শাহিনুর আক্তার:
একটা ভিডিও দেখলাম, দুজন মেয়ে রিকশায় পাশাপাশি বসা।
রিকশা চলছে, একজন সিগারেট ফুঁকছে।।
ভিডিওটি শখ করে করা না।
রিকশার কাছাকাছি অস্পষ্ট দেখা যায় না, সম্ভবত মোটর সাইকেলে, লোকটা ভিডিও ধারণ করছে, আর বকাঝকা করছে।
মেয়েটাকে বলছে কত বড় অসভ্য হলে এটা করতে পারছে!
একটা সরল স্বীকারোক্তি দিয়ে রাখি, সিগারেট ফুঁকতে দেখা একটা নারীকে এ অসভ্য শব্দটা নারীও নারীকে বলে।
এক্ষেত্রে আমরা নারীরাও যে মানুষ হয়ে উঠিনি তা পণ্যদাসত্ব থেকে বের হতে না পারাটা একটা প্রমাণ রেখে যায়।
তবে ভিডিওটা যেহেতু আপনি নিয়েছেন তাই আপনার কাছে আমার প্রশ্ন ও জিজ্ঞাসা, সিগারেট ফু্ঁকা কয়টা পুরুষের ভিডিও ধারণ করে অসভ্য বলে ছেড়ে দিয়েছেন????
(মা বলে, গালি বড় অভদ্র ব্যাপার তাই বাকিটুকুন দেখতে যাইনি, গালি শোনবার মতন অরুচিশীল অন্তত আমি নই)
ভাই থামেন, কিছু কইলেই তো নারীবাদী ট্যাগ ধরায়ে দেন, আর ধর্মের দুয়ারে দাঁড় করান।
না ভাই আপনি বা আপনাদেরকে পুরুষ কিংবা নারীবিদ্বেষী বলার জন্যও আসিনি।
যতদূর সম্ভব আমি নারী, পুরুষ দুয়ারের চেয়ে বেশি মানুষের দুয়ারে দৌড়াতে চাই। নিজেকেও সেটা ভাবি।
আর ধর্ম খুব বড় বিষয়, ধর্মকে আলাদা করে, সময় হলেই সমাজে হেঁটে আসি। এবার বলি, আমি বইয়ে পড়েছি, বিভিন্ন বিলবোর্ড, হ্যান্ডবোর্ড, পোস্টার,লিফলেট,মুভির শুরুতে, এমনকি সিগারেটের প্যাকেটে লিখা
“ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক”
>ধূমপান ক্যান্সারের কারণ
>ধূমপান হৃদরোগের কারণ
>ধূমপান ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ
>ধূমপান করলে হাঁপানির মতো জটিল রোগে ভুগতে হয়।
ওও ভাইজান, দেখেন ভাই আপনাকে শুধু ভাই কিংবা শুধু জান ডেকে বিভ্রান্তে ফেলিনি, তাই ভাইজান ডাকলাম।
ওওও ভাইজান, কোথাও তো লিখা নেই, পাইনি, পড়িনি যে
>”ধূমপান নারীকে অসভ্য করার কারণ”
>ধূমপান নারী স্বাস্থ্যের অবনতি করে।
>ধূমপান নারী ক্যান্সারের কারণ।
—গবেষণায় নতুন কিছু বললে ভিন্ন কথা।
আর আপনিই গবেষকের খাতায় নাম লিখালেন কিনা সেটাও ভাববার বিষয়।
কিন্তু আমার গবেষণা যা কয়, তা হলো এসব আমাদের মস্তিষ্ক ও চোখের চর্চা, মানসিক দৃষ্টিভঙ্গি।
যুগ যুগ ধরে আমরা স্পষ্ট দেখে এসেছি, সিগারেট পুরুষের খাবার।
কমবয়সী হোক, বেশি বয়সের হোক, পুরুষ হলে এ কোন চোখে পড়বার মতন না।
তেমন বিতর্ক/বিদ্বেষ নারী পোশাক,নারী সিদ্ধান্ত কিংবা নারীর চলাফেরা নিয়েও আছে।
একবার বলে রাখি ফ্যাশন করা আর খারাপ হওয়া এক জিনিস না।
জীবন যার সিদ্ধান্ত তার, এমনকি পুরুষ যৌনকর্মীও ব্যাটা ছেলে বলে বাহ্বা পায়, ধর্ষক পায় পদ ও পদক।
নারী গার্মেন্টস কর্মী উপাধি পায় জিনাকারী, যৌনকর্মীর উপহাস মিলে বেশ্যা শব্দে।
কোথায় যেনো দেখেছিলাম “আপনার মেয়েকে বলবেন না বাহিরে না আসতে, ছেলে সন্তানকে সঠিক শিক্ষা দিন”
এই-যে আমার কথায়ও আপনি যে তর্ক, বিতর্ক তুলবেন না, বিদ্বেষী হবেন না, তার স্ট্যাম্প আমি দিতে পারছি না!
কিন্তু,
কই কোন লাভ আছে?
কোন সমাধান হবে?
তবু শিখেছি, “মেয়ে তুমি কথা বলো, চিল্লাও”
বলতে তো হবেই।
তর্কে সমাধান নেই, বিতর্কে যুক্তি খণ্ডাতে পারি,
তবু বলছি, সমাধান হবে না, আবারও বলছি হবে না, তাই চলুন একবার নিজেকে মানুষ করে তুলবার সিদ্ধান্ত নিই, একবার নিজেকে মানুষ দাবি করি, নিজেকে মানুষ করে না হয় ধর্মতর্ক তুলি।
যদি মানুষ হতেন, হতাম তবে ভিডিও না করে মানবকর্মী কিংবা হয়ে উঠতেন পরিবেশবান্ধব পরিবেশকর্মী।
একবার বলি চলুন, “ধূমপান মানুষ, কুকুর উভয়ের জন্য ক্ষতিকারক, মৃত্যুও ঘটাতে পারে”
ধূমপান শুধু নারীকে অসভ্য করে তুলে না, পুুরুষ, পরিবেশ, পৃথিবী এ -তিনকেই।
এরপর যদি আপনি আমাকে এসে বলেন আমি আমার বাপের টেকায় খাই, তোর কী?
এইডা আমার একান্ত ব্যক্তিগত।
তাইলে আমিও আপনাকে/আপনাদেরকে একবার মনে করায়ে দেই, “ওই মেয়ে রিকশায় সিগারেট ফুঁকে না নাচে, তা তার ব্যক্তিগত। আপনার পিতা,পারলে আপনার পিতামহের কী!
অবশেষে পৃথিবী হোক মানুষের।
মানুষ-মানুষ সম্পর্কে গড়ে উঠুক বসুন্ধরা।
>বিদ্বেষকে পশ্চাতে রেখে একবার বলি, “সাদা সাদাই, কালো কালোই”
-যা খারাপ তা সকলের জন্যই ক্ষতিকারক, মুষ্টিমেয় কারোর জন্য নয় কিংবা নির্দিষ্ট কোন সম্প্রদায়, জাতি বা লিঙ্গের জন্য।
#দেখা হবে মানুষের মঞ্চে।
শাহিনুর আক্তার
ছাত্রী