ধর্ষণ নির্মূলে জেগে উঠুক ঘরগুলো!

জিন্নাতুন নেছা:

কোনো এক সামাজিক অনুষ্ঠানে চার কিশোর এক কিশোরীকে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে গণধর্ষণ করেছে।এরপর ফেইসবুক লাইভে এসে আবার তা প্রচারও করেছে গর্বভরে, “হাই, ফ্রেন্ডস আগামীকাল জেলে যাবো।”-সময় নিউজ।

সোশ্যাল মিডিয়া ফেইসবুকের সুবাদে ধর্ষণের খবরগুলো যেনো আজকাল পানি ভাতে পরিণত হয়েছে। ছোট শিশু থেকে কিশোরী, যুবতী, বৃদ্ধা কেউই বাদ যাচ্ছে না। আমজনতারও তা অনেকটা গা সওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু ধর্ষণ করে ধর্ষকদের ফেইসবুক লাইভে উল্লাস! ভিজ্যুয়াল পর্নোগ্রাফি! হয়তো ধর্ষণের ভিডিও লাইভে দেখা যাবে অচিরেই। সত্যি খুব ভয়াবহ ব্যাপার!

যুব সমাজের কতটা অবক্ষয়, অধঃপতন হলে এটা সম্ভব আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না। এই যে সদ্য গোঁফ গজানো কিশোরের দল ধর্ষণ করলো, তাদের কি একবারও মনে হয়নি ধর্ষণ একটা অপরাধ, এবং এটা আবার লাইভ করলে অবশ্যই তা প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হবে! তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হবে, শাস্তি হবে! আমার তো মনে হয় এগুলো ঐ ধর্ষক দল থোরাই কেয়ার করে! যদি তা না করতো তাহলে এটা করতে পারতো না। অথবা তারা পুরো ঘটনাটিকেই বিনোদন হিসেবে নিয়েছে! প্রথমত তারা সবাই মিলে ধর্ষণ করেছে, পরে তা আবার লাইভে বলে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছে এবং সক্ষমও হয়েছে। ওদেরকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মিডিয়ায় তাদের নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এটাকে ওরা বীরোচিত বলেই ধরে নিয়েছে বোধকরি।

এখন প্রশ্ন হলো, তারা এতোটা ডেস্পারেট নাকি বলবো যে আত্মবিশ্বাসী? যদি তাই হয় তাহলে কেন তারা এটা ভেবেছিলো যে তাদের কিছুই হবে না? দ্বিতীয়ত, নাকি তারা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলো যে ভালো-মন্দ বোঝার কোন জ্ঞান ছিলো না! প্রথমটি যদি হয় তাহলে কীসের প্রভাবে তারা এতো বেশি আত্মবিশ্বাসী ছিলো? পরিবার, রাজনীতি নাকি টাকার গরম? অবশ্য তাদের পরিবার বাদীর পরিবারকে হুমকি দিয়েছে। আবার ৩-৪ দিন গেলে মামলা পানি হয়ে যাবে এমন মন্তব্যও করেছে।
তাহলে কি বলবো প্রশাসনের গলদ এখানে বিদ্যমান? প্রশাসন কি তাদের সঠিক দায়িত্ব পালন করছে না যে সামান্য অর্থ আর লিয়াঁজো থাকলেই সবাই থোরাই কেয়ার করছে সবকিছু! নাকি তারা মানসিক বিকারগ্রস্ত??

তারা ডেস্পারেট, আত্মবিশ্বাসী বা বিকারগ্রস্ত যাই হউক না কেন আমি বলবো সবক্ষেত্রেই পরিবারের দায় শতভাগ। বর্তমান যুব সমাজের এই ধরনের মানসিকতার জন্য দায়ী পরিবার।
একজন শিশুর প্রথম শিক্ষক তার পরিবারের সদস্যরা, তার বাবা-মা। এরপর সমাজ। কিন্তু একজন শিশু পরিবার থেকে মানবিকতার শিক্ষা পাচ্ছে না। শিশুর সাথে ভালো, মন্দ, ন্যায়,অন্যায়ের পরিচয় ঘটানো হয় না। শিশুর সাথে পরিচয় ঘটানো হয় না মেয়েরাও মানুষ। তাদেরকে সম্মান করতে হবে। উল্টো তাদের বলা হয়, ক্লাসে মেয়েদের সাথে কথা বলা যাবে না, প্রেম করা যাবে না, মেয়ে বান্ধবী থাকা যাবে না ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব বলার মাধ্যমে মেয়েদের থেকে দূরে রাখার মাধ্যমে মেয়েদের প্রতি একধরনের আকর্ষণ তৈরি করছে যা মূলত নেগেটিভ হয় বেশি।

অন্যদিকে বিভিন্ন চর্চা, গল্প, উপমার মাধ্যমে মেয়েদের থেকে ছেলেরা ক্ষমতাধর এটা শিশু বয়স থেকেই তাদের মগজে সেঁটিয়ে দেয়া হয়। তারা মেয়েদের সম্মান করতে শিখে না, ঘরের মেয়েদেরও তারা সম্মান করতে শিখে না। ছোটবেলা থেকেই ঘরে মাকে অসম্মানিত হতে দেখে বড় হচ্ছে তারা।

সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, ধরেন বড় বোন কলেজে কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। অন্যদিকে ভাই পড়ছে ক্লাস টেনে। আপনি খুব আশ্চর্যজনকভাবে খেয়াল করবেন ঐ বোনের ভালোমন্দের তদারকি করবে ভাই, অনেকক্ষেত্রে খবরদারি তো বটেই। যা একজন ছেলে শিশুকে শিক্ষা দেয় তারা ক্ষমতাধর। আর এই ক্ষমতার একটা চর্চা তারা করে থাকে ধর্ষণের মাধ্যমে।

বাবা মায়েদের উচিত ছোটবেলা থেকেই সন্তানদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা। তাদেরকে সময় দেয়া, নিজে অঢেল সম্পদের মালিক হলেও সন্তানদের এই প্রাচুর্য থেকে দূরে রাখা তাদের নৈতিকতার শিক্ষা দেয়া। পিতার কিংবা পরিবারের ক্ষমতার অপব্যবহার করার সুযোগ না দেয়া। কিন্তু আমরা ডিজিটালাইজেশন এর প্রভাবে সন্তানদের ডিজিটাল বানাইতে গিয়া পার্টির উল্লাসে মেতে ঘরের ছোট্ট শিশুর মুখে এক চুমুক বিয়ার দিতে দ্বিধাবোধ করছি না। তাদের সামনে তো হরহামেশাই ড্রিংক করা দুধভাত। কিন্তু খেয়াল করি না এই শিশু একসময় এসবের নেশায় পড়ে যাবে।
এমনকি পিতামাতা খোঁজই রাখি না আমার সন্তান কোথায় কী করছে, কার সাথে মিশছে। কিন্তু রাখাটা খুব জরুরি।

ধর্ষণের এই ভয়াবহতায় আজ খুব বেশি হতাশাগ্রস্ত লাগছে নিজেকে। ভাবতে হবে, ভাবুন খুব করে ভাবুন, একটা উপায় বের করা খুব জরুরি। আমি মনে করি এই উপায় হলো পারিবারিক আন্দোলন, পিতামাতার ইতিবাচক সন্তান লালনপালন। প্রতিটি ঘরের জেগে ওঠাটা খুব জরুরি।

বাংলার প্রতিটি ঘর জাগ্রত না হলে ধর্ষণ বন্ধ হবে না! কোনদিন না। সন্তান যদি অন্যায় করেই ফেলে, তাকে যেন প্রশ্রয়টুকুও না দেওয়া হয়!

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.