আমি পারুল, মরবো না, আমৃত্যু লড়বো

সাজিদা ইসলাম পারুল:

আপনাদের যারা আতঙ্কিত হয়ে ফোন করেছেন, ফেসবুকে উৎকণ্ঠা জানিয়েছেন, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। আমি পারুল সেই শৈশব-কৈশোর থেকে লড়াই করে আসছি। আপনারা যারা দুর্বল, এক ধমকে ভয় পেয়ে যাওয়া পারুলকে চেনেন, তাদের বলতে চাই, আমি আসলে অন্তরে সবল মানুষ। আমি বন্ধু-স্বজনের বিপদে উৎকণ্ঠিত হই, ঝাঁপিয়ে পড়ি। কিন্তু নিজের বিপদে প্রথমে একটু ভড়কে যাই। তবে ঠিক সময়ে ঘুরে দাঁড়াতেও জানি। আর এবার তো আমাকে ঘুরে দাঁড়াতেই হবে। আপনাদের নিশ্চিত করতে চাই, মরবো না, যদিও আমার প্রাণসংশয় আছে, তবু আমৃত্যু লড়বো আমি।

শাহেদ ভাই, শাহেদ কায়েস, সেদিন লিখে জানালেন, আমার শ্রদ্ধেয় আলফা আপু, প্রিয় ডালিয়া একেকজন একাই একশো। তিনি আরো জানালেন, ‘একজন একজন করে আরো শত-সহ্স্র জন আছি আপনার সঙ্গে। আপনার ভয় নেই।’

শাহেদ ভাইকে ধন্যবাদ আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছেন আমার সঙ্গে শত-সহস্র জন আছেন। আমি নিজেও দেখছি তাদের। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা আমার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনলাইন মানববন্ধন করছে। আমার প্রিয় রুমানা যে এতো বুদ্ধি ধরে আমি তো জানতামই না? বহ্নি ও চন্দ্রা আমার ভাগ্নি দুটি কী রকম লড়াকু তা-ও তো জানতাম না। রায়হান, সুমি, মুস্তাফিজসহ শ্রদ্ধাভাজন ও স্নেহের আরও অনেকেই আমার খোঁজ রাখছেন। আমার সাথে কোনোদিন দেখা হয়নি মনসুর ভাইয়ের। তিনি নিরন্তর প্রতিবাদ করে যাচ্ছেন। এইসব মানুষের সবার কথা কিন্তু আমি জানি না। নিশ্চয়ই জেনে নেওয়ার চেষ্টা করবো। আপনাদের জন্য রইলো আমার গভীর ভালোবাসা।

যার পাশে এতো মানুষ, তার আবার কিসের ভয়? আমি পারুল লড়াই শুরু করেছি। আপনারা আমার সাহস হয়ে থাকবেন পাশে। বিশ্বাস করেন, মাত্র একমাসে রেজাউল করিম প্লাবন নামের লোকটা মৃত্যুর স্বাদ পাইয়ে দিয়েছে আমাকে, আমার অনাগত সন্তানকে হত্যা করেছে। যৌতুকের জন্য নির্যাতন করেছে। একের পর এক নারীর সাথে তার অনৈতিক সম্পর্ক আমার কাছে ধরা পড়েছে। সবশেষে তৃতীয় বিয়ের পিঁড়ি সাজিয়ে বসেছিল লোকটা। তার গ্রামে গিয়ে আমি নির্যাতিত হয়েছি। তার পরিবারের লোকজনকে দেখে বুঝেছি, ‘জন্ম হোক যথা তথা, কর্ম হোক ভালো’ কথাটা সবসময় সত্য হয় না এবং ‘গোবরে পদ্মফুল’ও খুব বেশি জন্মায় না।

অনেকেই আমার ফেসবুক ওয়ালে ২ মে পোস্ট করা আমার আর প্লাবনের ভিডিও কলে কথা বলার ছবি দেখে মন্তব্য করেছেন। খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু আপনারা জানেনই না, তার নির্যাতনের শিকার হয়েও হাসিমুখে তার মুখে ভাত তুলে দিয়েছি আমি। সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছি। সেই মানুষটা স্বজ্ঞানে ৩০ এপ্রিল ডিভোর্স দিয়েছে আমাকে এবং পরের দিনগুলোও স্বাভাবিকভাবে সম্পর্ক রেখেছে।

৩ মে রাতে তার আরও একটা অনৈতিক সম্পর্ক জেনে ফেলি আমি। এমনকি ওই মধ্য বয়সী মহিলা নিজ এলাকার হওয়ায় এ নিয়ে ৪ মে সকালে প্লাবনকে বলছিলাম, ‘ওই মহিলার সাথে কীভাবে জড়ালেন। মিথ্যা বলেছেন আমাকে।’ তখন প্লাবন আমাকে মেসেজ করে, ‘সংসার করতে চাইলে ধৈর্য ধরতে হবে। আর যদি মনে করো মানুষকে বিব্রত করা আর হুমকি দেয়া তোমার পেশা, তাহলে তোমার ভাগ্যের নির্মাতা তুমি নিজেই। এরপর তোমার মুভমেন্টের ওপর আমার করণীয় নির্ধারণ হবে।’

সেই একই প্লাবন গত পরশু অর্থাৎ ২১ মে রাত ১০টা ২০ মিনিটে মেসেজ দিয়েছে, ‘তোমাকে আর আমাকে নিয়ে কিছু মানুষ খেলছে। আমিও সেই ফাঁদে পা দিয়ে ভুল করছি, তুমিও ভুল করছো। আমাদের নতুন করে চিন্তা করা দরকার। একটু ভাবো। তুমি আমাকে জেলে দিতে পারো। সবাই এতে সহযোগিতা করবে। কেউ সংসারটা টেকানোর জন্য সহযোগিতা করছে না।’

অথচ তার আগের দিন বুধবার ‘যুগান্তর’, ‘ডিআরইউ’সহ আরও কয়েক জায়গায় বিশ্রী ভাষার চিঠিতে চরিত্রহরণ করেছে আমার। হায়! জীবনে এমন কী অপরাধ করেছি যে, দীর্ঘ বছর পর এই মানুষের হাতেই পড়তে হলো আমাকে? আমি আপনাদের নিশ্চিত করে বলতে পারি, এমন প্রতারক আর একটাও আপনারা দেখেননি।

অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, এই প্লাবন মামলা দায়েরের ১৩ দিন পরও নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি বারবার বলছি আমার প্রাণসংশয় আছে। সবাই যেন কুম্ভকর্ণের নিদ্রায় আছেন। যাই হোক, আমি পারুল আত্মহত্যা করবো না। তবে খুন হয়ে যাওয়ার আতঙ্কে আছি। হলে হবে, আমি মরে যাওয়ার আগপর্যন্ত লড়ে যাবো।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.