নারীর চোখে এবার পুরুষকে দেখুন

উইমেন চ্যাপ্টার:

অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের লেখা ‘শাড়ি’ প্রবন্ধটিকে ঘিরে অনলাইন জগতে চলছে তুমুল আলোচনা। অধিকাংশই এই লেখাটিকে সেক্সিস্ট, বর্ণবাদপুষ্ট এবং বাঙালী নারীর জন্য অপমানজনক বলে উল্লেখ করছেন। তারা এই লেখার মধ্য দিয়ে লেখকের ধর্ষকামি চরিত্রেরই বহি:প্রকাশ বলে মনে করছেন।

এরই মধ্যে এ নিয়ে বিস্তর পক্ষে-বিপক্ষে লেখা চোখে পড়েছে। কেউ কেউ আবার ওই লেখারই প্যারোডি করে শাড়ির পরিবর্তে ‘পাঞ্জাবি’ আর নারী বা মেয়ের জায়গায় ‘পুরুষ’ লিখেছেন।

‘শাড়ি’ লেখাটিতে বাঙালী নারীকে খাটো, বেঁটে, অসুন্দর বলে মন্তব্য করার পাশাপাশি নারীর পোশাক হিসেবে অগতির গতি হিসেবে শাড়িকেই নির্দ্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে পুরুষের মনোরঞ্জনের জন্য, যেন শাড়িই পারে অসুন্দর একজন নারীর শরীরের বাঁক এবং ভাঁজগুলোকে স্পষ্ট করে তুলে ধরে পুরুষের চোখে যৌনাবেদনময়ী করে তুলে ধরতে।

এরই প্রতিক্রিয়াস্বরূপ বেশ কয়েকজন লিখেছেন, পুরুষের চোখে নারী তো অনেক হলো। এবার নারীরা বলুক, তারা পুরুষদেরকে কেমন সাজ-পোশাকে দেখতে পছন্দ করে। তাদের চোখে পুরুষের শরীর কেমন হওয়া চাই, পুরুষের কেমন পোশাক পরা চাই।

নিচে তারই কয়েকটা নমুনা তুলে ধরা হলো:

শান্তা মারিয়া

লেখক ও সাংবাদিক শান্তা মারিয়া লিখেছেন,

যদিও বাঙালি পুরুষদের বেশির ভাগের উচ্চতা ৫ ফুট ৬ বা তার নিচে। যারা লম্বা তারাও ইউরোপীয় পুরুষদের মতো সুন্দর নয়। কেমন যেন ঢ্যাঙা মার্কা। বাঙালি পুরুষের মধ্য প্রদেশ বেশিরভাগই স্ফীত। তাদের শরীরে সিক্স প্যাক নাই। বাঙালি পুরুষ খালি আবেদন পত্র লিখতে পারে, কিন্তু তাদের শরীরে গীতিময়, গর্জনময় কোন গতিভঙ্গিমাই নাই, তাই আবেদন নিবেদন কিছুই নাই। বৃথাই বাঙালি পুরুষ শার্ট প্যান্ট পরে ইউরোপীয় পুরুষদের সমকক্ষ হওয়ার চেষ্টা করে এবং হাস্যকর আত্মতৃপ্তি লাভ করে।
বাঙালি পুরুষদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও রহস্যময় লাগে ধুতি ও লুঙ্গিতে। রহস্যময় কারণ কখন এই পোশাক খসে যায় সেই আতংক, সন্দেহ ও রোমাঞ্চের দোলাচল চলে এই পোশাককে ঘিরে। তাদের অতি কাব্যময় ও আকর্ষণীয় লাগে পাঞ্জাবিতে। এই আকর্ষণ পকেটমারদের কাছে আরও বেশি। কারণ পাঞ্জাবির পকেট কাটা তুলনামূলকভাবে সহজ। তাছাড়া বাঙালির পোশাকের নাম ‘পাঞ্জাবি’ এটা উত্তর ভারতীয় ও পাকিস্তানিদের কাছে খুবই বন্ধুত্বমূলক। শেরওয়ানি, প্রিন্সকোট ইত্যাদিতে বাঙালি পুরুষদের যাত্রাদলের নবাব বলে মনে হয়। তাই যারা এমন পোশাক পরেন তারা অতি অবশ্য সঙ্গে ব্যান্ড পার্টি রাখবেন।
এবার আসল কথা বলি, বাঙালি পুরুষ (তিনি বেঁটে, মোটা, কালো, টেকো যাই হোন) যদি দামি স্যুট পরেন তবে তাকে খুবই মালদার বলে মনে হয়। তাই দামি সুটের আকর্ষণই আলাদা। বেঁটে পুরুষদের জন্য টিপস: এলিভেটর হিল পরুন, বেলবটম প্যান্ট দিয়ে তা ঢেকে রাখুন। আপনার উচ্চতা সম্পর্কে একটা বিভ্রম সৃষ্টি হবে।

তানিয়া কামরুন নাহার

তানিয়া কামরুন নাহার লিখেছেন,

পুরুষদের পাঞ্জাবীতে দারুণ লাগে। ফ্যাশনেবল দাঁড়িতেও তাদের মানায়। আবার কয়েকদিন এলোমেলো থাকায় খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতেও বেশ লাগে ওদের। সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট পরার খুব চল রয়েছে পুরুষদের মধ্যে। অথচ এর উল্টোটা অর্থাৎ কালো শার্ট, সাদা প্যান্ট, এই কম্বিনেশনে ছেলেরা কেন পরে না, বুঝি না। দারুণ লাগবে কিন্তু!

হুমায়ূন আহমেদের “মেঘ বলেছে যাবো যাবো” তে ছেলেটিকে নীল শার্ট, সাদা প্যান্ট পরার কথা বলেছিল মেয়েটি। আফসোস কল্পনার চোখেই শুধু এমন পুরুষ দেখতে হয়েছে। বাস্তবে এখনো এমন পোশাকের কোন পুরুষ দেখিনি। ফতুয়াতেও ছেলেদের বেশ লাগে। এছাড়াও বিভিন্ন বাণী লিখিত টিশার্টে ক্যাচি লাগে।
হালকা কিংবা বড় বড় রংগিন ফুলেল শার্টেও কাউকে কাউকে মানায়। জিন্স, কালারফুল জেগিংসেও ওদেরকে বেশ লাগে। একটু বয়স হয়ে গেছে, আবার ভুঁড়িও বাগিয়ে ফেলেছেন, এমন কেউ যখন জিন্স পরে ইয়াং ইয়াং ভাব ধরে বয়স লুকানোর চেষ্টা করেন, উৎকট লাগে। মানিয়ে গেলে অবশ্য আপত্তি নেই। সবাইকে তো সব কিছু আর মানায় না!

চুলের বাটি কাট ভালো লাগে না। স্পাইক, ব্যাকহাম কাট, কিংবা ঝাঁকড়া চুল ভালো লাগে। কাউকে কাউকে ছোট্ট ঝুঁটিতেও মানায়। কিন্তু চুলের মধ্যে ছাগইল্যা কালার মারে যখন আর ভালো লাগে না।
টাক পরিত্যাজ্য। সম্পূর্ণ ন্যাড়া মাথা চলতে পারে। খালি গা কিংবা স্যান্ডো গেঞ্জি আর লুংগিতে মেয়েদের সামনে বের হওয়া অভদ্রতা। লুংগি পরা যেতে পারে, তবে অবশ্যই টিশার্ট বা ফতুয়া পরা থাকতে হবে। তবে যাদের ফিগার ভালো, মাসল টাসল আছে, সিক্স প্যাক আছে, তারা খালি গায়ে মেয়েদের সামনে বের হলে তেমন সমস্যা নেই। তাহলে এখন থেকে, নারীদের পছন্দ অনুযায়ী পুরুষেরা এসব সাজ-পোশাক চেষ্টা করে দেখতে পারেন।

শামীম আরা শিউলি

শিক্ষক ও সাংবাদিক শামীম আরা শিউলি লিখেছেন, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ কেন শাড়ি নিয়ে লিখতে গেলেন জানি না I এইটা কি উনার এরিয়া (বিষয়)? এই বিষয়ে উনার কি অভিজ্ঞতা আছে? উনি বরং লুঙ্গি নিয়ে লিখতে পারতেন I দেশের পুরুষদের ইতিহ্যবাহী এই পোশাকটি যে দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে, তা নিয়ে উনার কোন মাথা ব্যথা নেইI উনি পড়ে আছেন শাড়ি নিয়ে I

ব্যক্তিগতভাবে আমি লুঙ্গি পছন্দ করি না I এই কথা একবার বন্ধুদের আড্ডায় বলার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার খেতাব জুটেছিল ‘লুঙ্গি পড়া ভদ্র মহিলা’ I যাই হোক আমি পছন্দ করি আর নাই করি, বহু পুরুষের প্রিয় পোশাক লুঙ্গিI মাওলানা ভাসানীর লুঙ্গি পরা ছাড়া কোন ছবি দেখি নাই, বঙ্গবন্ধুর লুঙ্গি পরা ছবিও দেখেছি, আর আজকের ফরহাদ মজহারের লুঙ্গি প্রীতির কথা তো সবাই জানি I এই পোশাক সবাই পরতে পারে, তবে যারা খুব লম্বা তাদের কিন্তু মানায় না I কারণ পা বের হয়ে থাকে I খাটো মানুষদের কোন সমস্যা নাই I একটা বড় করে গিট্টু বাঁধতে হবে কোমরে I এই গিট্টুর কারণেই আমার লুঙ্গি অপছন্দ, বিশেষ করে সকাল বেলায় কাউরে ঘুম থেকে উঠে গিট্টু বাঁধাতে দেখলে আমার অসহ্য লাগেI তবে লুঙ্গি অনুরাগীদের কাছে এর চেয়ে আরামদায়ক পোশাক আর কিছু হয় না I দেশের আবহাওয়ার উপযোগী (সহজেই আলো-বাতাস ঢোকে), সস্তা, বানানো সহজ ছাড়াও এর আরও অনেক উপযোগিতা আছে, সব বলা যাচ্ছে না এখানে I

লুঙ্গি ব্যবহারকারীদের বহু মজার অভিজ্ঞতা শুনেছি, এর মধ্যে সেরা অভিজ্ঞতা ছিল আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের দুই বন্ধুর I রাতে লুঙ্গি পরে একই বিছানায় ঘুমিয়েছে, সকালে উঠে দেখে একজনের লুঙ্গি আরেকজন পরে আছে I যাই হোক এমন সহজ-সরল পোশাকের ব্যবহার দিন দিন কমে যাচ্ছে I আর যারা পরেন তারা নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হোন I ফরহাদ মজহারকে একবার লুঙ্গির কারণে ঢাকা ক্লাবে ঢুকতে দেয়া হয়নি I কয়েক বছর আগে বনানীর এক এলাকায় লুঙ্গি পরা রিকশাচালকদের নিষিদ্ধ করার পর, মনে আছে মানুষ প্রতিবাদ করেছিল I একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা‍র্থীরা লু্ঙ্গি পরে সাইকেল মিছিল করেছিল I আমরা কয়েকজন তখন ‘জাতীয় পোশাক লুঙ্গি চাই’ বলে একটা আন্দোলন করার পাঁয়তারা করেছিলাম I কী কারণে শেষ পর্যন্ত করা হয়নি এখন মনে পড়ছে না… সায়ীদ স্যার এই লুঙ্গির সঙ্কট নিয়ে লিখতে পারতেন !

(চলবে- নতুন নতুন মন্তব্য এখানে যোগ করা হবে)

শেয়ার করুন: