এই সময়ে মানসিক সুস্থতা সবচে বেশি প্রয়োজন

শাহরিয়া দিনা:

ছুটি বাড়লো আবারও ১৪ তারিখ পর্যন্ত, পরের দিন তো পহেলা বৈশাখের ছুটি অর্থাৎ ১৫ তারিখ অব্দি। এ মাসের ২৫ বা ২৬ তারিখ রোজা শুরু, বুঝতেই পারছি সবাই এই বন্দী সময়টা দীর্ঘ হতে যাচ্ছে। রোগমুক্ত থাকতে অনেক বিশেষজ্ঞ অনেক কথা বলছেন, বলবেন, তা শুনেন, মানেন, ফরোয়ার্ড করেন, যা ইচ্ছে তাই করেন। তবে আমার যেটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় এই সময়, সেটা সবার মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখা।

কেন এটা মনে করছি? ব্যক্তিগতভাবে আমি খুবই সংবেদনশীল মানুষ। আমার মন ভালো থাকলে শরীর ভালো থাকে। আমার খুব প্রিয় কেউ এলে ১০৩ ডিগ্রি জ্বর নিয়েও ১০ আইটেম রান্না করে গল্প করতে পারবো অসুখ ভুলে গিয়ে। আবার খুব ছোট ব্যাপারে মন খারাপ হলে আমার বিছানা থেকে উঠার শক্তিও থাকে না। ঘুমের ওষুধেও ঘুম আসে না।

শাহরিয়া দিনা

তো যা বলছিলাম, এতোদিন এক জায়গায় একটানা থাকাটা খুব সহজসাধ্য কোন ব্যাপার না। একঘেঁয়েমি চলে আসতে বাধ্য। প্রথমে ছিল ছুটির আমেজ। আমরা বাড়ি গেলাম বা বাসায় থাকা শুরু করলাম। প্রিয়জনদের সাথে গল্প করলাম। নতুন নতুন রেসিপি ট্রাই করলাম, আপলোড দিলাম, পুরনো অ্যালবাম ঘেঁটে স্মৃতি শেয়ার করলাম। আস্তে-ধীরে সব ভাণ্ডার ফুরিয়ে গেছে, এখন বিরক্তি আসার শুরু।

সাগরের ঠিক মাঝখানে আমরা। পিছনেরটুকু পার হতে যে উৎসাহ উদ্দীপনা ছিল, এখন আর তা থাকবে না স্বাভাবিক। ক্লান্তি আসবে, অনিশ্চয়তা ভর করবে। তবু টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। সাঁতারের সময়ে তো আর গল্প বলা যায় না। আমরা বরং ধৈর্য্য নিয়ে আশা করতে পারি একদিন তীরে পৌঁছে ভরা পূর্ণিমায় মাদুর বিছিয়ে গল্প শোনাবো কীভাবে সাঁতরে পার হয়েছিলাম সেই মৃত্যুর সমুদ্র।

এই সময়ে পারিবারিক সহিংসতা বাড়ছে, যা বিভিন্ন রিপোর্টে আসছে এবং এটাই হবার কথা। বিশেষত বাচ্চাদের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে যেন অহেতুক তারা আমাদের মেজাজ খারাপের বলির পাঁঠা না হয়। বাপ-মা ঝগড়া করলো, বাপ এসে রাগ হলো, মা-ও চিল্লাচিল্লি করলো, অর্থাৎ খেয়েছে এক জায়গায়, বমি করে উগড়ে দেবে অন্য জায়গায়। অবশ্য এটা আমাদের জাতিগত বৈশিষ্ট্য। বসের ঝাড়ি খেয়ে পিয়নের উপর মেজাজ দেখানো, বউয়ের ঝাড়ি খেয়ে রিক্সাওয়ালাকে চড়-থাপ্পড়…তো এই সময় এদিকটায় নজর দেয়া জরুরি।

এখন হাতের মুঠোয় পৃথিবী চাইলে যোগাযোগ করা যায় যে কারো সাথে। এর উপকারিতা যেমন, অপব্যবহারে ক্ষতিকারক দিকও আছে তেমন। সম্পর্ক ভাঙ্গা-গড়ায় আজকাল সোশ্যাল মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সময়টা মোটামুটি অখণ্ড অবসরের। সুতরাং এই অবসরে কৌতুহলেও অনেকের সাথে পরিচিত হচ্ছেন। কথা বলছেন। সম্পর্কে জড়াচ্ছেন। কোন নতুন সম্পর্কে জড়াচ্ছেন, তবে তার ভবিষ্যৎ ইম্প্যাক্ট কী বর্তমান সম্পর্কের উপর তার ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাব কতখানি ভেবে নিন।

বরং সময় এসেছে একান্ত নিজেকে নিয়ে ভাবনার। চলে যাবেন চুক্তিতে সই করে পৃথিবীতে এসেছিলেন। স্বল্প সময়ের এই জার্নিতে সহযাত্রীদের প্রতি কেমন ছিল আচরণ? কারো দুঃখকষ্টের ভাগীদার হতে না পারলেও কারো দুঃখের কারণ হয়েছিলেন কি? কিংবা কারো হাসিমুখের কারণ? ভাবতে থাকুন।

এক অনুজীবের ভয়ে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠজীব গৃহবন্দী। তাহলে আপনি কত বড় জীব বুঝলেনই তো, সুতরাং অহংকার নয়, নত হই, অস্থিরতা নয়, স্থির হই, ক্ষমা করে দেই এবং ক্ষমা প্রার্থনা করি। প্রতিশোধ নিতে পারিনি বলে আক্ষেপ না রাখি, প্রকৃতি ছাড়ে না কাউকে প্রমাণ তো পেলেনই।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.