সাংবাদিক মানেই কি নিষ্পাপ?

নাদিয়া শারমিন:

এক পেশার সবাই কি ভালো হতে পারে? ধরেন পুলিশ, চিকিৎসক, আইনজীবী, সরকারি-বেসরকারি চাকুরে কিংবা এমন নানা পেশার শতভাগ মানুষ কি ভালো? চোখ বন্ধ করে কি বলা যায় যে অমুক পেশার কেউ অন্যায় করতেই পারে না? এমনকি বিভিন্ন ধর্ম প্রচারকদের মধ্যেও তো ভালো খারাপ আছে। তাই পেশা কি কারো চরিত্রের সার্টিফিকেট, নিষ্পাপ হবার প্রমাণ হতে পারে?

সাংবাদিক হিসেবে নিজ পেশার একযুগ সময় ধরে দেখা বাস্তবতাকেই বিশ্লেষণ করি। অসংখ্য ধরনের, বিচিত্র সব চিন্তাধারার, নানা স্তরের শিক্ষা, সামাজিক অবস্থান আর পরিবার থেকে আসা মানুষ এখানে একসাথে কাজ করে। তাদের বোঝার ধরন, চিন্তাধারা, বিশ্বাস, বৈশিষ্ট্য, জেন্ডার ধারণাসহ সবকিছুই ভীষণ বৈচিত্র্যময়।

আমি এমন একজন সাংবাদিকের কথা জানি যে জমির দ্বন্দ্বে একপক্ষের হয়ে অন্যপক্ষের কিশোরী মেয়েকে “পতিতা” বানিয়ে রিপোর্ট করায় সে আত্মহত্যা করে। ব‌উ পিটিয়ে মেরে ফেলে দিব্যি আছে এমন লোক‌ও চিনি। একাধিক বিয়ে, প্রতারণা, পরকীয়া, যৌন হয়রানি, নারী নির্যাতনকারীদের হিসাব করতে গেলে তো মোটামুটি ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হবার ভয় আছে। ঘুষ, দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজি, মাদক, চোরাকারবারিসহ অসংখ্য অপরাধেও মোটেই পিছিয়ে নেই অনেকেই। বরং এখন দুর্বৃত্তদের একটা বড় অংশ সাংবাদিকের কার্ডটা আদায় করে অপকর্মের সুবিধার্থে। জঙ্গিবাদ কিংবা বহিঃশত্রুর হয়ে কাজ করাসহ বিভিন্ন গোপন অপকর্ম করতেও এই ক্যামোফ্লাজটা বেশ ভালো।

নাদিয়া শারমিন, সাংবাদিক

এই যে বিশাল অপকর্মের লিস্ট দিলাম, সেই সাংবাদিক পরিচয়ধারী অপকর্মকারীদের ভিড়ে সৎ সাংবাদিকরাও আছে। সেটা না থাকলে এই পেশা টিকতো না, মানুষ উপকার পেতো না সংবাদ থেকে, সত্য, দুর্নীতি, অপরাধের পেছনের অসংখ্য রহস্য সবার সামনে বেরিয়ে‌ও আসতো না। তাই মানেন আর নাই মানেন, সাংবাদিকদের মধ্যে সৎ মানুষ এখনও টিকে আছে।

আবার কেউ একক্ষেত্রে সৎ, অন্যক্ষেত্রে অসৎ। অনেক সময় নিয়মিত অসৎ লোক‌ও কখনো কখনো এমন জায়গায় এমন অভিযোগে ধরা খায় যেটা হয়তো সে করেনি‌। আবার পরিপূর্ণ নিষ্পাপ ইমেজের অনেকেই গোপনে অন্যায় করেও ধরা খায় না বা ধরা খেলে‌ও ঐ ইমেজ তাকে রক্ষা করে। এ বাস্তবতা আসলে সব পেশাতেই।

এজন্য আমি পরিস্থিতি, ঘটনা, ব্যক্তিচরিত্র, বৈশিষ্ট্য, তথ্যপ্রমাণ সবকিছু বিশ্লেষণ করে তারপরেই একজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অভিযোগকে সত্য বা মিথ্যা বলার চেষ্টা করি। সাংবাদিক বলেই তার বিরুদ্ধের অভিযোগকে সত্য বা মিথ্যা ভেবে নেই না। এবং বিশ্বাস করি- ” দুর্জন সাংবাদিক হ‌ইলেও পরিত্যাজ্য”।

পেশাগত পরিচয় যেন একজন অপরাধীর ঢাল না হয় এবং পেশাদারিত্বের কারণে যেন কেউ ভিকটিম না হয় – সেটাই আমার একমাত্র চা‌ওয়া। এজন্য বলি- বারবার যাচাই করে বিশ্বাস করুন। একজন সাংবাদিক সৎ কিনা, নিরপরাধ কিনা সেটাও। একজন সাংবাদিক অসৎ, অপরাধী কিনা সেটাও। এবং যাচাই করেই সিদ্ধান্ত নেন- তার পাশে দাঁড়ানো উচিত নাকি তাকে আস্তাকুঁড়ে ছুড়ে ফেলা উচিত।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.