তা সে যতোই কালো হোক….

Nandita Das
অভিনেত্রী নন্দিতা দাস

উইমেন চ্যাপ্টার ডেস্ক: ভারত তথা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এখন পর্যন্ত মেয়েদের গায়ের রং একটা ফ্যাক্টর বটে! ভারত-বাংলাদেশে এটা আরও মারাত্মক। আর এর সুযোগ নিয়ে লুটেপুটে খাচ্ছে রং ফর্সাকারী ক্রিম কোম্পানিগুলো। এবার তাদের বাড়া ভাতে ছাই দিতে তোড়জোর চলছে। ভারতে শুরু হয়েছে ‘ডার্ক ইজ বিউটিফুল’ ক্যাম্পেইন। এর প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে এসব কোম্পানির পণ্যের চাহিদা চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া। আর এই ক্যাম্পেইনে নেমেছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী নন্দিতা দাস। তামাটে গায়ের রং নিয়েও বেশ দাপটের সাথেই তথাকথিত ফর্সা রংয়ের অভিনেত্রীদের বাজার যিনি নষ্ট করে দিয়েছেন বহু আগেই।

এক সাক্ষাতকারে নন্দিতা বলেছিলেন, ভারতীয়রা খুবই বর্ণবাদী। ফর্সা রং নাকি আদর্শ এমন একটি ভাবনা সমাজে এখন পর্যন্ত প্রাধান্য বিস্তার করে চলেছে। ‘তোমাকে কেমন পাংশে লাগছে, তুমি কি অসুস্থ?’ এমন কথা হরহামেশাই শুনতে হয় খোদ নন্দিতা দাসকেও। তিনি জানান, গতবছর একটি স্বনামধন্য পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে তার একটি ছবি ঘষে-মেজে বেশ উজ্জ্বল করে ছাপা হয়েছিল। তিনি ওই পত্রিকার সম্পাদকের কাছে অভিযোগ করার পর তিনি ক্ষমা চেয়ে ছবিটি পাল্টে দিয়েছিলেন। নন্দিতা বলেন, ছবিটি যিনি সম্পাদনা করেছিলেন, তিনি হয়তো ভেবেছিলেন যে, তিনি আমার খুবই উপকার করেছেন রং উজ্জল করে।

ভারতে ১৯৭৮ সালে ইউনিলিভারের পণ্য ফেয়ার এন্ড লাভলি ক্রিম বাজারে আসার পর থেকেই ফর্সা রং নিয়ে শুরু হয় একধরনের আদিখ্যেতা। এর পথ ধরেই বাজারে আসে, হোয়াইটেনিং ফেস ক্লিনজার, শাওয়ার জেল, এমনকি যৌনাঙ্গের চারপাশের চামড়া উজ্জ্বল করার ক্রিমও আসে বাজারে।

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১০ সালে ভারতের রং ফর্সাকারী ক্রিমের মার্কেট ছিল ৪৩ কোটি ২০ লাখ ডলারের, প্রতি বছর শতকরা ১৮ ভাগ হারে এটি বাড়ছে। গত বছর ভারতীয়রা ২৩৩ টন রং ফর্সাকারী পণ্য কিনেছেন, কোকা কোলার চেয়ে বেশি টাকা ঢেলেছেন এই ক্রিমের পেছনে।

বিশেষত ক্রিকেট খেলোয়ার এবং বলিউড তারকারাই এই ক্রিমের নিয়মিত মডেল। নন্দিতা দাস এখন এই প্রবণতার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে যাচ্ছেন। তিনি ডার্ক ইজ বিউটিফুল ক্যাম্পেইনকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন। এই ক্যাম্পেইন মূলত মানুষের গায়ের রং দিয়ে যে সফলতা ও সৌন্দর্য নিশ্চিত হয় না, সেটাই তুলে ধরতে যাচ্ছে।

নন্দিতা দাস বলেন, ‘আমি চাই, মানুষ তার গায়ের রং নিয়ে আরামবোধ করুন এবং এটা বিশ্বাস করুক যে, গায়ের রংয়ের চেয়েও মানুষের জীবনে আরও অনেক কিছু আছে’।

এই উপমহাদেশের জাত-পাত, বর্ণ প্রথা ও সংস্কৃতির কারণে গায়ের রং একটা বিশাল ভূমিকা রাখলেও, বর্তমানের কারণগুলো আগে খুঁজে বের করতে হবে।ভারতীয়রা খুবই বর্ণবাদী। এটা একেবারে গভীরে প্রোথিত। তাছাড়া ম্যাগিজন, বিলবোর্ড এবং টেলিভিশন বিজ্ঞাপনওয়ালাদেরও একটা চাপ রয়েছে অনবরত। এসব বিজ্ঞাপনে গায়ের ফর্সা রংটাকেই আদর্শ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।

নন্দিতা জানান, তিনিও মাঝে মাঝেই অনেককিছু মুখোমুখি হন। যেমন, তিনি যখন উচ্চবিত্ত, শিক্ষিত নারীর ভূমিকায় অভিনয় করতে যান, তখন সিনেমার পরিচালক থেকে শুরু করে মেকআপ এর লোকজনও তার গায়ের রং উজ্জ্বল করার চেষ্টায় থাকেন। তারা সবসময়ই বলেন, চিন্তা করবেন না, আমরা আপনার রং উজ্জ্বল করে দেবো। আর আমরা এটা খুব ভাল পারি। নন্দিতার মতে, এই ধরনের মনমানসিকতা এটাই প্রমাণ করে যে, গায়ের রং ফর্সা হলেই কেবল সমাজে শিক্ষিত ও সফল হওয়া যায়।

শুধু নারীদের বেলায়ই বা কেন, পুরুষরাও পিছিয়ে নেই রং ফর্সা করার এই যুগে। ২০০৫ সালে কসমেটিকস কোম্পানি ইমামি ফেয়ার এন্ড হ্যান্ডসাম ক্রিম বাজারে আনে পুরুষদের জন্য। আর এই পণ্যের মডেল হয়েছিলেন বলিউড তারকা শাহরুখ খান। ডার্ক ইজ বিউটিফুল ক্যাম্পেইন এই বিজ্ঞাপনটি প্রত্যাহার করে নেয়ার চেষ্টা করছে। ওই বিজ্ঞাপনে শাহরুখ বলেছিলেন, ‘সফল হতে গেলে তোমাকে উজ্জ্বল হতে হবে’। ‘এই মানুষগুলোর কি কোনরকম নৈতিকতা নেই’? প্রশ্ন নন্দিতার।‘আপনি তো আর শিশু নন, আপনি জানেন, এর প্রভাব কি ও কতটুকু, তারপরও আপনি বলে যাচ্ছেন, শক্ত পরিশ্রমের কথা ভুলে যান, সবই নির্ভর করছে গায়ের রংয়ের ওপর’।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.