লতিফা আকতার:
কবিতার সাথে, প্রাসঙ্গিক বা অপ্রাসঙ্গিকভাবে জুড়ে দেওয়া নারীর শাড়ি পরিহিত ভিন্ন মাত্রার বহু ধরনে ছবি বহুবার চোখে পড়েছে। দেখেছি আর ভেবেছি যে – আসলে শাড়িতে নারী’র এই উপস্থাপনই পুরুষকে টানে। সে নারীকে এভাবে দেখতে পছন্দ করে।

গ্রিক পুরাণ হতে শুরু করে সর্বত্র নারীর সৌন্দর্যের জয় জয়কার। তা আমরা শিল্প সাহিত্যের পাতায় উপলব্ধি করি। যদিও গ্রিক পুরাণে পুরুষের সৌন্দর্যও কম যায় না। এই দুই সৌন্দর্যের ধারাবাহিকতায় পুরুষের লেখায়, আজও আধুনিক সমাজে নারীর সৌন্দর্য ফুটে উঠে। সেটা শরীরের বর্ণনায়, সেটা মনের। কিন্তু সময়ের ধারাবাহিকতায় নারীর অন্তর্মুখী স্বভাবের কারণে হোক, বা সামাজিক কারণেই হোক, তার সাহিত্যে শরীর কেন্দ্রিক সৌন্দর্যের বর্ণনার বিস্তৃতি খুব একটা চোখে পড়ে না।
রাজশাহী বরেন্দ্র জাদুঘরে গিয়ে আমার এক বিচিত্র অনুভূতি হয়েছিল। সদ্য মাস্টার্স শেষ করেছি। কাঠ পাথরের তৈরি বিভিন্ন ভাস্কর্যের শারীরিক গঠন এবং তার শরীরে সাধনা করে যে বস্ত্রের আভাস দেয়া হয়েছে বাস্তবে তাঁর উপস্থিতি কোথায়??
এরপর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় ভাস্কর্য দেখেছি। সব ভাস্কর্যে ই নারীর শরীর আর শাড়ি বাস্তবতাকে অতিক্রম করেছে। তখন বুঝেছি আসলে পুরুষের মননে নারীর অন্য এক সৌন্দর্য বাস করে। যা এসব জায়গায় ফুটে ওঠে।
বহুকাল পর আজ মনে হয় – যুগে যুগে নারীকে নিয়ে এই সব ভাবনার লোকজন সাহিত্যের পাতায় সম্মানের সাথে স্থান করে নিয়েছে। নারীকে বর্ণনা করে আয় করে নিয়েছে বহু অর্থ। মানুষের মনে উঁচু স্থানে জায়গা পেয়েছে। সেখানে নারীর মনও বাদ যায়নি। অথচ যাকে নিয়ে এতো সাহিত্য, সেই নারী যদি কারো কথা বলে, কিংবা নিজের কথাই তুলে ধরে তখন তা আর সাহিত্য মর্যাদা পায় না। হয়ে যায় নোংরামি। সাহিত্যিক হিসেবে নয়, ‘নষ্টা নারী’ হিসেবে পরিচিতি পায়। ক্ষেত্রবিশেষে দেশ ছাড়া হয়। কঠিন সত্য যে নারী তাঁর শাড়ি’র আঁচল নিজ ইচ্ছায় একটু এদিক ওদিক করলেও হাঙ্গামা দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়।।

এর বাস্তব ফলাফল হলো- নারী লতাপাতা নিয়ে সাহিত্য রচনা করে। ফুল লতাপাতা দিয়ে ওয়ালমেট সেলাই করে। পর্দায় ডিজাইন তোলে আর নিজেকে ঢেকে রাখে। অন্য কেউ কখনো যদি তাকে নিয়ে সাহিত্য রচনা করে তবে সে শিল্প হয়ে ওঠে। তার আর নিজের হওয়া হয়ে ওঠে না। সে নিজে হয়ে উঠতে গেলে সেটা সাহিত্য হয় না।
যাই হোক, নারীকে হয়তো কেউ কেউ কখনো কখনো মনের আলোয় দেখে। আলোকিত করে। এই সব আলোকিত মানুষের সংখ্যা এ সমাজে খুব বেশি নয়। সত্যিকারের আলোকিত পুরুষ মানুষ আদৌ কি আছে??
আলোকিত মানুষ হওয়ার স্বপ্ন দেখাতে হলে- নিজেকে কতোখানি আলোকিত হতে হয়!! আজ তা তালগোল পাকিয়ে গেছে। একজন আলোকিত মানুষ- বাঙালি নারীর ঐতিহ্যবাহী পোশাকের সবচাইতে সুন্দর একটি দিককে, ইঞ্চি ইঞ্চি মেপে যখন স্থুল বানিয়ে ফেলেন তখন আর এড়ানো যায় না। শাড়ির ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে(??)। আধুনিক যুগে প্রতিদিনকার ড্রেস হিসেবে শাড়ির প্রতি ঝোঁক কমছে। প্রয়োজনও একটা বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।তাকে পুনরুদ্ধার করার বিষয়ে প্রবন্ধ লিখা যায়। কিন্তু তা এভাবে!!
“স্যার”- যেকোনো পোশাকের ক্ষেত্রে সৌন্দর্য নির্ভর করে ব্যক্তি’র ক্যারি করার উপর। সেটা নারী পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য। আর হাইটকে এতো গুরুত্ব দেওয়া আপনার মতো একজন মানুষের কাছ থেকে আমরা কোন ভাবেই আশা করি না।