বাংলাদেশ: নারী মাংসের সহজলভ্য বাজার!

অনুসূয়া যূথিকা:

দেশজুড়ে ঘটে চলেছে একের পরে এক ধর্ষণ, ধর্ষণের পরে হত্যা, পূর্ব প্রেমের জের ধরে হত্যা কিংবা প্রেমে সম্মতি না দিলে হত্যা। সমাজের সব স্তরে ধরেছে পঁচন আর তারই জের ধরে ঘটে চলেছে নৈরাজ্য। সহ্যের সব সীমা পার করে গেছে ধর্ষণের মাত্রা!

স্বামীর সামনে স্ত্রীকে বা পিতার সামনে কন্যাকে ধর্ষণ এখন রোজকার ঘটনা৷ ধর্ষণের এমন মহোৎসব চলছে যেনো, এই দেশের সব পুরুষের জন্য এই পৌষেও কড়া ভাদ্র মাস ফিরে এসেছে। কুকুরের মতো মেটিং সিজনের সুযোগ নিতে যে যেভাবে পারছে ঝাঁপিয়ে পড়ছে নারীর উপরে৷ তা সেই নারী যদি আদতে শরীরে, মনে নারী হয়ে নাও ওঠে তবুও রেহাই নেই। ছয় মাসের বাচ্চা থেকে সত্তুরের বৃদ্ধা, কারও মা, কারও স্ত্রী, কারও কন্যা, বাদ নেইই কেউ। অপ্রাপ্তবয়স্ক বাচ্চা মেয়ের যৌনাঙ্গ ক্ষতবিক্ষত করে, ব্লড দিয়ে কেটে চলছে ধর্ষণ।

বিচারহীনতার সংস্কৃতি আমাদের কোথায় নিয়ে গেছে যে, ধর্ষণের আসামি বটেই এমনকি সাজাপ্রাপ্ত আসামিও চড়ে বেড়াচ্ছে বুক ফুলিয়ে। ফের উচ্চ আদালতে প্রমাণ হচ্ছে না আসামির দোষ!

অনুসূয়া যূথিকা

সারাটা দেশে ভায়াগ্রা আর ইয়াবার যেনো হরির লুট লেগেছে, দোকানে দোকানে হার্ডকোর পর্ন বড় বেশি সহজলভ্য৷ গ্রামের পোলাপান থেকে বুইড়া খাটাসগুলাও ইন্টারনেট মানে বোঝে পর্ন! এদেশের অধিকাংশ ড্রাইভারের প্রশিক্ষণ ঠিক নাই, লাইসেন্সেরও নাই কোন গাছপাথর। কিন্তু এরা আবার ইন্টারনেটের গ্রাহক। হার্ডকোর পর্ন দেখা এইসব ড্রাইভার হেল্পারের কাছে আমরা জিম্মি। নিরাপদ সড়ক আন্দোলন মাঠে মারা গেছে। সঙ্গে গোঁদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে যুক্ত হয়েছে ধর্ষণ।
মহাসড়কে অবাধে চলন্ত বাসের ড্রাইভার হেল্পার ধর্ষণ করছে নারী যাত্রীকে৷ একের পরে এক সড়কে চলছে যেনো বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ছাত্রী ধর্ষণের প্রতিযোগিতা।

একই পাড়ায় বসবাসকারী প্রতিবেশী মুরুব্বী ঘরে ডেকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলছে স্কুলে পড়া সদ্য কিশোরী কী নেহাতই শিশুকে৷ স্কুল কী কলেজের শিক্ষকের কাছেও ছাত্রী হিসেবে একজন মেয়ে নিরাপদ না। শিক্ষক নানা রকম প্রতারণা করে ধর্ষণ করছেন তারই ছাত্রীকে। সহপাঠী ধর্ষণ করছে তারই আরেক সহপাঠীকে, বন্ধু সেজে ধর্ষণ করছে এক অসহায় নারীকে।

ছলে বলে কৌশলে কেবলমাত্র ধর্ষণ করেও ক্ষান্ত নন তারা। প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে সেই যৌনাচার আবার ডিজিটাল মিডিয়াতে ছড়াতে কসুর করছেন না তারা। সবচেয়ে ভয়াবহ হচ্ছে, ধর্ষণের পরে প্রমাণ লোপাট করতে সেই মেয়েকে হত্যার মতো কাণ্ড ঘটাচ্ছে তারা ঠাণ্ডা মাথায়। সারাদেশে চলমান ধর্ষণ মচ্ছব, তাতে বাদ নাই কেউই। মোল্লা না পুরোহিত, শিক্ষক না মাদ্রাসার মৌলভী, তিন পোলার বাপ না পুচকা পোলা, সবাই এখন ধর্ষণের ওপর মাস্টার্স ডিগ্রী করছেন যেনো।
আর সব সব ঘটনার পরেও সব দোষ নন্দ ঘোষের মতো একা নারীরই।

যতো ধর্ষণ সব সব নারীর উস্কানিতেই, সে নিজেই প্রলুব্ধ করেছে পুরুষটিকে৷ যার ফলে এই ধর্ষণ, নয়তো এমন কাজ কখনো কোনো পুরুষ করতোই না। পুরুষের মধ্যে কখনও কোনও দোষ দেখতে পান না, এমন নারী পুরুষে বোঝাই এই সমাজ। প্রতিটা ঘটনার পরেই একটা বড় দল নেমে পড়ে কথা দিয়েই এরা যেনো ধর্ষণ করে ফের৷

এদের মতে, নারী তার শরীর দেখানো পোশাক পরে, নিজেকে ঢেকে রাখে না। যেনো সারাদেশে সৌদি আরব বা মধ্যপ্রাচ্যের মতো শরিয়াহ আইন বলবৎ করা হয়েছে। এরা কখনো বলে না যে এদেশের নব্বই শতাংশ মুসলমানের ধর্ম ইসলামে পুরুষের জন্য কী বিধান! বলে না সমস্ত নারী পর্দার আওতায় পড়ে না। এরা প্রতিটা ধর্ষণের পরে চিৎকার করে করে বলবে নারীরা পর্দা করে না বলে ধর্ষণ নির্যাতনের ঘটনা হচ্ছে। বলে না যে হিজাব বা আবায়া বা বোরকা কাউকে ধর্ষণ থেকে মুক্তি দেয় না। যদি দিতো তবে তনু ধর্ষণের শিকার হতো না, প্রাণ দিতো না। নুসরাতকে বোরকা পরে পুড়ে মরতে হতো না। তনু হিজাব পরেও বাঁচতে তো পারে নাই, এমনকি সে ন্যায়বিচার তো পায়নি, আবার তার বাবা-মাকেও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বলেই যতদূর জানি।

সমাজের যে অবস্হানে বা যে পেশারই পুরুষ হোন না কেন, কে যে কখন ধর্ষক হিসেবে আবির্ভূত হবেন কেউ জানে না। অবস্হা দেখে মনে হচ্ছে ঘর থেকে বেরোনো নারী কেবল আর কেবলমাত্র পুরুষদের ভোগের বস্তু হতেই যেনবা বেরিয়েছে। রাস্তাঘাট, কর্মক্ষেত্রে, রিসোর্টে, আবাসিক হোটেলে কোথায় ধর্ষণ না ঘটছে!

এখানেও আবার কিছু আঁতেল পন্ডিত বলবেন, মেয়েরা রাতে বের হয় কেন! রিসোর্টে বেড়াতে যাবে কেন? আবাসিক হোটেলে থাকবে কেন? সাথে কেন পুরুষ থাকবে না! হায় যে দেশের একটা বিবাহিত নারীর জীবনে স্বামীর হাতে ধর্ষণ খুবই সাধারণ ঘটনা, সেখানে কোন পুরুষ তার জন্য নিরাপদ! হররোজ পত্রিকায় আসে বাবা নিজের মেয়েকে ধর্ষণ করেছেন, চাচার দ্বারা ধর্ষণের শিকার ভাইঝি, মামা তার বন্ধুসহ ভাগ্নিকে ধর্ষণের পরে হত্যা করেছে! কোথায় কার কাছে কোন পুরুষের কাছে আমরা নিরাপদ তা কে বলে দেবে!

ধর্মের নামে ব্যবসা তো এদেশে বহু পুরানো ঘাঁটি গেঁড়ে বসেছে৷ এখন এইসব মাদ্রাসার মুন্সি মৌলানার অঙ্কশায়িনী নাহলে পুড়ে মরতে হবে নারীকে, বিধি নির্ধারিত হয়ে গেছে আমাদের। দেশে যেনো ফিরে এসেছে সেই বেজন্মা পাকি হায়েনাদের উত্তরসরণ। ঠিক তাদের মতো করে চলছে বাংলার ঘরে ঘরে, সড়কে, গ্রামে, শহরে ধর্ষণ নির্যাতনের ঘটনা। যার মধ্যে আবার একটা বড় অংশ নাবালিকা ধর্ষণ। ঠিক সেই সময়ের মতো কিছু লেজবিশিষ্ট ব্যক্তি বলছেন এইসব ধর্ষণ জায়েজ করার নানা ফতোয়া। এরা হালে পানি পাচ্ছেন বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনটির ঊনিশ ধারার অপপ্রয়োগের মাধ্যমে। মেয়ে নাবালিকা, কিন্তু ধর্ষিতা যেহেতু তাই তার ভবিষ্যৎ চিন্তা করে ধর্ষকের সাথে বিয়ে দেয়া হোক! কী ভয়ঙ্কর কথা! গ্রামেগঞ্জের সালিশে এমনই ঘটছে হরহামেশা! এমনকি জেলা প্রশাসকও এমন বিয়ের আয়োজন করে দিচ্ছে কোনো কোনো এলাকায়! কই আছি আমরা!

আর এইখানে দেশের বিবেক নামের কিছু সুশীল বলছেন পাড়ায়পাড়ায় ব্রথেল খোলা হোক।
বাহরে বাহ, কী মজা। তো এতো ঘুরিয়ে বলবার দরকারটা কী, সোজা বলুন না যে আপনাদের অবদমিত কাম এখন বাঁধভাঙা হতে চায়। কারও কারও কাছে তো আবার দেখি ধর্ষণ আর ফোর্সড সেক্স সমান সমান।

সেইসব সুশীল নামের আঁতেলেরা বলুন না, দেশের এই দুর্দিনে এরকম কঠিন সময়ে ছোট ছোট বাচ্চাদের বাঁচাতে তারা এই ব্রথেলে কাকে দেখতে চান? নিজের নিজের পরিবারের মেয়েদের পাঠাবেন কি ব্রথেলে? নাকি নিজের পছন্দ না হওয়া আর লোকের সম্মুখে বিগতযৌবনা বলে পার পাওয়া আপনাদের পত্নীদের কি সেখানে মাসির দায়িত্ব নিতে পাঠাবেন? সঙ্গে সঙ্গে কি নিজেদের মেয়ে, বোন ভাবি, ভাতিজি, ভাগ্নিদেরও দলে দলে পাঠাবেন? সুশীল সমাজের সবাই একত্রিত হয়ে একটা দেশের কাজ করেন। নিজেদের উদ্যোগে সব পাড়ায় যৌনপল্লী খুলেন নিজেদের উদ্যোগে।

মাদ্রাসার হুজুরেরা ধর্ষণে হাইয়েস্ট স্কোর করেছেন বলে অনেক বিজ্ঞ আঁতেলরা আবার সব মাদ্রাসার পাশে পাশে একটা করে ব্রথেল খুলে ফেলার যুক্তি দিতে ব্যগ্র হয়ে পড়েছেন। নিজেরা যে যান নিয়মিত তা বুঝি, কিন্তু তারা জানেন তো ব্রথেলের নিয়ম কানুন!
রেজিস্ট্রেশন না পাওয়া পর্যন্ত কেবল মোল্লা মৌলভী না, সমাজের যতো রকমের বিকৃত মানসিকতার পুরুষের সঙ্গে শোওনের লাইগা নিজের নিজের কন্যারে প্রস্তুত করেন। জানেন তো একেকটা যৌনপল্লীতে প্রতিটা মেয়েরে ক্যামনে ট্রেনিং দেয়?

আজকাল এইদেশে আবার ওহাবি সালাফিদের দৌরাত্ম্য বাড়সে। তারা ফতোয়া দিচ্ছেন ইসলামে নাকি মুতাহ বিবাহ জায়েজ।
এইসব কিন্তু হুজুরেগো কাছে মুতাহ বিবাহ হিসাবে দেখা হইবো। দুনিয়ার লগে লগে আখেরাতের কামও কিছু কইরা রাখেন আপনেরা৷ আপনেগো তো মডারেট মুসলমান হইতে বাধা নাই, কখনো কমরেড কখনো আলহাজ্ব বসে নামের লগে। ধর্মেও আছেন আবার জিরাফেও আছেন, তো সমস্যা কী!

অপরের মাইয়া ব্রথেলে যাইবো এইটা যারা কয় আমার চোখে তারা সেইরকম পুরুষ যে নেহাত সুযোগ না পায়া ধর্ষক হয় নাই। বা তার অপকর্মের কথা এখনো সামনে আসে নাই৷ অপরের মাইয়ারে যে বেশ্যা বানানোর কথা বলে আমি কই সে নিজের মারেও বেশ্যা জানুক, কন্যারেও বেশ্যা বানাক। অপরের কন্যা যদি বেশ্যা হয় তো স্যায় কোন লাটের বাট, তার মাইয়ারেও হাজারো হায়েনার ভোগের জন্য উলঙ্গ কইরা দিক।

দেশজুড়ে সমস্ত রকম মিডিয়া তথা সোশাল মিডিয়াতে সবচাইতে আলোচিত এবং বিশ্লেষিত বিষয় ধর্ষণ এবং এর শাস্তি নিয়ে বিতর্ক। রোজ রোজ যোগ হচ্ছে নতুন নতুন ঘটনা।

দুয়েকটা ধর্ষকের বিচার হোক, প্রকাশ্যে রাস্তার মোড়ে ফাঁসি দেওয়া হোক কয়েকজনের লিঙ্গ কর্তন করা হোক, তারপরে কে পিডোফিল আর কে ফোর্স সেক্স করতে গেসে আর কে মাইয়াগো কাপড় পরার কারণে প্রোভোকড হয়া রেপ কইরা ফালাইসে সেইটা বোঝা যাবে। কোন মোল্লারে শয়তানের প্ররোচনা দিয়ে রেপিস্ট বানাইসে সেইটাও স্পষ্ট হইবো তারে সারাজীবনের জন্য নপুংসক বানাইলে৷
এখন কেউ চিল্লাইতে আইসেন না যে উন্নত দেশে ফাঁসি নাই৷ এইটা হইলো বাংলাদেশ, উন্নত বা সভ্য কোন দেশ না৷ অসভ্যের জন্য অসভ্যের আইন, ধর্ষকের সাথে মানবিকতা দেখানোর মতো যথেষ্ট উদার নারীবাদী আমি না।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.