নতুন চূড়ায় ফ্রেজার-প্রাইস

Frezer Prise
ফ্রেজার প্রাইস

প্রথম আলো থেকে নেয়া: চুলে গোলাপি রং করা, নখ রাঙিয়েছেন গোলাপি রঙে। জুতাজোড়াও গোলাপি! উচ্চতা মাত্র ৫ ফুট! শেলি-অ্যান ফ্রেজার-প্রাইসকে দেখলে কে বলবে তাঁর বয়স ২৬? ছোটখাটো বলে নাম হয়ে গেছে ‘পকেট রকেট’। কিন্তু যতই খর্বাকৃতির হোন, নিজেকে এমনই এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন যেখানে যেতে পারাটা বড় অ্যাথলেটদেরও স্বপ্ন। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ১০০ ও ২০০ মিটারের ডাবল জয়ের কীর্তি যে ইতিহাসেই আছে মাত্র দুজনের! সর্বকালের সেরা নারী অ্যাথলেটের ছোট্ট তালিকাতেই এখন ঢুকে যাবে তাঁর নামটা।
পেছনে ফিরে তাকালে আজকের ফ্রেজার-প্রাইস স্মৃতিকাতর হতেই পারেন। এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠলেন আর পৌঁছে গেলেন—ব্যাপারটা এমন ছিল না। রক্তাক্ত পায়েই পার হতে হয়েছে পথটা। কিংস্টনের যে বাড়িতে শৈশব কাটিয়েছেন, সেখানে আনন্দের কোনো উপলক্ষ ছিল না, দারিদ্র্য-সহিংসতা দেখেছেন খুব কাছ থেকে। অল্প বয়সেই সন্তানের মা হয়ে যাওয়াটা সেখানকার মেয়েদের জন্য ছিল একেবারেই সাধারণ ঘটনা। ফ্রেজারকে যে সেই দুর্ভাগ্য বরণ করতে হয়নি সেটা অবশ্য মা ম্যাক্সিনের কল্যাণে। ‘সিঙ্গল প্যারেন্টস’ ম্যাক্সিন ছায়ার মতো আগলে রেখেছিলেন তিন সন্তানকে। সব সময় মেয়ের কানে একটাই মন্ত্র জপে দিতেন, ‘তোমার প্রতিভা আছে। তুমি পারবে।’ মা যে মিথ্যা স্তোকবাক্য দেননি সেটা তো এখন দেখাই যাচ্ছে!

ফ্রেজার-প্রাইস তাই জ্যামাইকার এসব সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোরের জন্য সুযোগ পেলেই কিছু করার চেষ্টা করেছেন। ২০১০ সালে নির্বাচিত হয়েছেন ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূত। নিজে যেমন বলেছেন, ‘১৬ বছর বয়সেই আমি অনেককে দেখেছি একাকী শিশুকে মানুষ করতে হচ্ছে। এই শিশুরাও পরে তাদের পথেই পা বাড়াচ্ছে। আমি এসব শিশুর জন্য একটা উদাহরণ সৃষ্টি করার চেষ্টা করি, যাতে তারা সফল হতে পারে। আমি তাদের বলি—আগে হাইস্কুল শেষ করো। তার আগেই সন্তানের মা হয়ে যেয়ো না, রাস্তায় বেশি চলাফেরা করো না। তোমার বাড়ির কাজ ঠিকঠাক করো, যেই খেলাটা তুমি ভালো সেখানে মনোযোগ বাড়াও। যেমনটা আমি করেছি।’

তবে পাদপ্রদীপের আলোয় থাকতে নয়, নেপথ্যে কাজ করতেই পছন্দ করেন ফ্রেজার-প্রাইস। জ্যামাইকাতে স্থানীয় গির্জার যাজক প্যাস্টন উইনসন গত বছর বলেছিলেন, ‘আপনি যদি শেলিকে দেখেন, সে সব সময় আড়ালেই কাজ করতে পছন্দ করে। সে যদি কাউকে সাহায্য করতে চায়, সেটা সে আড়ালেই করবে। সে প্রচার খুব বেশি পছন্দ করে না।’

ট্র্যাকের বাইরে যেমনই হোন, ট্র্যাকে কিন্তু দারুণ সপ্রতিভ ‘পকেট রকেট’। ২২.১৭ সেকেন্ড সময় নিয়ে ২০০ মিটার জয়ের পর পরশু এক পাক নেচেও নিলেন! পরে বললেন অবাক করা একটা কথা, ‘২০০ মিটার আমি পছন্দই করতাম না, কিন্তু এখন আমি জানি এটা অর্জন করার জন্য কীভাবে মনঃসংযোগ করতে হয়। এই জয়ের পেছনে অনেক ত্যাগ, পরিশ্রম ও প্রতিজ্ঞা ছিল।’

ফ্রেজার-প্রাইসের দিনটা যখন উৎসবের রঙে রঙিন, তখন অ্যালিসন ফেলিক্স ব্যথায় কাতরেছেন স্ট্রেচারে। শুরু করতে না-করতেই হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে ছিটকে পড়েছেন ২০০ মিটারের সম্ভাব্য এই সোনাজয়ী। বিস্মরণযোগ্য এক দিনের পর ফেলিক্সের হতাশা ছিল স্বাভাবিক, ‘আমি একেবারেই বিধ্বস্ত। আমি মনে করেছিলাম, দারুণ একটা দৌড় হবে। চোটটা গুরুতর, কিন্তু ঠিক কী রকম সেটা এখনই বলতে পারছি না।’ প্রতিদ্বন্দ্বীর জন্য সমবেদনা ঝরেছে ফ্রেজার-প্রাইসের কণ্ঠেও, ‘ফেলিক্সের যা হলো সেটা আসলেই দুর্ভাগ্যজনক। আমি খুবই দুঃখিত, আশা করি সে দ্রুত সেরে উঠবে।’

অথচ এই ফেলিক্সকেই হাতছানি দিচ্ছিল বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে নয়টি সোনার অবিশ্বাস্য এক রেকর্ড। কিন্তু আততায়ীর মতো হানা দিয়ে হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট সেটা আর হতে দিল না। ‘ডাবল’ জিতে উল্টো ইতিহাসে ঢুকে গেলেন ফ্রেজার-প্রাইস। আর ইতিহাস তো শেষমেশ বিজয়ীদেরই মনে রাখে! এএফপি।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.