কিটো জ্বরে ভুগছে মানুষ!

নাসরীন রহমান:

ইদানিং ফেসবুকের নিউজফিডে চোখ রাখলে হামেশাই একটি বিষয় নজর কাড়ছে; আপনি
চান বা না চান কিটো ডায়েটের উপদেশ সম্বিলিত ওই লিঙ্ক আপনার চোখের সামনে
আসবেই আসবে!

হাস্যোজ্জ্বল ডাক্তারের মূল্যবান বক্তব্য!
আর এই জোয়ারের ভাসছে যেন সকলেই; বিশেষত নারীরাই বেশি!

কিটো ডায়েটের মূল যে থিম প্রচার করা হয়, এই ডায়েট ফলো করা হলে ডায়াবেটিস
এবং গ্যাস্ট্রিক সমস্যা একদমই থাকে না।

সবচাইতে ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে কিটো জ্বরে ভুগে অনেক ডায়াবেটিস এবং গ্যাস্ট্রিক এর রুগী ওষুধ ছেড়ে দিয়েছেন কিটো ডায়েট ফলো করার পর থেকে!
কিটো ডায়েট করে তারা নাকি সুস্থ আছেন! ওষুধ খেতে হচ্ছে না!

কী ভয়াবহ কথা ভাবুন, ডায়াবেটিস এর রুগী যদি ওষুধ ছেড়ে দেন!

আমি নিউট্রিশিয়ান নই, ডাক্তার তো নই-ই; আমার স্বাভাবিক সেন্স বলে জোর করে
কিছু করা কখনোই শুভ নয়। ফল হিতে বিপরীত হয়।

কিটো ডায়েটে আপনি জোর করে অল্প সময়ের মধ্যে স্লিম হতে চাচ্ছেন। সবচাইতে
জরুরি বিষয় একেক মানুষের শরীরের চাহিদা, ধরন একেক রকম; কারো কারো আছে
বিভিন্ন অসুখ, বিসুখ।
একই চার্ট বা একই কিটো ডায়েট কি করে সকলের জন্য প্রযোজ্য হয়?

আমি আমার নিউট্রিশিয়ান এর সাথে কথা বলে দেখেছি যেখানে তারা পেশেন্টকে
ক্রাশ ডায়েট এর চার্ট দিচ্ছেন, কিন্তু এটাও বলছেন ক্রাশ ডায়েট না করে ধীরে
ধীরে ফ্যাট কমানোই ভালো। সেখানে কিটো ডায়েট কতোটা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে বলাই বাহুল্য।

কিটো ডায়েটে শরীরের চাহিদা পূরণ করতে শর্করার পরিবর্তে ফ্যাটকে ব্যবহার
করা হয়, অর্থাৎ কৈ এর তেলে কৈ ভাজার মতো ব্যাপারটা। শর্করা কম বা গ্রহণ না
করার মাধ্যমে শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি হরমোন
ইনসুলিনকে কমিয়ে ফেলাই কিটো ডায়েটের লক্ষ্য! কিন্তু এই প্রক্রিয়া অনুসরণ
করতে গিয়ে শরীরের জন্য কী অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে, মস্তিষ্ক, লিভার এবং
কিডনি কতটা ক্ষতি হতে পারে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারেরাই ভালো বলতে পারবেন।

আসলে কি জানেন এই যে কিটো জোয়ার এর উদ্দেশ্য কী?
সস্তা খ্যাতি, ভিউয়ারস বাড়ানো, কোম্পানির লাভ!
পুঁজিখোররা একে অন্যের সাথে মিলেমিশেই লাভের অংক তাদের ঝোলায় ভরে!

যেসকল ডাক্তারেরা ভিউয়ারস বাড়ানোর উদ্দেশ্যে প্রচার চালায়, তাঁদের যেমন
উদ্দেশ্য থাকে তেমনি কোম্পানির লাভ ফ্যাট জাতীয় খাবারের বাজার দখল। আর এর
বলী হয় বিশেষত ওই নারীরাই! কারণ অধিকাংশ নারীর মজ্জাগত ধারণা তাদের
স্লিম হতে হবে, না হয় নারী জন্মই ব্যর্থ; জিরো ফিগারেই নারীর সৌন্দর্য!

জানিনা কোনকালে কোন মনীষী বলে গিয়েছিলেন, নারীকে শুকনা ছিপছিপে হতে হবে? আর তাই বিশ্বজুড়ে নারীরা চলছে এই থিউরির পেছনে; কেনো মোটা মেয়েরা কি
সুন্দর না? সুন্দরের সংজ্ঞা কী তবে?

যাহোক আমি মূল বিষয় থেকে সরে লিখতে চাই না। পরিশেষে বলতে চাই সুস্থ
স্বাভাবিক জীবন যাপন করুন। অস্বাভাবিক ডায়েট নয়; সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে
তুলুন, ব্যায়াম করুন, সপ্তাহে অন্তত তিনদিন হাঁটুন ৪০ মিনিট করে। বাইরে
হাঁটতে না পারলে ঘরে হাঁটুন, হাঁটার বিকল্প নেই। অবশ্যই অতিরিক্ত ফ্যাট জাতীয় খাবার পরিহার করুন।

কিটো ডায়েটের চক্করে পরে জীবনকে দুর্বিষহ করবেন না, জীবনকে উপভোগ করুন,
ভালো থাকুন।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.