শান্তারা এভাবেই হেরে যায়!

মেহেরুন নূর রহমান:

রিনি ঘুমের ঘোরে শুনতে পায় কে যেন চাপা গলায় ডাকছে ওকে। রিনি? রিনি? কোন রকমে চোখ খোলে রিনি। ধাতস্থ হতে কয়েক সেকেন্ড লাগে। প্রথমে সে ঠিক ঠাহর করতে পারে না কোথায় আছে। কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারে ও শুয়ে আছে ভার্সিটির হলের রুমে, তার বিছানায়।

রিনি সাধারণত হলে থাকে না। শুধু পরীক্ষার সময় গ্রুপ স্ট্যাডি করার জন্য বাধ্য হয়ে হলে থাকতে হয়। ফিজিক্সে অনার্স পড়ছে ও। থার্ড ইয়ার ফাইনাল চলছে। রাত ২টা পর্যন্ত পড়ে তারপর শুয়েছে। পাশের টেবিলে রাখা টেবিল ঘড়ির দিকে তাকায় রিনি। ৩:৩০ বাজে। খুব বেশি হলে ঘন্টা দেড়েক ঘুমিয়েছে আর তাই উঠতে এতো কষ্ট হচ্ছে। কোন রকমে বিছানা ছেড়ে ওঠে রিনি। স্লিপার পরে, লাইট জ্বালিয়ে, দরজা খোলে। দেখে বাইরে ভীত ফ্যাকাশে মুখে দাঁড়িয়ে পাশের রুমের নুসরাত। নুসরাত তারই ব্যাচমেট , ইতিহাসে পড়ছে। নুসরাতের মুখ দেখেই রিনির ঘুমের ঘোর সম্পূর্ণ কেটে গেলো। ও বুঝতে পারে ভয়াবহ কিছু একটা ঘটেছে। ত্রস্ত হয়ে ও জিজ্ঞেস করে কী হয়েছে রে নুসরাত? নুসরাত দ্রুত ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে ওকে চুপ থাকতে ইশারা করে, তারপর হাত ধরে টেনে নিতে থাকে নিজের রুমের দিকে। হতভম্ব রিনি আরও কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই পৌঁছে যায় নুসরাতের রুমে। রুমে ঢুকেই নুসরাত দরজা বন্ধ করে দেয়।

মেহেরুন নূর রহমান

রিনি দাঁড়িয়ে নুসরাতের রুমমেট শান্তার বিছানার সামনে। শান্তা ওদের চেয়ে বছর দুয়েক ছোট, ইংলিশ ডিপার্টমেন্টে পড়ে। রিনি এখন যা দেখছে তা দেখার জন্য সে প্রস্তুত ছিল না। বিছানায় শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে শান্তা। রক্তে ভেজা কাঁথা একপাশে সরানো। ওর জামা, সালোয়ার, বিছানা, তাজা রক্তে একাকার। এতো রক্ত দেখে রিনির মনে হলো ও এক্ষুনি মাথা ঘুরে পড়ে যাবে। পাশের চেয়ারটা শক্ত করে ধরে নুসরাতের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়। এবার নুসরাত ফিসফিস করে যা বললো, তা হলো, শান্তা আট সপ্তাহের প্রেগনেন্ট ছিলো। কালকে বিকেলে এবরশনের জন্য কোন এক ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলো, আর তারই ফলশ্রুতি এই। রিনির মনে পড়লো কালকে রাতে ক্যান্টিনে খেতে যাবার সময় শান্তাকে দেখেনি। নুসরাত বলছিলো, ওর নাকি মাথা ব্যথা তাই তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়েছে। ইশ, তখন যদি জানতো!

শান্তার কয়েক ঘন্টা ধরেই ব্লিডিং হচ্ছিলো, তারপরও সে চুপচাপ শুয়েছিলো। নুসরাতকে কিছুই বলেনি। শেষে প্রচণ্ড পেটের যন্ত্রণা আর হেভি ব্লিডিং সামলাতে না পেরে বাধ্য হয়ে নুসরাতকে ডেকেছে। আর নুসরাত কী করবে বুঝতে না পেরে রিনিকে ডেকেছে। সাহসী হিসেবে বন্ধুদের মধ্যে রিনির নাম আছে।
রিনি বললো – তুই সুপার ম্যাডামকে ডাকিস নাই কেন?
নুসরাত বললো – ডাকতে চেয়েছিলাম, কিন্তু শান্তা এতো করে মানা করলো!

ও মানা করলো আর তুই শুনলি? রিনি বিরক্ত গলায় বলে, এগিয়ে গিয়ে শান্তার ঘামে ভেজা কপালে হাত রাখে। চোখ খুলে তাকায় শান্তা। দুহাতে কপালে রাখা রিনির হাত চেপে ধরে, বলে, রিনিপা, আমি মরে যাচ্ছি, আমাকে বাঁচান। কী করুণ আকুতি ! রিনির দুচোখ পানিতে ভরে উঠে। ও কোমল গলায় বলে, শান্তা তোমাকে এক্ষুণি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া দরকার। আমি সুপার ম্যাডামের কাছে যাচ্ছি যত দ্রুত সম্ভব এম্বুলেন্স এর ব্যবস্থা করতে। একটু ধৈর্য ধরো।
প্রচণ্ড যন্ত্রণায় কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিলো শান্তার, তারপরও কষ্ট করে বললো, সুপার ম্যাডামকে বলবেন? তাহলে যে সব জানাজানি হয়ে যাবে। ম্যাডাম আব্বা আম্মাকে জানাবে, তাদের যে লজ্জার শেষ থাকবে না।

রিনি শান্ত গলায় বললো এখন এসব নিয়ে ভাবার সময় না শান্তা। তারপর শান্তার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে, নুসরাতকে রুমে থাকতে বলে দ্রুত বের হয় রিনি। ওরা থাকে তিনতলায়, আর একতলায় হল সুপারের রুম। করিডোর দিয়ে দৌড়ে যাবার শব্দ রাতের নিস্তব্ধতায় বেশ জোরেই শোনায়। আশেপাশের কয়েকটা রুম থেকে দরজা খুলে কয়েকজন বেরিয়ে আসে। রিনির তখন কোনদিকে তাকাবার সময় নেই। প্রায় উড়ে সে পৌঁছায় হল সুপার রোকেয়া ম্যাডামের রুমে। বন্ধ দরজার কড়া নাড়ে জোরে জোরে। বিস্মিত এবং খানিক বিরক্ত হল সুপার দরজা খোলার পর তাকে কিছু জিজ্ঞেস করার সুযোগ না দিয়ে গড়গড় করে রিনি সুপার ম্যাডামকে সব বলে যায়। সব শুনে সুপার ম্যাডাম দ্রুত পায়ে শান্তাদের রুমে এসে পৌঁছান। রুমের সামনে তখন ছোটখাটো জটলা। জটলা ঠেলে ভিতরে ঢুকে শান্তাকে এবং এতো এতো রক্ত দেখে হল সুপার আঁতকে ওঠেন। তক্ষুণি তিনি ফোন করেন ভার্সিটির কাছাকাছি হাসপাতালে যত দ্রুত সম্ভব অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর জন্য। সেইসাথে তিনি হল কমিটির শিক্ষকদের ফোন করে সব জানান।

অ্যাম্বুলেন্স বেশ দ্রুতই চলে এলো। শান্তার সাথে রিনি, নুসরাত আর হল সুপার অ্যাম্বুলেন্সে উঠে বসলো। হাসপাতালে যাবার পথেই ওরা দেখতে পায় শান্তা কেমন নিস্তেজ হয়ে আসছে। তিনজনই ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া শান্তার হাত এবং পায়ের তালু ডলতে থাকে একটু উষ্ণতা ফিরিয়ে আনবার জন্য, কিন্তু খুব একটা লাভ হয় না। শান্তার বাবা-মাকে আগেই খবর দেয়া হয়েছিলো। ওনারা হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই শান্তা মারা গেলো। হাসপাতালে পৌঁছবার পর ডাক্তাররা দ্রুত শান্তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গিয়েছিলো, তাদের যথেষ্ট চেষ্টার পরও কোমল মেয়েটা চলে গেলো অজানা অচেনা এক দেশে।

নুসরাত আর রিনি দুজনেই অঝোরে কাঁদতে থাকে। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে ওদের। শান্তাকে ওরা দুজনেই খুব পছন্দ করতো। শ্যামলা, ছিপছিপে, একমাথা কালো চুলের মিষ্টি শান্তা। মৃত্যু এতো সহজ! কাল সকালেও না শান্তার সাথে ওদের কথা হয়েছে আর আজ মেয়েটি নাই? চাপা স্বভাবের মেয়েটি একবারও ওদের কিছু বললো না!
দূর থেকে শান্তার বাবা-মাকে আসতে দেখে রিনির ইচ্ছে হলো কোথাও গিয়ে লুকিয়ে থাকে। সন্তানহারা বাবা-মায়ের কষ্ট দেখার সাহস ওর হচ্ছিলো না।

সকাল প্রায় ৮ টা বাজে। এরই মাঝে খবর পেয়ে শান্তার ক্লাসের কিছু ছেলেমেয়ে এসে জড়ো হয়েছে হাসপাতালে। রিনির পরীক্ষা দুপুর ১২টা থেকে, ওর বের হতে হবে। পরীক্ষার হলে পৌঁছবার আগে রুমে গিয়ে একটু ফ্রেশ হওয়া দরকার। বেরুবার আগে বিদায় নেবার জন্য রিনি শান্তার মায়ের কাছে গেলো। অনেক কান্নাকাটির পর এখন খানিকটা শান্ত হয়ে বসে আছেন উনি।

আহা, কী দুঃখী লাগছে দেখতে! রিনিকে দেখে ভদ্রমহিলা ওর হাত ধরে বললেন, তোমরা কষ্ট করে আমার মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলে এজন্য অনেক ধন্যবাদ মা। কী উত্তর দেবে রিনি জানে না তাই চুপ করে থাকে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে ভদ্রমহিলা আবার বলেন, ভালোই হয়েছে মরে গেছে। বেঁচে থাকলে এই বদনাম নিয়ে কোথায় যেত? কোথায় নিয়ে লুকাতাম ওকে? কান্নায় ভদ্রমহিলার গলা বুঁজে আসলো। আবার গাল চোখের জলে ভাসাভাসি। স্তব্দ হয়ে কয়েক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে বেরিয়ে আসে রিনি। নুসরাত আগেই বলেছে ও আরো কিছুক্ষণ থাকবে। তাছাড়া আজকে ওর পরীক্ষাও নেই। সিএনজি দিয়ে ভয়ংকর মন খারাপ নিয়ে হলে ফিরে আসে রিনি।

রিনি জানে শান্তার এই পরিণতির জন্য কে দায়ী। মাস কয়েক হলো শান্তার ওরই ডিপার্টমেন্টের এক সিনিয়র ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক তৈরি হয়েছিলো। ছেলেটি রিনিদের ব্যাচমেট। নাম রিয়াজ। ওদের দুজনকে কয়েকবার একসাথে দেখেছে রিনি। শান্তাকে বেশ হ্যাপি মনে হতো সম্পর্কটি নিয়ে। কই ছেলেটিকে তো হাসপাতালে দেখলো না রিনি। রিনি বেশ বুঝতে পারছে রিয়াজ তার দায় এড়িয়ে যাচ্ছে। কথাটা ভেবে রাগে রিনির গা জ্বলতে লাগলো। হারামজাদা। মজার বেলায় আছে, বিপদের বেলায় নাই। ও ভেবে নেয় পরীক্ষা শেষে আজ বিকেলেই রিয়াজকে ও ধরবে।

ফিজিক্স এবং ইংলিশ ডিপার্টমেন্টে পাশাপাশি নয়। রিক্সায় মিনিট দশেকের দূরত্ব। রিনি জানে ওদেরও পরীক্ষা চলছে, সুতরাং রিয়াজ অবশ্যই ডিপার্টমেন্টে আসবে। পরীক্ষা শেষ হবার ১০ মিনিট আগেই হল থেকে বের হয়ে রিকশা নিয়ে রিনি ছোটে ইংলিশ ডিপার্টমেন্টে। দাঁড়িয়ে থাকে পরীক্ষার হলের বাইরে। মিনিট দুয়েক পরেই রিয়াজকে দেখতে পায়। সহজ ভঙ্গিতে বন্ধুদের সাথে গল্প করতে করতে বের হয়ে আসছে। রিয়াজ কি এখনো কিছু জানে না? পুরো ইউনিভার্সিটিতে এই খবর চাউর হয়ে গেছে এতক্ষণে আর প্রেমিক হয়ে রিয়াজ জানবে না? হতেই পারে না। চিৎকার করে রিয়াজের নাম ধরে ডাকে রিনি।
ডাক শুনে একটু দ্বিধায় পড়লো যেন রিয়াজ। তারপর স্বাভাবিক ভঙ্গিতে হেঁটে আসে রিনির কাছে এবং রিনি কিছু বলার আগেই বেশ বিরক্ত নিয়ে বলে, কী ব্যাপার? এভাবে ডাকার মানে কী? রিয়াজের ভাব আর কথা বলার ভঙ্গি দেখে রিনির জোরে একটা চড় কষাতে ইচ্ছা করে, কিন্তু নিজেকে সামলে ঠান্ডা গলায় বলে, শান্তার খবর জানো?

একটু চুপ থেকে নির্লিপ্ত গলায় উত্তর দেয় রিয়াজ, হ্যাঁ শুনেছি। খুব দুঃখের ব্যাপার। রিনি আর ধৈর্য ধরে রাখতে পারে না। চিৎকার করে বলে দুঃখের ব্যাপার? কিচ্ছু যেন জানো না? ও না তোমার প্রেমিকা ছিলো? ওর মৃত্যুর পরও এতো স্বভাবিক আছো কী করে?

রিয়াজ কিছু একটা বলতে চাচ্ছিলো, কিন্তু তাকে থামিয়ে আবার বলে রিনি, তোমরা ভালোবাসতে একজন আর একজনকে, ঘনিষ্ট হয়েছিল ঠিক আছে, কিন্তু শান্তার এতো বড় বিপদের সময় ওর পাশে থাকলে না? কোথাকার কোন ডাক্তারের কাছে গিয়ে কীনা কী করে ও মরে গেলো? তুমি মানুষ?

এবার রিয়াজের মুখভঙ্গি দেখে মনে হলো, ও আকাশ থেকে পড়েছে। যেন খুব অবাক হয়েছে এমন গলায় বললো, প্রেমিকা? কে কার প্রেমিকা? আমার সাথে তো শান্তার কোন প্রেম ছিল না। এটা ঠিক আমার দুজন কিছুদিন একসাথে ঘোরাঘুরি করেছি জাস্ট একজন আর একজনকে বোঝার জন্য। কিন্তু ব্যাপারটা ক্লিক করে নাই, তাই সম্পর্কটাও আর হয় নাই। যেখানে প্রেম নাই, সেখানে ঘনিষ্ঠতার তো প্রশ্নই আসে না। এরপর রিয়াজ বিকট এক মুখভঙ্গি করে বলে মরার আগে কি ওই মেয়ে আমার নাম বলে গেছে? কী মিথ্যাবাদী চরিত্রহীন মেয়ে! কার না কার সাথে শুয়ে প্রেগনেন্ট হয়ে আমার নামে চালিয়ে দিতে চেয়েছে? নষ্ট মেয়েছেলে। মরেছে ভালো হয়েছে, এদের মরাই দরকার।

রাগে রিনির ইচ্ছা হচ্ছিলো সামনে পরে থাকা ইট দিয়ে রিয়াজের মাথা ফাটিয়ে দেয়। ওদের চারপাশে তখন ভিড় জমে গেছে। কথা শেষ করে রাগে কাঁপতে থাকা রিনির সামনে থেকে হনহন চলে যায় রিয়াজ। রিনি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে এর শেষ দেখে ছাড়বে।

সব প্রতিজ্ঞা পূরণ হয় না। যদি হতো তাহলে বোধকরি পৃথিবী অন্যরকম হতো। রিনিরা অনেক চেষ্টা করেছিল। শান্তা আর রিয়াজের ব্যাপারটা গড়িয়েছিল অনেকদূর। রিয়াজের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে মিছিল হয়েছিলো। ভিসি স্যার পর্যন্ত গিয়েছিলো ব্যাপারটা, কিন্তু প্রমাণ করা যায় নাই রিয়াজের সাথে শান্তার কোন শারীরিক সম্পর্ক ছিল। রিয়াজের বন্ধুরা ওর পক্ষ নিয়ে সাক্ষী দিয়েছে। যে ক্লিনিকে গিয়ে শান্তা এবরশন করিয়েছিলো, তার নাম জানা গেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে কেইস করা হয়েছে। সেই কেইস এখনো চলছে। সেই ক্লিনিকের রেজিস্টারে শুধু শান্তার নামই পাওয়া গেছে। ওখানেও যদি বোকা মেয়েটা রিয়াজকে নিয়ে যেতো! অবশ্য নিয়ে যাবেই বা কীভাবে, রিয়াজ নিশ্চয়ই যেতে অস্বীকার করেছে।

এক্সপার্ট দিয়ে শান্তার মোবাইল, ফেসবুক, ই-মেইলস ইত্যাদি চেক করেও তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। শান্তার খুব ঘনিষ্ট বন্ধু শিলা জানিয়েছে, শান্তা মারা যাবার কিছুদিন আগেই রিয়াজের সাথে ওর ভীষণ ঝগড়া হয় এবং রিয়াজ শান্তার পুরনো মোবাইল রাগ করে ক্যাম্পাসের পুকুরে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। তারপর শান্তা নতুন মোবাইল নিয়েছিলো বটে, কিন্তু ততদিনে রিয়াজ ওকে এভয়েড করা শুরু করেছে, তাই সেই মোবাইলে ওদের ঘনিষ্টতা সংক্রান্ত কিছু পাওয়া যায় নাই।

শান্তার ফেসবুক, ইমেইল এসবের পাসওয়ার্ড রিয়াজ জানতো, তাই ইমেইল, ছবি, মেসেজ এসব ডিলিট করা রিয়াজের কাছে কোন ব্যাপারই না। রিনি অবাক হয়ে ভাবে, তারই বয়েসী ২২/২৩ বছরের একটা ছেলে এতো ধূর্ত হয় কী করে! অনেক চেষ্টা করেও রিনি, নুসরাত এবং শান্তার বন্ধুরা শান্তার জন্য ন্যায়বিচার আদায় করতে পারেনি। দিনশেষে শান্তা ‘চরিত্রহীন’ মেয়ে আর রিয়াজ বহাল তবিয়তে ক্যাম্পাসে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়।

এর মাঝে বছর খানেক চলে গেছে। ক্যাম্পাসে নতুন আর এক ব্যাচ এসেছে তাও প্রায় ছয় মাস হলো। ক্যাফেটেরিয়াতে একদিন রিনি দূর থেকে রিয়াজকে এক মেয়ের সাথে বসে থাকতে দেখে। খুব সম্ভবত প্রথম বর্ষের মেয়ে। বসার ভঙ্গিই বলে দেয় ওদের দুজনের ঘনিষ্টতা। হেঁটে রিনি ওদের টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। ওকে দেখে খানিক চমকে ওঠে রিয়াজ, তারপর মেয়েটির হাত ধরে বলে, চলো, উঠবো এখন। মেয়েটি একটু অবাক হলেও উঠে দাঁড়ায়। রিনি রিয়াজের দিকে সরাসরি তাকিয়ে বলে, আচ্ছা, নতুন পাখি তাহলে ধরা হয়ে গেছে? তারপর মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলে, কদিন পর ব্লিডিং হতে হতে মরবে কিন্তু, প্রস্তুত আছো তো? মেয়েটি কিন্তু একথা শুনে অবাক হয় না, বরং মৃদু হাসে। বলে, আপু আমি জানি আপনি একথা কেন বলছেন এবং কার জন্য বলছেন। রিয়াজ আমাকে সব বলেছে।
সব বলেছে? রিনি প্রশ্ন করে।

হ্যাঁ আপু, ও সব বলেছে। ওকে নিয়ে আপনাদের একটা ভুল বোঝাবুঝি আছে। আমার সাথে ওর তিন মাসের সম্পর্ক, কিন্তু আমি বুঝতে পারি ও কোন অন্যায় করতে পারে না, আমি ওকে বিশ্বাস করি আপু।

এবার ভালো করে মেয়েটির দিকে তাকায় রিনি। ১৯/২০ বছরের সুন্দরী একটা মেয়ে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিনি। আহারে বোকা মেয়ে। ঘুরে তাকায় ও রিয়াজের দিকে। রিয়াজের মুখে তখন খেলা করছে ধূর্ত হাসি। মুহূর্তের মধ্যে সে হাসি বদলে ফুটে উঠে সারল্য। রিয়াজ সুদর্শন। সরল হাসিতে রিয়াজকে এখন দেখাচ্ছে মায়াময় ভদ্র আন্তরিক। রিয়াজের ভণ্ডামিতে স্তম্ভিত রিনির আজকেও ইচ্ছা করে চেয়ার উঠিয়ে রিয়াজের মুখে ছুঁড়ে মারে। কিছু করা হয় না। অক্ষম আক্রোশে নির্বাক হয়ে হাত ধরাধরি করে দুটি শরীরের চলে যাওয়া দেখে শুধু।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.