তানিয়া কামরুন নাহার: ধর্ম ব্যবসা নিষিদ্ধ করা হলে এই লোকগুলা খাবে কী? ওয়াজ করা, বয়ান দেওয়া, কোরান শেখানো (কোরান শেখানোর জন্য কেউ মূল্য দাবী করতে পারবে না, এই সংক্রান্ত একটি হাদিস আছে), বিভিন্ন উপলক্ষে মিলাদ পড়ানো, দোয়া করা, কোরান খতম দেওয়া, ঝাড় ফুঁক তাবিজ-কবচ করা ছাড়া তো তারা আর অন্য কোন কাজ জানে না! পেটের ধান্ধায় তাই নিজেদেরই এসব নিত্য নতুন ব্যবসা উদ্ভাবন করতে হয়েছে, টিকিয়ে রাখতে হয়েছে।
সবচেয়ে কম পরিশ্রমে ধর্মকে ব্যবহার করেই এসব ব্যবসায় ভালো আয় রোজগার করা যায়। সুতরাং ধর্ম ব্যবসায়ীরা অন্য পেশায় কেন যাবেন? যদিও এ কাজগুলো দেশের উন্নয়নে, অর্থনৈতিকভাবে বিন্দুমাত্র ভূমিকা রাখে না।
এসব ধর্ম ব্যবসা শুধু নিষিদ্ধ করলেই চলবে না, পাশাপাশি দরকার কর্মমুখী শিক্ষারও। পরিশ্রম না করেই ধর্ম ব্যবহার করে আয় রোজগারের ধান্ধাবাজিকে নিরুৎসাহিত করতে হবে, যেমনটা আমরা যৌতুক বা ঘুষ দেওয়া নেওয়ার বেলায় করে থাকি। এজন্য আমাদের নিজেদেরও সচেতনতা দরকার।
বিভিন্ন ধর্মের প্রবক্তা বা অবতার হিসেবে যাঁরা যুগে যুগে এ পৃথিবীতে এসেছেন তাঁরা কি ধর্মীয় বাণী দিয়ে, দোয়া করে, ধর্ম প্রচার করে আয় রোজগার করতেন নাকি তাঁরা অন্য কোন কাজের মাধ্যমে আয় করতেন? এসব আমাদের জানতে হবে। ধর্মীয় বিদ্যা কিছু ক্ষেত্রে গুরুমুখী (আমি নিজে অবশ্য মনে করি, যেকোন বিদ্যাই গুরুমুখী)। এই সময়ে তেমন ভাল গুরু কোথায় পাওয়া যাবে আমরা জানি না।
ধর্মের সাথে দৈনন্দিন জীবন যাপনের পাশাপাশি আধ্যাত্মিকতারও কিছু যোগ রয়েছে। আমরা সাধারণ মানুষ, আমরা তো ধর্ম চর্চা করে সাধক -মহামানব হয়ে যাবো না। সেটা হবার আমাদের দরকারও নেই। আমরা সাধারণ মানুষ, সাধারণই থাকবো। প্রতিদিনের জীবন যাপনে এইসব সাধারণ মানুষ নিজেদের ধর্ম পালন করতে চান, নিজের ধর্ম সম্পর্কে জানতে চান তখন তারা কোথায় যাবেন? প্রত্যেকেরই নিজের ধর্ম সম্পর্কে জানা অধিকার আছে, পালন করার অধিকার আছে। এতে কেউ বাধা দিতে পারবে না।
অনেকেই প্রচলিত পাঠ্যক্রমের ধর্মীয় শিক্ষা বিষয়টির বিরোধিতা করে থাকেন। কিন্তু এই বিষয়টি না থাকলে, মানুষকে আবার সেই ধর্ম ব্যবসায়ীদের কাছেই ফিরে যেতে হবে নিজের ধর্ম সম্পর্কে জানতে। আমাদের দৈনন্দিন জীবন যাপনের একটি অংশ ধর্ম। একে অস্বীকার করার মত সময় এখনো আমাদের আসেনি। এমন কি আফ্রিকার গহীন জংগলের বসবাসকারী যে মানুষগুলো, তারাও কিন্তু একটা ধর্ম পালন করে। হোক তা যতই আদিম, কুসংস্কারাচ্ছন্ন, বর্বরোচিত, তবু সেসবই তাদের জীবন যাপনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ঐ মানুষগুলোকে যদি আপনি ভালবাসেন, তাদের কল্যাণ কামনা করেন, তবে তাদের বিশ্বাস, মূল্যবোধ, জীবন যাপনের ধরনকেও ভালবাসতে হবে। ভালবেসেই আপনাকে সেসব পরিবর্তন করতে হবে।
লেখক পরিচিতি: শিক্ষক।