এই সময়ে ভালো থাকার, ভালো রাখার কিছু উপায়

রেজভীনা পারভিন:

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। যাকে ইংরেজিতে বলা হচ্ছে, কোয়ারেন্টাইন। মানে একটা নির্দ্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে এবং দৈনন্দিন কিছু নিয়ম মেনে চলে নিজেকে এবং আশপাশের সবাইকে ভাইরাসমুক্ত করার জন্য বিশেষভাবে বলা হচ্ছে। তো, এটা করতে গিয়ে আজ অনেকদিন হয়ে গেল আমরা গৃহবন্দী হয়ে পড়েছি। অস্থিরতা, আতংক মিলে আমরা আসলে খুব একটা ভালো নই কেউ। এরপরও ভালো থাকার চেষ্টা করছি নানাজন নানাভাবে। তাছাড়া পরিবারের সবার এসময়টাতে পুষ্টিকর খাবারের ওপরও জোর দিতে হচ্ছে। একদিকে মানসিক, অন্যদিকে শারীরিক, এই দুটো দিকে তাল সামলাতে গিয়ে আমরা কিছুটা দিশেহারাও বোধ করছি সত্যিকার অর্থে।

এখানে কিছু উপায়ের কথা বললাম, মিলিয়ে দেখুন তো, যদি কাজে আসে!

১. বাড়ির সামনে ভ্যানে টাটকা সবজি পাওয়া যাচ্ছে, তাই ঘরের পুরুষ সদস্যটিকে বার বার রাস্তায় পাঠিয়ে টাটকা সবজি না কিনে একবার কিনে প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণ খান।

২. ঘরে অনেক খাবার মজুদ আছে, তাই মুখরোচক এটা-ওটা না খেয়ে কেবলমাত্র পুষ্টিকর খাবার খেয়ে বাঁচুন। মনে রাখবেন অনেক মানুষ প্রয়োজন অনুযায়ী খাবার পাচ্ছে না। তাদের কথাটা একবার স্মরণ করুন। আবার আজ বেশি মজুদ আছে তাই বেশি খাবেন, কাল কী হবে তা তো জানেন না, তাই পরিবারের সবাইকে কৃচ্ছ্রতাসাধনে অভ্যস্ত করুন, তাহলে যেকোনো পরিস্থিতিতে খাপখাওয়াতে সুবিধা হবে।

৩. খাবারের ম্যাক্সিমাম ব্যবহার নিশ্চিত করুন। যেমন মুড়ি নরম হয়ে গেছে ফেলে না দিয়ে ভিজিয়ে ঘরে কলা, বা দুধ থাকলে মেখে খেয়ে নিন, ওটস পুরোনো হয়ে থাকলে হালকা ধুয়ে নুডলস এর মতো রাঁধুন, টমেটো টক বানিয়ে রাখুন, ভাতের সাথে একটু একটু করে খান।

৪. বাড়ির ছোট শিশুকে বিভিন্ন ক্রিয়েটিভ কাজে ব্যস্ত রাখুন। আমাদের শিশুকালে বাবা গল্প পড়ে শুনাতেন, বিষয়টি আমরা ভাইবোনেরা খুব উপভোগ করতাম। এখন যেহেতু বাড়িতেই থাকছেন, তাই শিশুদেরকে গল্প পড়ে শোনান। ওদেরকে না দেয়া সময়গুলো এখন মিটিয়ে দিন, ভালো লাগবে।

৫. পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের দিকে খেয়াল রাখুন, আপনার মনে হতে পারে বয়স্করা তো সবসময় ঘরেই থাকে, তাদের এই পরিস্থিতিতে খারাপ লাগার কী আছে? কিনতু একটু ভেবে দেখুন, প্রতিদিন উনাদের ছেলেমেয়ে, আত্মীয়-স্বজন কেউ না কেউ বাড়িতে দেখা করতে আসতেন, এতে করে উনাদের মন ভালো থাকতো। তাই উনাদেরকে মাঝে মাঝে ফোনে ছেলেমেয়ে, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে কথা বলিয়ে দিন। সুযোগ থাকলে ভিডিও কলের ব্যবস্থা করতে পারেন। উনাদের পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করুন। মনে রাখবেন, করোনায় বয়স্ক লোক ঝুঁকিতে এই তথ্য বার বার মিডিয়ায় প্রচার হওয়ায় উনারাও তা শুনছেন এবং স্বভাবতই ভয়াবহ মানসিক চাপে আছেন। তাই উনাদের মানসিক প্রশান্তিতে রাখুন। ব্রিদিং প্রাকটিস করাতে পারেন।

৬. যাদের মা-বাবা বাড়িতে একা আছেন, তাদেরকে দিনে কয়েকবার কথা বলে খোঁজ খবর নেন এবং প্রয়জনীয় সামগ্রী বাড়িতে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করুন। যারা ভাইবোন বেশি, তারা একই সাথে সবাই ফোন না করে, ফোন করার জন্য সারাদিনের একটা রুটিন করে নিতে পারেন, এতে করে দীর্ঘ সময় কখনও গ্যাপ হবে না, আবার অল্পসময়ের ব্যবধানে বার বার ফোন ধরে ধরেও হাঁপিয়ে উঠবেন না।

৭. কারও বাড়িতে গিয়ে এসময় খোঁজ খবর নেয়া সম্ভব নয়, তবে যারা বিপদগ্রস্ত বা অন্যান্য অসুস্থতায় আছেন, তাদের ফোন করে সাহস দেন, পরামর্শ দেন, তাতে কিছুটা হলেও তারা মনোবল পাবেন।

৮. ঘরের পরিবেশ যতোটা পারেন হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করুন। গানবাজনার শখ থাকলে এসময়টাতে সাংস্কৃতিক চর্চা করতে পারেন। যারা গান গাইতে পারেন তারা প্রতিদিন নিয়ম করে গান গাইতে পারেন। গান শুনলে সবার মন ভালো লাগবে, আমি নিশ্চিত।

৯. বাচ্চাদের সাথে ঘরে বসে খেলা যায় এমন খেলাগুলোর চর্চা করতে পারেন যেমন – লুডু, কেরাম, দাবা, মনোপলি, চোর পুলিশ, কাটাকাটি, ফুল ফল, মাছ, দেশের নাম ইত্যাদি।

১০. মেডিটেশন, ইয়োগা, ব্যায়াম এগুলোর ওপরও সবাই জোর দিচ্ছেন। আপনিও বাদ যাবেন কেন?

১১. ঘরের কাজে সহায়তা করুন, এবং সবাই মিলেমিশে কাজটা করুন।

১২. সবশেষে বলবো, যার যার ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী প্রার্থনার কোনো বিকল্প নাই। এতে মন শান্ত থাকে।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.