অগস্ত্যযাত্রা

অগস্ত্যযাত্রা

সুমু হক

এই যে যেরকম অদ্ভুত কৌতূহলে
মানুষ আগুনেও হাত দিয়ে দেখে একেক সময়,
দেখতে থাকে কতটা যন্ত্রণা,
কতটা দহন তাকে সব ভুলিয়ে দেয়,
কতটা দহন যথেষ্টর একটু কম,
শুধু স্মৃতিটুকু খুঁচিয়ে দিতে বাঁচিয়ে রাখে।
সেইরকমই আমিও বাঁচি প্রতিদিন।
নুন-চাল-রুটির হিসেব,
কিংবা যন্ত্রণার এককে সব বিস্মৃত হলেও
কেউ কেউ ভোলে না অপমানগুলো।
ভোলে না আবেগ নিয়ে রাশিয়ান রুলেট খেলা।

এইবারকার বুলেটে যাবে ভালোবাসা,
পরেরটায় অপমান,
তারপর যাবে লাঞ্ছনা,
আবার খানিকটা বা প্রেমের অভিনয়।
ফ্লার্ট করাটাও শিল্প একরকম,
জানতে না বুঝি! মেয়ে তুমি বড্ড সাধারণ!
তবু যদি বিদ্যেবুদ্ধি কিছু থাকতো পেটে,
দুটো- চারটে ডিগ্রি- পেডিগ্রী
একটু ইন্টেলেকচুয়াল গ্ল্যামার।

তাই বলে খুব বেশি ঝাঁ চকচকে গ্ল্যামারেও চলবে না আবার,
একই সাথে হতে হবে তাকে কালিদাসের নায়িকার মত অদ্বিতীয়া।
একমেবাদ্বিতীয়ম!
বুঝলে মেয়ে!
তোমার সাথে ফ্লার্ট করা যায়,
করা যায় খানিকটা শরীরী প্রেমের ওয়ার্ম আপ।
তার বেশি দাবি করার মতো এমনকি দেখলে আয়নায় বলতো!
“কী বললে?
বলেছি তোমাকে দেখতে কোন এক ক্লাসিক্যাল নায়িকার মতো!”
কবে বলো তো?
আসলে, সেদিন জানো তো, আমার জন্মদিনের সন্ধ্যেয়,
বন্ধুরা সব এসেছিলো, এনেছিল এখানকার ভেলভেটের মতো স্মুদ সব বোর্দো,
খানিকটা বেশিই বোধহয় হয়ে গেছিলো!
সেদিন যা কিছু বলেছি, তুমি খুব সিরিয়াসলি নাওনি তো!”
এই জন্যেই জানো তো!
তোমার মতো মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব রাখা অসম্ভব!
বড্ড বেশি নিডি তোমরা!”

সুমু হক

তারপর থেকে আমার আর বুঝতে ভুল হয়নি কোনদিন।
আয়নায় মুখ দেখা ছেড়েছি অনেকদিনই।
দেখলেও চোখের ঘোলা দৃষ্টির কুয়াশার বাইরে খুব বেশি যে কিছু দেখতে পাই তা নয়।
হয়তো বা ত্বকে জমেছে শ্যাঁওলা,
দীর্ঘদিন কোন মানুষকে না ছোঁয়া ত্বকের আস্তরণে
কড়ার মত করে আস্তর হয়ে জমেছে সময়ের সুতোগুলো।
দেখতে চেয়েছিলাম,
ওই আস্তর ভেদ করে আমায় আজও কিছু ছুঁয়ে যায় কিনা।
দেখলাম, আগুনও গ্ল্যামার বোঝে।
আমায় সে অবজ্ঞায় রেখে চলে গেলো অন্যদিকে।

আজ পুরোনো চিঠি,
ভুল হলো, চিঠি ঠিক নয়,
ওই ইমেইলের প্রিন্ট আউট,
কিছু বই আর ওদের প্রথম পাতায় লেখা উপহারবার্তা,
কিছু শাড়ি, যার বুনোটকে এককালে আমি
তাঁতের সুতোর চেয়ে অনেক বেশি কিছু ভাবতাম,
কিছু কাঁচের চুরি, কিছু কড়ির গয়না,
সব ধীরে ধীরে পুড়ে শেষ হলো এক সময়।
আমি সেই অঙ্গার সমস্ত দেহে,
আমার সমস্ত আত্মায় মেখে নিয়ে
চললাম স্নানে।

কালিদাস একালে লিখতে আসবেন না জানি।
কিন্তু এই অন্ধকার সময়েও
কেউ তো নিশ্চয়ই মুখে মুখে গেয়ে যাবে,
মনে রেখে যাবে আমার অগস্ত্যযাত্রার কাহিনী!

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.