উইমেন চ্যাপ্টার ডেস্ক: মিশরের রাজধানী কায়রোসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে নতুন করে সংঘর্ষের খবর আসছে। এসব সংঘর্ষে অন্তত ৮০জন নিহত হয়েছে বলে জানাচ্ছে দেশটির সরকার। গত বুধবার থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনায় তুমুল উত্তেজনা বিরাজ করছে।
বিবিসি জানায়, মিশরে জারি হওয়া জরুরি অবস্থা উপেক্ষা করে শুক্রবার রাজপথে নেমে আসে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মুরসির দল মুসলিম ব্রাদারহুডের হাজার হাজার কর্মী-সমর্থক।
বর্তমানে রাজধানী কায়রোর কেন্দ্রে অবস্থিত ফতেহ মসজিদকে ঘিরে টানটান উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।
শুক্রবার জুমার নামাজের পর নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ শুরু হলে নারী-পুরুষ সহ এক হাজারেরও বেশি মুসলিম ব্রাদারহুডের সমর্থক ঐ মসজিদটির ভেতর আশ্রয় নিয়েছিল। পুলিশ ও সৈন্যদের হুঁশিয়ারির পর অনেকে মসজিদ থেকে বেরিয়ে গেলেও, একশরও বেশি লোক এখান থেকে বের হতে রাজী হচ্ছেনা। চেয়ার, টেবিলসহ নানা ধরনের আসবাবপত্র দিয়ে তারা মসজিদের ঢোকার সমস্ত পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে তাদের নিরাপদে চলে যাওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলেও অবস্থানকারীরা বিশ্বাস করছেন না।
জানা গেছে, মসজিদের ভেতর অন্তত দুটো মৃতদেহ রয়েছে। শুক্রবার মসজিদের ভেতর পুলিশের কাঁদানে গ্যাসে আহত একজন মহিলা মারা গেছেন। অন্যজন গুলিতে নিহত হন।
কিন্তু বিবিসির আরবি বিভাগ ফতেহ মসজিদের ভেতরে অন্তত দুজনের সাথে কথা বলতে পেরেছে। তারা জানিয়েছেন, মানুষজন তাদের প্রাণের ভয়ে ভীত।
এদিকে, কায়রোর বাইরে আলেকজান্দ্রিয়া, ইসমাইলিয়া, দামিয়েত্তা সহ অন্যান্য শহরেও নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটেছে ।
আলেকজান্দ্রিয়ায় মুসলিম ব্রাদারহুডের একজন সমর্থক বিক্ষোভের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানকে হোসনি মোবারকের সময়কালের সাথে তুলনা করে বলেন,
‘দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী হুসনি মোবারকের সময়কালে যে আচরণ করেছিল এখন ঠিক তেমনটাই করছে। তারা চার্চে আগুন লাগাচ্ছে আর দোষারোপ করছে ব্রাদারহুডকে। যদি ব্রাদারহুডের কাছে অস্ত্র থাকতো তাহলে হয়তো আরো বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটতো’।
সেনা অভিযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিনই বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছে মুসলিম ব্রাদারহুড।
এদিকে মিশরের সেনাবাহিনীর নেতৃত্বকে সমর্থন জানিয়েছে সৌদি আরবের বাদশাহ আবদুল্লাহ।
মিশরকে ধ্বংসের বিরুদ্ধে দাড়াতে তিনি আরব দেশের নেতাদের এগিয়ে আসারও আহবান জানিয়েছেন। অপরদিকে নিহতদের স্মরণে জেরুজালেমে বিক্ষোভ করেছে হামাস।
বিবিসির মধ্যপ্রাচ্য সম্পাদক জেরেমি বোয়েন রামসেস স্কয়ার থেকে বলেন, এলাকায় একটি পুলিশ থানায় হামলা চালানো হলে সংঘর্ষের সূত্রপাত।
স্কয়ারে টিয়ার গ্যাস এবং স্বয়ংক্রিয় রাইফেলের গুলি চালানো হয়, এবং পাশে একটি মসজিদ থেকে জেরেমি বোয়েন প্রচুর সংখ্যক আহত লোককে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসতে দেখতে পান। পরিস্থিতিকে তিনি উত্তেজনাপূর্ণ বলে বর্ণনা করেছেন।
অন্যান্য সংবাদদাতারা বলেন, নীল নদের তীরে অবস্থিত গার্ডেন সিটি থেকে গুলির আওয়াজ পাওয়া গেছে, আর নদের তীরে ফোর সিজনস্ হোটেল থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা গেছে।
বুধবার কায়রোসহ অন্যান্য শহরে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মুরসির সমর্থকদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে ছয়শোর বেশি মানুষ নিহত হবার প্রতিবাদে মুসলিম ব্রাদারহুড দেশব্যাপী বিক্ষোভের আহ্বান করে।