কিটো ডায়েট করছেন? তবে জেনে রাখুন-

সুমাইয়া রফিক:

সারাদেশে সকল মানুষের মন জয় করে নিয়েছে কিটো ডায়েট। এই ডায়েট ডায়াবেটিস এবং ওজন হ্রাস করতে পারে বলে সবার ধারণা। ইন্টারনেটে বিভিন্নজন এই ডায়েটকে নানানভাবে প্রমোট করে থাকেন, কথা দিয়ে থাকেন এই ডায়েট আপনার ডায়াবেটিস এবং ওজন হ্রাস করার সহজ উপায়। কিন্তু এতো সহজে কোনকিছু পাওয়া যায় না। শর্টকাট সবসময়ই ক্ষতিকর। এরকম একটি শর্টকাট এর নাম কিটো ডায়েট।

• কিটো ডায়েট কী?

– কিটো ডায়েট অথবা কিটোজেনিক ডায়েট এ মূলত আমাদের দৈনিক শক্তি চাহিদার ৭৫ ভাগ আসে ফ্যাট থেকে, ২০ ভাগ প্রোটিন থেকে, এবং ৫ ভাগ কার্বোহাইড্রেট থেকে। অথচ, স্বাভাবিক ডায়েটে আমাদের দৈনিক শক্তি চাহিদার ৫৫ থেকে ৬০ ভাগ আসে কার্বোহাইড্রেট থেকে, ১৮ থেকে ২০ ভাগ আসে প্রোটিন থেকে, এবং ৩০ ভাগ ফ্যাট থেকে।

ketogenic diet with nutrition diagram, low carb, high fat healthy weight loss meal plan

• কিটো ডায়েট কীভাবে কাজ করে?

– কিটো ডায়েট এমন একটি ডায়েট যেটা কিটোজেনেসিস্ ট্রিগার করে। অর্থাৎ শরীর যখন কার্বোহাইড্রেট থেকে কোন এনার্জি পেতে অক্ষম হয় তখন ফ্যাট থেকে এনার্জি নেয়ার চেষ্টা করে। সাধারণত আমাদের শরীর কার্বোহাইড্রেট থেকে শক্তি সংগ্রহ করে থাকে। কিটোজেনেসিস তখনই হয় যখন দীর্ঘ সময় ধরে আমরা না খেয়ে থাকি। কিন্তু কিটো ডায়েট এর মাধ্যমে আমরা আমাদের শরীরকে কৃত্রিমভাবে কিটোজেনেসিস করতে বাধ্য করি। যার ফলে প্রাথমিকভাবে শরীরে জমা চর্বি ভেঙে শক্তি উৎপাদন করে এবং শারীরিক ওজন কমে যায়।

• কেন সবাই এতো সহজে কিটো ডায়েটের প্রতি ঝুঁকে পড়ছে?

– কিটো ডায়েট নানান রকম মজার মজার চর্বিযুক্ত খাবার যেমন বাটার, চিজ, ডিম, গরুর মাংস ইত্যাদি ধরনের খাবার দিয়ে গঠিত যা কিনা সকল ধরনের নিউট্রিশনিস্ট এবং ডাক্তাররা অতিরিক্ত পরিমাণে খেতে সব সময় বারণ করে থাকে। এইসব খাবার খেতে কার না ভালো লাগে। আর তাই শুধুমাত্র কার্বোহাইড্রেট না খেয়ে বিনিময় এইসব মজাদার খাবার খেতে মানুষ বেশি পছন্দ করে।

• কাদের জন্য কিটো ডায়েট প্রযোজ্য?

– কিটো ডায়েট শুধুমাত্র চিকিৎসার ক্ষেত্রে থেরাপি হিসেবে খিঁচুনি আক্রান্ত রোগীদের দেওয়া হয়। খিঁচুনি আক্রান্ত রোগীদের কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবার খেলে খিঁচুনি বেড়ে যায়। তাই তাদের প্রাথমিকভাবে কিটো ডায়েট দিয়ে তারপর রোগীর অবস্থা বুঝে ধীরে ধীরে অন্যান্য খাদ্য উপাদান একে একে দেওয়া হয়।
এই ডায়েট সাধারণ মানুষের জন্য নয়। আপনার শরীরে যদি কোন রোগ থাকে তবে কিটো ডায়েট আপনার জন্য নয়। কিটো ডায়েট মানে হাই ফ্যাট, হাই প্রোটিন, এবং ভেরি লো কার্বোহাইড্রেট ডায়েট। এই ডায়েট এর মাধ্যমে রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড, এল ডি এল, ও কোলেস্টেরল বেড়ে যায় যা কিনা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। যারা দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি ডিজিজ, রক্তের ইউরিক অ্যাসিড লেভেল বেড়ে যাওয়া, হাইপোথাইরয়েডিজম, পি সি ও এস, হরমোনাল ইমব্যালেন্স, যকৃতের সমস্যা, আর্থ্রাইটিস, ইত্যাদি রোগে ভুগছেন তাদের জন্য এই ডায়েট অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এছাড়াও গর্ভবতী এবং ল্যাকটেটিং মায়েদের এই ডায়েট প্রযোজ্য নয়।

• কিটো ডায়েট এর ক্ষতিকারক দিক কী কী?

– শরীরে যখন কার্বোহাইড্রেট এর অভাব হয় তখন মাথা ঘুরানো, বুক ধড়ফড় করা, গা হাত কাঁপা, দুর্বলতা, অতিরিক্ত ঘাম ঝরা, সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া, চোখে ঝাপসা দেখা, কাজে অমনোযোগী হয়ে যাওয়া, কোন কাজে মন না বসা, শারীরিক ও মানসিক দক্ষতা হ্রাস পাওয়া, ঝিমঝিম করা, ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়। এছাড়াও কার্বোহাইড্রেট এর অভাবে ফ্যাট বার্ন হওয়ার ফলে কিটোন বডি অতিরিক্ত পরিমাণে তৈরি হওয়াতে রক্তে প্রাথমিকভাবে কিটোসিস এবং পরবর্তীতে কিটোএসিডোসিস দেখা দেয় যা কিনা রক্তের সাধারণ পিএইচ লেভেল ক্ষতিগ্রস্ত করে। এতে শরীরে বিভিন্ন অরগান সমূহের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ হওয়া কিটোএসিডোসিস এর একটি লক্ষণ।

• কতদিন কিটো ডায়েট করতে পারবেন?

– প্রথমত কিটো ডায়েট না করাটাই ভালো। তবে দ্রুত ওজন কমানোর জন্য এক থেকে দুই সপ্তাহ এই ডায়েট করলে ঝুঁকি কম। দীর্ঘদিন যদি কেউ এই ডায়েট ফলো করে থাকে, তাহলে তা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

লেখক: পুষ্টিবিদ ও হেলথ এডুকেশন অফিসার, বিআইএইচএস জেনারেল হসপিটাল।

(জনস্বার্থে ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.