কী বিষাদময় এক সময়!

আনন্দময়ী মজুমদার:

যে লোকটা নির্লিপ্তভাবে খুন করছে আজকে, সে কোনো না কোনো নির্লিপ্ততা, নির্দয় ব্যবহার পেয়ে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। ভাবা যায় যে একজনকে মারতে মারতে ভাত খেতে যেতে পারে কেউ!

এছাড়া আছে ডি-হিউম্যানাইজেশন, মানে যাকে ভয় পাই, ভয় থেকে ঘৃণা করি, সেই মানুষকে মশা, গরুতে রূপান্তরিত করে ভাবলে মশা বা গরু মারতে কোনো সমস্যা হয় না।

এথনিক ক্লিঞ্জিং এর সময় এই ধরনের টেকনিক ব্যবহার হয়। ঘাতকরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে। মানুষকে অন্য কিছু ভাবে। তখন আর বাধা থাকে না। সমাজবিজ্ঞানীদের কোট করে বলছি এই কথা।

এটা ভেবে দেখতে পারি যে ঢাকা শহরে চার বছর থাকার মধ্যে কখনও দেখিনি রিকশা ডাকার প্রতিযোগিতায় একজন অল্পবয়সী তরুণ/তরুণী যে হেঁটে যেতে পারে, সে ইস্কুলের সময় বৃষ্টিতে মা আর শিশুকে রিকশাটা ছেড়ে দিয়েছে। অন্য লোকের তাড়া, প্রয়োজন, দুঃখ দুর্দশাটা নিজের চেয়ে বেশি মনে করে, এমন খুব দেখিনি রাস্তাঘাটে।

বরং আমরা একা রিকশায় থাকলে, কখনো মা-শিশুকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলে, নেমে রিকশা ছেড়ে দিয়েছি। ঘটনাটা প্রতিফলিত হয়নি। আমরা এমন কিছু মহৎ লোক না, তাই বলতে হবে পরগনা তার চাইতেও বেভুল, বিমর্ষ আর সন্দিহান।

ঢাকা শহরে আমাদের পরগনায় আমাদের কাছে মধু দিতে বা নিতে কেউ আসে না। আমরা শিশুদের ডাকি, মায়েরা আসতে দেয় না। পড়াশুনোর দোহাই দিয়ে বাচ্চাদের ঘরে রাখে। শিশুদের পরস্পরের মেলামেশার তাগিদ অনুভব করে না। মানে আত্মীয় হলে এক কথা ছিল। আমরা কোথাকার কোন ব্যাঙের ছাতা।

অনেকেই এ উদাসীনতা বা সন্দেহের ভাঁজ কপালে নিয়ে হাঁটে। বাচ্চাদের মায়েদের সবচেয়ে কঠিন অবস্থা। বাচ্চা পয়দা করে, ঘরের বুয়ার কাজ করে আর অম্লজানের অভাব থেকে ক্যালসিয়াম জরজরে হাড়, হাঁটু ব্যথা, ফলত মুখ খারাপ, চোখে সন্দেহ আর অন্যের সুখে হাড়কালি।

এমন একটা বিষাদময় অবস্থা থেকে নতুন বিষাদেরা তৈরি হবে। এমন একটা অবস্থা ভবিষ্যতের মাটি তৈরি করে দেবে।

তাই বিষাদের কথা বারবার বলতে চাই না। সেইসব কথা সবাই জানে।

*বাস্তব অভিজ্ঞতা মানে দোষারোপ না। সব মানুষের কিছু মৌলিক অধিকার আছে, আর কর্তব্য-শ্রদ্ধা-সৌজন্য সেই অধিকার বাস্তবায়নের একমাত্র জমি।

শেয়ার করুন: