উইমেন চ্যাপ্টার ডেস্ক: মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ এর সম্পাদক আদিলুর রহমান খানকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।
গতকাল মঙ্গলবার জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) পক্ষ থেকে আদিলুরের গ্রেপ্তারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এই আহ্বান জানানো হয়।
ওএইচসিএইচআরের মুখপাত্র লিজ থ্রসেল জেনেভায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘আদিলুর রহমান খানের শারীরিক ও মানসিকভাবে অক্ষত থাকার নিশ্চিত করতে আমরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই। মানবাধিকার রক্ষার কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
ওএইচসিএইচআরের মুখপাত্র আরও বলেন, কোনো ধরনের পরোয়ানা ছাড়াই সাদা পোশাকের পুলিশ ১০ আগস্ট আদিলুরকে তাঁর বাড়ির সামনে থেকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারের পরদিন আদিলুরের জামিন নামঞ্জুর করে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। লিজ থ্রসেল অভিযোগ করে বলেন, আদালতে হাজির করার আগে আদিলুরের সঙ্গে তাঁর আইনজীবীর সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া হয়নি।
এদিকে আদিলুরের গ্রেপ্তারে দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন, মানবাধিকারকর্মী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উদ্বেগ জানিয়েছেন।
এর আগে এই তথাকথিত মানবাধিকার কর্মীকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের উপমুখপাত্র মারি হারফ এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি এ আহ্বান জানান।
রাজধানীর গুলশান থেকে ১০ আগস্ট রাতে আদিলুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ১১ আগস্ট নিম্ন আদালত তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে রিমান্ড আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদিলুর হাইকোর্টে আবেদন করলে বিচারপতি বোরহান উদ্দিন ও বিচারপতি কাশিফা হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চ ১২ আগস্ট আদিলুর রহমান খানের রিমান্ড আদেশ স্থগিত করে।
হাইকোর্টের আদেশে বিলম্ব ছাড়াই তাঁকে কারাগারে পাঠাতেও নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে তদন্ত কর্মকর্তা তাঁকে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন বলেও হাইকোর্টের আদেশে বলা হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রেসনোটে ‘অধিকার’ এর এই সম্পাদকের বিরুদ্ধে কাল্পনিক প্রতিবেদন তৈরি করে দেশে-বিদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সরকার তথা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করা হয়েছে। এ ধরনের মিথ্যা ও কাল্পনিক তথ্য প্রকাশ ও প্রচার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন অনুযায়ী অপরাধযোগ্য বলেও উল্লেখ করা হয় প্রেসনোটে।
আইন অনুযায়ী এ ধরনের অপরাধের শাস্তি ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং এক কোটি টাকা পর্যন্ত আর্থিক জরিমানা।
প্রেসনোটে বলা হয়, ৫ মে হেফাজত কর্মীদের নাশকতা রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ৬১ জন নিহত হয়েছে বলে অধিকারের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য চাওয়া হলেও তা উপস্থাপন করা হয়নি।
অথচ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দাবী ওই দিন রাতের অভিযানে কোনো মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি।
রাতে কেউ মারাও যায়নি বলেও দাবী করা হয় প্রেসনোটে। তবে দিনের বেলায় হেফাজত ও তাদের সহযোগী উচ্ছৃঙ্খল নেতা-কর্মীদের আক্রমণ ও পুলিশের প্রতিরোধের কারণে ১১ জন এবং পরে হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়।