনি যদি বিচক্ষণ হোন নিশ্চয়ই তা টের পাবেন। তার প্রতি আপনার মায়া থাকবে এটি খুব স্বাভাবিক। তাই বলে মায়ার অজুহাত ধরে আপনি যদি ভবিষ্যৎ হীন উক্ত সম্পর্ককে টেনে নিয়ে চলতে থাকেন সে ভুলের বোঝা তো আপনাকেই বইতে হবে। দিন যাবে, আপনাদের তিক্ততার মাত্রাও বেড়ে যাবে। দুজন দুজনাকে সময় দেবার হার কমে আসবে ।নিজস্ব অনুভূতিগুলোও রোজ রোজ আর একে অন্যকে শেয়ার করা হবে না। বিরক্তি এসে যাবে নিজ নিজ জীবনের প্রতিও। কারণ এখানেই আপনার ভুল। এই সম্পর্কটিকেই আমরা ভুল সম্পর্ক বলি। দুজন দুজনকে ছেড়ে থাকতে পারছেন না, আবার নিজ নিজ পরিবারকে বলি দিয়ে দুজন এক হয়ে যেতেও রাজি নন তিক্ত শোনালেও সে সম্পর্কের সত্যিই কোন ভবিষ্যৎ নেই।

শুনতে কষ্ট লাগলেও এটিই সত্যি যে একদিন না একদিন এই ভুল সম্পর্কের বাঁধন তিক্ততায় কষাকষি হতে হতে আপনা হতেই ছিঁড়ে যাবে। এমন একদিন আসবে দুজন দু’প্রান্তে থেকে খোঁজ নিতেও ইচ্ছে করবে না কেমন আছে মানুষটা। তবে মনে পড়বে ঠিকই। ভাবলে আজ আপনার কলিজা ছিঁড়ে এলেও সেদিন বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলবেন দীর্ঘদিন একটি ভুল সম্পর্ককে টানতে গিয়ে আজ কতোটা ক্লান্ত আর সময়ের অপচয়ে কতোটা পরিশ্রান্ত আপনি।

সম্পর্কের অযত্নে এমন করেই একটি শুদ্ধ সম্পর্কও ভুল সম্পর্কের নামে নামকরণ ঘটায়। যে আছে সে যদি আপনার জন্য বিশ্বস্থ হয় তাকে আকঁড়ে ধরুন বুকের মাঝে সর্ব শক্তিতে। আর যদি বুঝতে পারেন সময়ের গতির চাকায় আবর্তিত হয়ে একদিন সে আপনাকে মাঝ পথে একা করে চলে যাবে, আপনার দায়িত্ব নিতে পরিবারের আঁচল ধরতে গিয়ে অক্ষম হবে তবে অযথা নিজের সময় নষ্ট করে তিক্ততা না বাড়িয়ে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে বেরিয়ে আসুন সেইসব ভুল সম্পর্ক থেকে।

বিশ্বাস করুন, প্রথমটায় আপনার খুব কষ্ট হবে। নিঃশ্বাস আটকে আসতে চাইবে। পৃথিবীটা অর্থহীন মনে হবে। কোন কাজেই মন বসবে না। কাঁদতে কাঁদতে একদিন চোখের জলও ফুরিয়ে আসবে, তবু আপনি চলতে গিয়ে মাঝ পথে হেরে যাবার বদলে শুরুতেই বিজয় ছিনিয়ে নিন একটি ভুল সম্পর্কের মুক্তি দিয়ে। ভালোবাসাকে আপনার কক্ষনোই যেন মনে না হয় লস্ট অফ ভ্যালুএবল এনার্জি।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.