সৌমিত জয়দ্বীপ:
বিখ্যাত মানুষ ছিলেন। জন্মেছিলেনও বিখ্যাত মানুষের জরায়ু সঙ্গী হয়ে। পুত্রবধূ হয়েছিলেন বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের। স্বামীও ছিলেন বিখ্যাত। জন্মও দিয়েছেন বিখ্যাত সন্তান। তিনি লেখক প্রতীতি দেবী দত্ত। পৃথিবীকে বিদায় বললেন গত ১২ জানুয়ারি, ৯৪ বছর বয়সে। তাঁর প্রতি অতল শ্রদ্ধা।
তাঁর যমজ ভাই উপমহাদেশের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালকদের একজন ঋত্বিক ঘটক। তাঁর স্বামী লেখক ও ‘পাকিস্তান অবজারভারে’র সাংবাদিক সঞ্জীব দত্ত। তাঁর শ্বশুর ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, পাকিস্তানের গণপরিষদে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবক, যাঁকে ১৯৭১ সালে হত্যা করা হয়। তাঁর একমাত্র মেয়ে অ্যারমা দত্ত, সংরক্ষিত নারী কোটায় জাতীয় সংসদ সদস্য ও নারীনেত্রী। তাঁর ভাইঝি কিংবদন্তি সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী! হাজার চুরাশি মা খ্যাত মহাশ্বেতা দেবীরই ছেলে কবি নবারুণ ভট্টাচার্য।
ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ ও একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী বিচার ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন প্রতীতি দেবী। যমজ ভাইকে নিয়ে তাঁর লেখা স্মৃতিগ্রন্থ ‘ঋত্বিককে শেষ ভালোবাসা’ একটি পাঠক সমাদৃত বই।
ঋত্বিক ঘটক ও প্রতীতি ঘটক ১৯২৫ সালের ৪ নভেম্বর জন্মেছিলেন পুরোনো ঢাকার হৃষিকেশ দাস রোডের এক বাড়িতে। তাঁদের বাবা সুরেশ ঘটক ছিলেন তৎকালীন ঢাকার ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। প্রতীতি ঋত্বিকের পাঁচ মিনিটের অনুজ ছিলেন। তাঁদের ডাক নাম ছিল ভবা ও ভবি। ভবা – ঋত্বিক ঘটক আর ভবি – প্রতীতি দেবী।
১৯৪৭ সালের ট্র্যাজিক ভারত-ভাগের বলি এ পরিবারটিকেও হতে হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে একেবারে চলে যান পরিবারের একটি অংশ, যেখানে অন্যতম ছিলেন বড় ভাই সাহিত্যিক মণীশ ঘটক, ঋত্বিক ঘটক ও মণীশ ঘটকের মেয়ে সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী। তিনি গিয়েও চলে আসেন কিছুদিন আগরতলা, কলকাতা ও পন্ডিচেরিতে কাটিয়ে। ফলত তাঁকে দেখতে হয়েছে ৭১-এর খাণ্ডবদাহন।
১৯৪৭ সালের মাশুল ১৯৭১ সালেও যে দিতে হয়েছে বহু মানুষকে, তিনি সেটার এক বিশেষ দৃষ্টান্ত। দেশ স্বাধীন ঘোষিত হওয়ার অব্যবহৃত পরেই, ২৯ মার্চ ১৯৭১-এ, পাকিস্তান আর্মি তুলে নিয়ে যায় শ্বশুর ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ও দেবর দিলীপ কুমার দত্তকে৷ তাঁরা আর জীবিত ফেরেননি। আর তাঁর স্বামী সঞ্জীব দত্ত ১৯৯১ সালের ২৭ এপ্রিল কলকাতায় মারা যান।
বাংলার শিল্প-সাহিত্য-রাজনীতিতে পারিবারিক অবদানের যদি তালিকা করা হয় তাহলে নিশ্চয়ই খুব উপরের দিকেই থাকবে এই পরিবারটির নাম। এমনকি, চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণার স্বার্থে মহীয়সী এ নারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে দেহদান করে মরণোত্তর অবদানও রেখে গেলেন!
বহু বদলে যাওয়া বাংলাদেশ যেন এসব মানুষের অবদানগুলো বিস্মৃত না হয়!
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
বিখ্যাত পরিবারের বিখ্যাত মানুষ ছিলেন প্রতীতি দেবী
শেয়ার করুন: