করোনা কালেও মেলেনি নারীর মুক্তি

শাহাদাত হোসেন:

ছবিটা দেখেছিলাম কলকাতার অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখার্জীর ওয়ালে কয়েকদিন আগে। কিছুই মনে করিনি তখন, কারণ এরকমটা তো হরহামেশাই ঘটে!

নিত্যদিনের মতোই ফেসবুকে কিছু সময় মুখ গুঁজে পড়ে থাকা, সুবোধের সাথে সময় কাটানো, রাতের খাবার, তারপর মায়ের সঙ্গে ও দোস্তের সংগে ফোনালাপ, নিউজ দেখা, পড়শোনা সবই চলছিলো। প্রতিক্রিয়া শুরু হলো ঘুমোতে যাওয়ার পর থেকে।
সুবোধ ঘুমিয়ে গেলো রাত ২ টায়, তারপর আমার পালা।

কিন্তু ভোর ৫.৩০ টা বাজলেও সেইরাতে আর ঘুমোইনি আমি। ঘুমোতে পারিনি।
এমনিতেই আমি ইনসমনিয়ায় ভুগি প্রায় অনেক বছর
তবুও.. এপাশ ওপাশ করতে করতে গান শুনে, গান গেয়ে বা সঙ্গী কর্তৃক মাথায় হাত বুলানো পেয়ে একসময় ঠিক ঘুমিয়ে পড়ি।
কিন্তু আজ আর কোন থেরাপিই কাজে আসেনি, যখনই চোখ দুটো শিথিল করেছি তখনই এই ছবিটাসহ গত কয়েক বছরে নারীর সাথে ঘটে যাওয়া এরকম বীভৎস কিছু দৃশ্য চোখে ভেসে আসছে। আর..
পাকস্থলী থেকে যেনো মোচড় দিয়ে সবকিছু বেরিয়ে আসতে চাইছে, আমি জানি না এটাকেই ভয় বলে কিনা।

আমি শুধু জানি এই পৃথিবীতে পুরুষের ভয় কেবল মহামারী সৃষ্টিকারী রোগজীবাণুতে, কিন্তু নারীর ভয় গর্ভাবস্থা থেকে পৃথিবীতে আসার পর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত।

ফেটাস অবস্থায় গুলিবিদ্ধ, তারপর ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশু থেকে শুরু করে সেক্সাজেনারিয়ান…কারোরই মুক্তি নেই।
নানা বয়সে, নানা ক্যাটাগরিতে, নানাজনের কাছে, নানা রকমভাবে নারীরা ভীত।

আজ যখন গোটা পৃথিবী বৈশ্বিক এক মহামারীতে পর্যুদস্ত তখনও নারীর নির্যাতিত হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকার বীভৎস এই দৃশ্য।
মুখে রয়েছে সংক্রমণ হতে সুরক্ষা পাবার কথিত মাস্ক বা মুখোশ। মাস্ক নয়, বরং পুরুষই তাকে সংক্রমণ থেকে একেবারে মুক্তি দিয়ে দিয়েছে।

সে রাতে আর ঘুম হয়নি। রাত্রি কেটে গেছে এসব ভেবেই।
এরপর একসময় মহামারী কাটবে, জীবনও কেটে যাবে, কিন্তু ভয় শেষ হবে না।

আমার মতো ভীতু নয় কেবল, বরং পৃথিবীতে কোন মেয়ে শিশুই আর জন্ম না নিক, বন্ধ হয়ে যাক সৃষ্টির সকল পথ,
এভাবেই মুখ থুবড়ে পড়ে থাকুক মানুষ নামক সেরা প্রজাতি হোমো স্যাপিয়েন্স।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.