করোনাকালীন ঈদ ভাবনা

রেজভিনা পারভীন:

করোনাকালীন আমরা একে একে অনেকগুলো টানাপোড়েন ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি পার করে চলেছি। শুরুতে গার্মেন্টস খুলে দেয়া, এখন শপিং মল খুলে দেয়া, জামাতে নামায আদায়ের অনুমতি, সবকিছু মিলে আমাদের করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়েই যাচ্ছে। এইক্ষেত্রে অনেকরকম যুক্তি দেখানো হচ্ছে লাইফ ভার্সেস লাইভলিহুড। কিন্তু এসব যুক্তিতে যে বিষয়টি মিসিং সেটা হলো সুরক্ষা ও নিরাপত্তা। তাই রাষ্ট্র কাঠামোর দিকে তাকিয়ে থেকে নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে না, আপনার নিরাপত্তা আপনাকেই ভাবতে হবে, আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে আমাদের আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে নিজেদেরকে সংক্রমণের ঝুঁকিতে না ফেলে নিজেদের চিন্তা ভাবনায় একটু পরিবর্তন এনে কিছুটা হলেও নিরাপদ রাখার চেষ্টা করুন।

১. শপিংমলে যারা শপিং করার সামর্থ্য রাখেন, আমার ধারণা তাদের বাসার আলমিরায় একটু খোঁজ করলেই তারা অনায়াসে ২/৩টা নতুন কাপড় (শাড়ি, শার্ট, পাঞ্জাবি, বাচ্চার জামা) পেয়ে যাবেন। এখন প্রশ্ন হলো এগুলো তো হয়তো কারো বিয়েতে, জন্মদিন, অথবা অফিস পার্টির জন্য কেনা ছিল, ঈদ ফ্যাশন এর হলো না, কিন্তু আপনি তো এবার ঈদে কারও বাড়িতে যাবেন না, ঘরে বসে পোলাও কোরমা খাবেন, আর সাজুগুজু করে ছবি আপলোড করবেন, সেক্ষেত্রে একটা নতুন ড্রেস হলেই তো হয়, এর জন্য শপিং এ গিয়ে নিজে এবং পুরো পরিবারকে মৃত্যু ঝুঁকিতে ফেলবেন কিনা সেটা আপনার বিবেচনা। কারণ শপিং মলে আপনাকে কেউ বেঁধে নিয়ে যাবে না! মনে রাখবেন শপিং মলের কাপড়গুলোয় অনেক মানুষের হাতের ছোঁয়া থাকবে। আর ইতিমধ্যেই অবশ্য অনেকে শপিং মল খোলার আগেই অনলাইন শপিং সেরে নিচ্ছে।

২. আর যাদের আলমিরাতে কোন কারণে জমিয়ে রাখা নতুন কাপড় নেই, তারা নিজের শাড়ি কেটে নিজের আর বাচ্চার জন্য নিজ হাতে জামা বানিয়ে ফেলেন, এতে আনন্দও পাবেন, নতুন জামাও পরা হবে, ফিটিংস নিয়ে একদম ভাববেন না, কারণ আপনি তো শুধু ছবি আপলোড করবেন, আর ঘরে থাকবেন।

৩. আর পুরুষ সদস্যদের আাগের পাঞ্জাবী, টিশার্টে বিভিন্ন রঙের টুকরো কাপড় দিয়ে ডিজাইন করতে পারেন, এক্ষেত্রে আপনি যে শাড়ি কেটে জামা বানাবেন সেটার টুকরো ব্যবহার করে যুগলবন্দী পোশাক তৈরি করতে পারেন, আর যারা রঙের কাজ, সুতার কাজ পারেন তাদের তো কোন অসুবিধা হওয়ার কথা নয়!

৪. ঘরে থাকেন নিজের সামর্থ্য অনুয়ায়ী ভালোমন্দ রান্না করেন, ঘরে বসে আনন্দটুকু আপলোড করেন, গরীব মানুষকে সহায়তা করেন! এবারের ঈদটা না হয় একটু অন্যরকম হলো আগামী অনেকগুলো ঈদ সবাইকে নিয়ে অনেক আনন্দে কাটানোর প্রত্যাশায়।

আমরা তো সেই জাতি যারা শপিংমল কেন খুলেছে বলে ফেসবুক গরম করে ফেলেছে, তারাই একটু পরে সব ভুলে গিয়ে নিজের অবস্থান পাল্টে ঈদের নামাজ জামাতে আদায়, শপিং মলে যাওয়া, এবং ঈদের দিন কোথায় কার বাসায় যাবেন সেই পরিকল্পনা করবেন আর এসব করার জন্য একশোটা যুক্তি খুঁজে বের করবেন।

এখানেই শেষ না, এর মধ্যে যারা নিজেদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার কথা চিন্তা করে কারো বাড়িতে যাবেন না এবং তাদের বাড়িতে কারো আসাটাও পছন্দ করবেন না তাদের ১৪ গুষ্টি উদ্ধার করতেও তারা দ্বিধা করবেন না। আসলে এই দুর্দিনে নিজে সতর্ক থাকার কোন বিকল্প নেই। আপনার পরিবারের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আপনাকেই উদ্যোগ নিতে হবে।

তাই আসুন নিজের অবস্থান থেকে পরিবারের সুরক্ষা নিশ্চিত করুন এবং অন্যকে ও নিরাপদ রাখার জন্য সহায়তা করুন! আগামী অনেকগুলো ঈদ সবাইকে নিয়ে অনেক আনন্দে কাটানোর জন্য এবারের ঈদটা না হয় একটু অন্যরকম হলো, ঘরে থাকুন আর সীমিত আকারে ঈদ এর আনন্দ করুন। রঙিন, নিরাপদ ও ঝলমলে ঈদের প্রত্যাশায়।

রেজভিনা পারভীন
নৃবিজ্ঞানী ও উন্নয়ন কর্মী

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.