মাহমুদা শেলী:
অসম্ভব! আমি বিশ্বাস করি না মজনুর মতো একা একজন খর্বাকার পুরুষের পক্ষে পাঁজাকোলা করে নিয়ে একজন সোমত্ত মেয়েকে পাশের ঝোঁপে তিন ঘণ্টা ধরে ধর্ষণ করেছে। মজনু হয়তো জড়িত, কিন্তু তার সাথে অন্য কোনও ক্ষমতাসীন লোক নিশ্চয়ই রয়েছে যা আড়াল করা হচ্ছে বলে আমার ব্যক্তিগত ধারণা। কারণটা আমি বিগত অভিজ্ঞতার আলোকে বলছি।
এমনও ঘটনা ঘটে এই দেশে। খুন, ধর্ষণ প্রভাবশালীদের দ্বারা হয়, কিন্তু তাদেরই দু’একজন থাকে যারা অসহায় নিরীহ। তারা বলে, তুই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিস, তোর সংসার বউ-বাচ্চা আমরা দেখবো অনেক টাকা দিবো, এবং একটা সময়ে তোকে জামিনে বের করে আনবোই, তুই চিন্তা করিস না।
মেডিকোলিগ্যাল পরীক্ষায় মজনুর স্পার্ম থাকতে পারে, কারণ সেও চান্স নিয়েছে, কিন্তু মূল ধর্ষক কে? সেটা বের হবার কথা মেডিকেল রিপোর্টে। অবশ্য মেডিকেল রিপোর্টেও ডাক্তাররা বিক্রি হয় সবচেয়ে বেশি।
গোয়েন্দা সংস্থা যে প্রেস ব্রিফিং করলেন তাতে তাদের বক্তব্য থেকেই আঁচ করা গেছে:

আক্রান্ত মেয়েটি বলেছেন যে, সব চেহারা ভুলতে পারে কিন্তু মজনুর চেহারা ভুলতে পারবে না। (এটি একটা তাবিজ হিসেবে গোয়েন্দা উপস্থাপন করছেন)
যতই মাদকাসক্ত হোক না কেন একজন এডিক্ট অবস্থায় তার শারীরিকভাবে নিঃশক্তি হয়ে যায় (যা আমরা রাস্তাঘাটে দেখি)। তাহলে কী করে সম্ভব মজনুর মতো একা একজন খর্বাকার পুরুষ তাকে জোর করে রেইপ করতে পারে?
আক্রান্ত মেয়েটি বলেছেন, ধর্ষক দাম্ভিক ছিল। মজনুর মতো একটি নেশাখোর খর্বাকৃতির পুরুষ কী করে দাম্ভিকতা প্রদর্শন করতে পারে?
গোয়েন্দা প্রধান আরও বলেছেন, ওই এলাকায় এমনিতেই নির্জন ও অন্ধকার থাকে। আমার প্রশ্ন হলো ওই এলাকায়ই কেবল নয়, যেসব এলায় নির্জন, অন্ধকার সেখানে কেন আলোর ব্যবস্থা করা হয় না? কেন সেখানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয় না?
মোবাইল পাওয়ার ব্যাংক কাগজপত্র মজনুর কাছে পাওয়া গেছে, এটাই স্বাভাবিক। কেননা মূল আসামি মজনুকে ফাঁসাতেই এই ব্যবস্থা আগেভাগেই মজনুর সাথে বলে-কয়ে ঠিকঠাক করা ছিল।
তার ঘরবাড়ি নাই, তাহলে সেই মুহূর্তে মজনুর নিকট থেকে সেই সব জিনিসপত্র কীভাবে সংগ্রহ করলো? আর সংবাদ সম্মেলনে আলামতের প্রসঙ্গ কেন আসবে? তদন্ত যতক্ষণ পর্যন্ত সম্পন্ন না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত অপরাধী ও সারভাইভারসের আলামত গোপন রাখতে হয় শুনেছি।
আমি ধর্ষণ মামলা নিয়ে কাজ করছি ৩০ বছর। আমার অভিজ্ঞতায় বলে, একা একজন পুরুষের পক্ষে ধর্ষণ সংঘটিত হতে পারে, যদি সেই পুরুষ শক্তিশালী হয়। কারণ কোনও মেয়ে যখন ধর্ষণে আক্রান্ত হবে বলে বুঝতে পারে, তখন মেয়েটি তার সমস্ত শক্তি দিয়ে হলেও বাঁচার নিরন্তর চেষ্টা করে। কিন্তু মজনু (হোক সে খর্বাকৃতির কিংবা গরীব তবুও সে পুরুষ) একার পক্ষে সোমত্ত একটা মেয়েকে তিন ঘন্টা আটকে রেখে চারবার ধর্ষণ করছে এটা অবিশ্বাস। তনুর মতো এই ধর্ষণ ঘটনাটার পেছনে অনেক ক্ষমতাবান কেউ কেউ আছে। যেহেতু মেয়েটি ওসিসিতে চিকিৎসাধীন, সুতরাং ওর সাথে মানবাধিকার সংগঠনের নারীনেত্রীদের জিজ্ঞেসাবাদ করলেই বোঝা যাবে আসল সত্য কী?
মজনু ছন্নছাড়া পথেঘাটে নেশাখোর খর্বাকৃতির একটা পুরুষ। তাকেই গুটি বানিয়ে অন্তরালে এমন কোনও প্রভাবশালী জনৈক ব্যক্তি রয়েছে যা অত্যন্ত কৌশলে এটি করা হয়েছে। নুসরাত হত্যাকাণ্ডেও পুলিশ, মোল্লা, শিক্ষক, হোমড়াচোমরা রাজনৈতিক নেতারা নেপথ্যে থেকে বিরোধিতা করেছিল। নুসরাত যদি বেঁচে থাকতো তাহলে এসব ঘটনা ধামাচাপা পরে যেতো। তনুর মামলা তো কোথায় উড়িয়ে দিল রাষ্ট্র?
আমি মহিলা পরিষদ, আসক, বিএনডাবলুএলএ, উই ক্যান, ইউএন ওমেন, ব্লাস্ট ও ব্র্যাক এর প্রতিনিধিদের আহবান জানাচ্ছি, আপনারা আক্রান্ত মেয়েটির সাথে আলাদা করে কথা বলুন, মজনুর সাথে কথা বলুন, তাহলে অনেক সত্য বেরিয়ে আসবে। সেই সাথে এই নারী সংগঠনে যারা মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারা নিয়োজিত, তাদেরকে মজনু সম্পর্কে বিশদভাবে খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি।