আফসানা কিশোয়ার:
প্রশ্নগুলো পরীক্ষায় এমন এসেছে যে ডেইজি একটার উত্তর ও ঠিকমতো লিখতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। ডেইজি সৎ, এখন পর্যন্ত। ইতিউঁতি না তাকিয়ে ক্লাসমেটদের বিরক্ত না করে উত্তরপত্র জমা দিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
পরীক্ষার হলে যে শিক্ষকের আজ ডিউটি তিনি মাত্র ৪০ মিনিটের মাথায় ৩ ঘণ্টার পরীক্ষার খাতা জমা দিতে এলে ডেইজিকে জিজ্ঞেস করেন,’কী রে মা, এতো তাড়াতাড়ি? ‘
-স্যার, দেড়টা প্রশ্নের উত্তর জানি, তাই লিখেছি।
-‘তুই সিটে গিয়ে বস, দেখবি মনে পড়বে’

ডেইজি সিটে এসে বসতেই দেখে স্যার বাইরে চলে গেছেন। পুরা হলে আর কোন গার্ড নেই। সামনের বান্ধবী ঘাড় ঘুরিয়ে নিজের খাতা দিয়ে দেয়। হাসি দিয়ে বলে, লিখতে থাক।
ডেইজি এভাবে সামনের, পেছনের, তারও পেছনের ল্যুজ শিট, আস্ত খাতা পেতে থাকে এবং একসময় সব প্রশ্নের উত্তর লিখে সবার সাথে একই সময় খাতা জমা দেয়। বিজ্ঞান প্রথম পত্রের পরীক্ষা ডেইজি দারুণভাবে শেষ করে হল থেকে বের হয়।
ডেইজির চোখে সান এলার্জি আছে, হল থেকে বের হয়ে বরাবরের মতো ফটোসান চশমাটা পরে মাথায় ক্যাপ দিয়ে ঘুগনি যেখানে বিক্রি হয় সেখানে গিয়ে বান্ধবীদের সাথে দাঁড়ায়।
পনেরো দিন পরে পরীক্ষার রেজাল্ট দিলে দেখা যায় ক্লাসের ৭ সেকশন মিলিয়ে ডেইজি বিজ্ঞান প্রথম পত্রে সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়েছে। বান্ধবীরা ডেইজিকে আদরের চড়চাপড় দিতে থাকে মৃদু গালিগালাজের সাথে।
ডেউজিদের দেশে খুব অস্থিরতা চলছে। একবিংশ শতাব্দীর ডেইজি সেভাবে আর বান্ধবীদের খাতা দেখে লেখার কালে নাই। ওর যদিও কোনকিছু নিয়ে তেমন টানাপোড়েন নাই, সবই ওর স্বাভাবিক লাগে, কিন্তু অনবরত লেখালেখির কারণে পোলাপান হত্যা ডেইজিকে অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। নিজেকে অত্যন্ত ধার্মিক প্রমাণ করার চাপের কারণে ডেইজিকে এলাকার মারকাজে একদিন যেতেই হয়। সেখানে শান্তির ধর্মের নানা গুণাগুণ শুনতে শুনতে ডেইজি এক পর্যায়ে বলে বসে, অনেককিছু দেখে নোট লিখলে সেটা সবার কাছে নতুন এবং টেকসই লাগে, সর্বোচ্চ মার্কসও জোটে। মারকাজে থাকা নারীরা ডেইজির উপর প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ার উপক্রম হলে ডেইজি বলে ফেলে, নাকের পাটা ফুলিয়ে তাওরাত, ইঞ্জিল, যাবুর এর সাথে তখনকার সমসাময়িক নির্যাস মিশিয়েই তো এই নোটখাতা!
ডেইজি সুলতানা, ডেইজি বন্দোপাধ্যায় হয়ে ডাউকি সীমান্ত পার হয়ে গেছে দুই বছর আগে। সেই রোদচশমা এবং ক্যাপের সাথে ডেইজি চারশ ডলার ছাড়া কী-ই-বা তেমন আনতে পেরেছে!
ডেইজিও এখন গুগলের বদৌলতে পনেরো-বিশটা বই মিলিয়ে একটা প্রবন্ধ লেখে এবং তাই অনলাইন পত্রিকাগুলোতে ছাপিয়ে নিজের খরচ বহন করে।
সবার আইডিয়ার সাথে নিজের আইডিয়া মিশিয়ে পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তর লেখার যে পদ্ধতি ডেইজি সুদূর কৈশোরে আয়ত্ত করেছিলো, তাই যে ওকে এই মধ্যবয়সে ভাত-কাপড়ের ব্যবস্থা করে দেবে তা কে জানতো! ডেইজি নাম এভিডেভিড করেছে, শীগগিরই ডেইজি গোমেজ হিসেবে শেনঝেন দেশগুলোতে চলে যাবে। এই যাওয়া পোক্ত করতে ওকে একটা প্রবন্ধ লিখতে হবে।
ডেইজি নতুন প্রবন্ধ লেখা শুরু করে ১০৪ খানা আসমানী কিতাবের মধ্যে মূলতঃ তিনটি অনুসরণ করে শান্তির পায়রা উড়া শুরু করে…