সন্তানের বয়ো:সন্ধি ও মায়েদের প্রস্তুতি

বাসন্তি সাহা:

মনে কর-না উঠল সাঁঝের তারা,

মনে কর-না সন্ধ্যে হল যেন

রাতের বেলা দুপুর যদি হয়,

দুপুর বেলা রাত হবে না কেন?

(প্রশ্ন-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

শ্রমণা পড়ছিল। কেউ পানিতে ডুবলে কী করতে হবে? আমি কাজ করছিলাম। হঠাৎ তার প্রশ্ন কেউ পানিতে ডুবলে বুকে চাপ দিতে হবে। বুকে চাপ দেবে কী করে? তাহলে তো ব্যাড টাচ হয়ে যাবে। প্রথমে বুঝতে পারিনি। দেখলাম। রোগী শ্বাস না নেয়া বা ডাক্তার না আাসা পর্যন্ত ফুঁ দেয়া ও বুকে চাপ প্রয়োগ চালিয়ে যেতে হবে।

ছেলে-মেয়ে বড় হচ্ছে। আমরা সচেতন মা। সন্তানের বয়ো:সন্ধি নিয়ে অনেক পড়াশোনা, আলোচনা করে ফেলেছি। পড়ে ফেলেছি, ‘আমার মা সব জানে। সানন্দার বিভিন্ন আর্টিকেল। একটা এমন প্রশ্ন এলে মায়েদের গ্রুপে রীতিমতো ওয়ার্কশপ হয়, কী বলবো। কিন্তু তাও যেনো এসব ছেলে-মেয়েদের প্রশ্নের কাছে ঠিক সহজ হতে পারি না। আমাদের গোঁজামিলের উত্তর তারা বুঝতে পেরে বলে তুমি ঠিক জানো না। গুগল করে জেনে নেবো!

দু’একবছর আগেও তা ‘এলেম আমি কোথা থেকে, ইচ্ছে হয়ে ছিলি মনের মাঝারে’ দিয়ে চালানো গেছে। এখন এই উত্তর শ্রমণাকে কনভিন্স করতে পারে না। গুগল করে জেনে নেবো! অথবা ছবি দেখে বলবে, ও তখন তো আমরা ছিলাম না! তোমরা বিয়ে করেছিলে কেন? এখন জানে সবারই বিয়ে হয়। কিন্তু তার চোখ বাবার মতো কী করে হলো? মায়ের নয় পেটে হয়েছে, তাই মায়ের মতো দেখতে। জুপিটারের ভেতরে কয়টা আর্থ ঢোকানো যাবে? বললাম, সাতটা? তুমি জানো না। এগারটা। এমন হাজারও প্রশ্ন। লকডাউনের সময়ে এই আতঙ্কও কম নয়। কারণ সবই সে গুগল করে জেনে নেবে।

আমাদের সময়ে মা-বাবা গুড টাচ, ব্যাড টাচ এইভাবে শেখাননি। একটু বড় হওয়ার পর কোথায়, কীভাবে যেতে হবে বা হবে না সেটা শিখিয়েছেন। আমরাও অবাধে সন্ধ্যে পর্ন্ত ঘুরে বেড়াতাম। কাকার কোলে, মামার কোলে বড় হয়েছি। কাকা আমাকে লিখতে পড়তে শিখিয়েছেন। দুপুরবেলা তার সাথেই হয়তো ‍ঘুমিয়ে পড়েছি কতদিন। মামা শিখিয়েছেন সাঁতার। অপেক্ষা করে থাকতাম কখন ওর সাথে পুকুরে নামবো। বাবা-মাকে এনিয়ে কিছু ভাবতে দেখিনি। বরং তারা নিশ্চিন্ত থাকতেন।

জানি বদলে গেছে কাল। সময় নাকি সবকিছু উন্নত করে, পরিণত করে। আমরা তাই নিজের ছেলে-মেয়েকে নিজের আপনজনের কাছে রাখতেও দশ বার ভাবি। ওরাও কেমন আড়ষ্ট হয়ে থাকে। শুনেছি বাচ্চাদেরও কেবল মাথায় হাত দিয়ে ছাড়া আদর করা যাবে না। চারপাশে অনেক দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই হয়তো আমরা এই চিন্তা করি। কিন্তু এর ফলে সন্তানকে একা করে দিচ্ছি না তো তার স্বাভাবিক বেড়ে ওঠা থেকে? তার আপনজনের কাছে থেকে?

বাসন্তি সাহা
উন্নয়ন কর্মী
[email protected]

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.