আলফা আরজু:
বার বার নিষেধ করা সত্ত্বেও একটা ছেলে “ভালোবাসি ভালোবাসি” বলে মেয়েটার চারপাশে ঘুর ঘুর করে। আজ ক্যান্টিনে, কাল অফিসের সামনে, তো পরশু বাসায় এসে হাজির হয় – কাঁদতে কাঁদতে, “তোমায় ছাড়া বাঁচবো না, বাঁচবো না” বলে।
মেয়েটির মন থেকে তেমন কোন সায় মেলে না। তবুও মেয়েটি সামাজিক-পারিবারিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে – দু’একবার ভাবে – “ছেলেটা এতো আগ্রহ দেখাচ্ছে। যদি ভালো হয়। তাহলে বিবেচনা করে দেখা যেতে পারে।” বলা ভালো, মেয়েটি কৈশোরে একবার একজনকে মন দিয়েছিলো ও সেই অভিজ্ঞতা খুবই তিক্ত। তাই সে বদ্ধপরিকল্প ছিলো, “জীবনে কোনো ছেলের সাথে আর মন দেওয়া-নেওয়া নয়। একাই থাকবে। বাবা-মা, ভাই-বোনকে নিয়ে সুন্দর সুখের সংসার তার।”
কিন্তু তার বয়োঃবৃদ্ধ বাবা-মা। যাদের চোখের সামনে – অল্প বয়সী একটা কন্যা সারাজীবন একা কাটিয়ে দিবে। এটা তাঁরা মানতে পারেন না। প্রায়ই মেয়েকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। ভালো কোনো ছেলে পেলে – বিয়ের কথা বলেন। আমাদের দেশের বাবা-মায়ের জন্য সমাজ-সংসার এমন এক নিয়ম-রীতির রেওয়াজ করেছে – যাতে, “মেয়ে একলা কেন?” দিয়ে এমন সব ঈশারা ইংগিত করে। যা সব বাবা-মা হজম করতে পারেন না।
তো সামাজিক-পারিবারিক “কন্ডিশনিং”য়ের চাপে ও একলা জীবনে যদি এমন দেওয়ানা সঙ্গী মেলে খারাপ না ভেবে মেয়েটি মন নেয়া-দেওয়ার পথে ইতিবাচক হয়ে সম্পর্কে এগিয়ে যান।

তারপর সেই ছেলের প্রতারণার ফাঁদ টের পেতে না পেতেই, ছেলেটি মেয়েটিকে গোপনে বিয়ের বুদ্ধি পরার্মশ ও সাথে বিবাহ পরবর্তী সুন্দর সংসারের গল্পের ফাঁদ পেতে ফেলে। আর সেই সংসারের স্বপ্নের ফাঁদে পড়ে- মেয়েটি বিয়ে করেন। পরিবার, বন্ধু, সহকর্মী কাওকে না জানিয়ে। কারণ, ছেলেটি বলেছে – এখন কাওকে বলো না। আমরা ধুমধাম করে বিয়ের খবর ও দাওয়াত দিবো সবাইকে। মেয়েটি সঙ্গীকে বিশ্বাস করেছে ও ওর কথা অনুযায়ী তাঁদের বিয়ের কথা কাওকে জানায়নি।
ছেলেটি সাংবাদিক ও গ্রামে নেতা মানুষ। তাই তিনি, মেয়েটিকে ঢাকায় রেখে গ্রামের বাড়ীতে বিশেষ কাজ আছে বলে যান।
মেয়েটি তখন ঢাকায়, স্বপ্নে বিভোর। তার রাত কাটে তো দিন কাটে না। মধু-চন্দ্রীমার সময়। যে ছেলে তাকে জান দিয়ে ভালোবাসে, তাকে সে বিয়ে করেছে। এর চেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে! ছেলেটি গ্রামে যাওয়ার পর – ও সারাক্ষন ছেলেটির ফোনের অপেক্ষায় থাকে আর ভাবে, “নিশ্চয় ফোন করে এক্ষুণি ছেলেটি বলবে, আগামী মাসে আমাদের ধুমধাম করে বিয়ে। তুমি কেনা-কাটা ও সব পরিকল্পনা করে ফেলো!”
নাহ, এমন কোন ফোন আসে না। বরং, ছেলেটিকে ফোন দিলে – ফোন কেটে দেয়া হয়, বিরক্ত হয় !
এরই মধ্যে একদিন সকালে মেসেঞ্জারে তালাকের বার্তা আসে (বিয়ের একমাসের মাথায়)। এই সরল মেয়েটি তখনও জানে না কী হচ্ছে, কী করা উচিত?- ও তখন করোনার লকডাউন উপেক্ষা করে রাস্তায় নানাধরণের ঝক্কি শেষে চিলমারীতে (নীলফামারী) হাজির হয় -সেই ছেলেটির তখন আরেক বিয়ের আয়োজন চলছে। মেয়েটিকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে সেই বাড়িতে প্রবেশে বাধা দেয়া হয়। (শারীরিক নির্যাতনের পরে তাকে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়।) আর স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় – ঐদিন সেই ছেলের বিয়েটি ভেঙ্গে দেয়া হয়।

ছেলেটির নাম রেজাউল করিম প্লাবন, দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার আওয়ামী লীগ বিটের রিপোর্টার। তিনি কারমাইকেল কলেজে পড়তে শিবির করতেন। পরে ঢাকা শহরে এসে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয়দের কাছাকাছি চলে আসেন। সাংবাদিকতার (হলুদ) দাপট, রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার, তদবীরবাজী সহ নানাধরণের দুর্নীতি ও অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জন করে ঢাকায় নিজের ফ্ল্যাট, রংপুরে দোকানপাট ও বাড়ি সহ অবৈধ অনেক সম্পদের মালিক তিনি। তার দাপট এতো বেশী যে – তিনি যুগান্তর পত্রিকার সম্পাদক’কে নিয়ে পর্যন্ত আজে-বাজে মন্তব্য করে চলেছেন এই ঘটনার জের ধরে।
সব মানুষ প্লাবনের মতো চতুর হবেন না। কেউ কেউ পারুল হবেন। যিনি সরল হবেন। নির্দ্বিধায় মানুষকে বিশ্বাস করবেন। মন দিবেন-ভালোবাসবেন। বিশ্বাস করা বা ভালোবাসায় কোনো ভুল নেই। কিন্তু সমাজে কিছু প্লাবন আছেন – যাঁরা “ভালো-মন্দের” হিসেবটাই বদলে দিয়েছেন। বিশ্বাস করা, মন দেওয়া-নেওয়ার যে “আবেগীয় ও রোমান্টিক” একটা আবেদন ছিলো – সেই হিসেবেও প্লাবনেরা তাদের কালো থাবা বসিয়েছেন। একের পর এক বিয়ে, প্রেম সবকিছুতে তাদের অসৎ পদচারণা।
“পঁচা শামুকে পা কাটলে”- সেই ক্ষতস্থানের যত্ন নিয়ে ভালো করতে হয়। পা কেটে ফেলতে হয় না।