নীল জোনাকি:
ভারতে চিকিৎসক প্রিয়াঙ্কা রেড্ডিকে ধর্ষণের পর আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে মোহাম্মদ পাশা নামের একজনের নাম প্রকাশের পর দেখা গেলো প্রতিবাদের ভাষাই আমূল পাল্টে গেছে। প্রতিবাদকারীদের অনেকেই এই ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে মুসলমান, নবী মোহাম্মদ, কোরান শব্দগুলোকে ব্যবহার করছেন। কারণ ‘মোহাম্মদ পাশা’ একজন মুসলিম ব্যক্তি। অর্থাৎ ধর্ষণের জন্য ইসলাম ধর্ম দায়ী, নবী মুহাম্মদ দায়ী, কোরান দায়ী। কোরান পড়ে, নবীর কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই মোহাম্মদ পাশা এই ঘটনা ঘটিয়েছে! নির্মম এই ঘটনাটির বিষয়ে ইসলামপন্থীরা তখন নীরব দর্শকের ভূমিকায় ছিলেন। তাদের সামনে আর কোনো অপশানও ছিল না বলা চলে।
পরে যখন জানা গেলো, উক্ত ঘটনায় মোহাম্মদ পাশাই শুধু নয়, তার সাথে আরও তিনজন হিন্দু ব্যক্তি জড়িত, তখন ওই নীরব দর্শকরা বুকে কিছুটা বল পেয়ে প্রতিবাদ করতে শুরু করলেন। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল এমন যে মুসলমান নিয়ে তো খুব কচলাকচলি করলা, এবার দেখো তিনজন হিন্দুও জড়িত। এবার প্রথম পক্ষের কণ্ঠ অনেকটা মিইয়ে গেলো।
সত্যিই তো, মুসলিম মাত্র একজন আর হিন্দু ব্যক্তি তিনজন। একা মুসলিমদেরকে গালাগালি করলে বিষয়টা দৃষ্টিকটু লাগে, তাই ইস্যু থেকে আপাতত নিজেদেরকে ইস্তফা দিয়ে নতুন ইস্যুর অপেক্ষা করতে লাগলেন। অল্প সময়ের মধ্যে প্রিয়াঙ্কা রেড্ডিকে হয়তো ভুলেও যাবেন।
এখানে স্পষ্ট যে, প্রতিবাদকারীদের বড় একটা অংশ ধর্ষণ ও হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার চেয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে পাওয়া অস্ত্রটাকেই ব্যবহার করতে চেয়েছেন। অন্যদিকে মুসলিমরা নিজেদের ঢাল হিসেবে পেয়েছেন তিনজন হিন্দু ব্যক্তিকে। দুই পক্ষের কেউ একবারও উচ্চারণ করেননি- চারজন পুরুষ মিলে একজন নারীকে ধর্ষণ করেছে, ধর্ষণের পর আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। এবং এটা চরম অমানবিক, নির্মম একটা ঘটনা, এবং এতো জাত-পাত, ধর্মীয় ভেদাভেদের দেশেও নারীকে ধর্ষণের ক্ষেত্রে ধর্ম যে কোনো বিভেদই না, এটা কেউই বলছে না।
আমাদের দেশেও যখন কোনো ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, তখন ধর্ষকের রাজনৈতিক পরিচয় খোঁজা হয়। যদি দেখা যায় ধর্ষক ব্যক্তিটি ছাত্রলীগ, যুবলীগ, ছাত্রদল, যুবদল কিংবা শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত, তখন তার রাজনৈতিক পরিচয়টাকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় প্রতিবাদের ক্ষেত্রে। যেন ছাত্রলীগ, যুবলীগের মধ্যেই কেবল শিশ্ন গজিয়েছে, যার দ্বারা আক্রান্ত নারীটিকে ধর্ষণ করেছে।
বিষয়টা কি এমন- ধর্ষক যদি উক্ত দলগুলোর সাথে জড়িত না থাকতো, তাহলে তার দেহে শিশ্ন নামের ধর্ষণ যন্ত্রটি থাকতো না এবং কেউ ধর্ষণের শিকারও হতেন না? নাকি বিকৃত মস্তিষ্কের ধর্ষক ও ধর্ষকামী পুরুষদেরকে আড়াল করার উদ্দেশ্যে সুক্ষ্ণ কৌশলে ধর্ষণের দায়ভার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের উপর চাপানো হয়? এটা কি ‘সব পুরুষ এক না’ বাদীদের একটি কূটকৌশল?
তেমন যদি না হয়ে থাকে তাহলে ধর্ষকের প্রথম ও মূল পরিচয় ‘পুরুষ’ এর দ্বিতীয় ও তৃতীয় পরিচয়কে কেন প্রাধান্য দেয়া হয়? কিংবা রাজনৈতিক পরিচয়হীন বাবা, চাচা, মামা, খালু, ফুপা, হুজুর, শিক্ষক, ডাক্তার, ড্রাইভার, হেল্পার ইত্যাদি নামের ধর্ষকরা পুরুষ ব্যতিত কি অন্যকোনো প্রাণী?