প্রবাসে বউ-শাশুড়ি সমাচার

রিমি রুম্মান:

তখন নিউইয়র্ক শহরে গ্রীষ্মের শেষে কেবল হালকা শীত পড়েছিল। সন্ধ্যা ঘনাবার কিছু পরের সময়। মোটামুটি রকমের ব্যস্ত এক আফগান রেস্তোরাঁয় দু’জন বসার মতো টেবিলের একপাশের চেয়ারে গিয়ে বসি। সেই মুহূর্তে আমি একা একজন কাস্টমার।

রেস্তোরাঁর দোতলার বিশাল অংশটুকুতে কাঁচের দেয়ালের পাশে আমি সবে খাওয়া শুরু করেছি। কিছু আগে পাশের টেবিলে এসে বসেছে বয়স্ক বাবা-মা সহ আরেকটি পরিবার। দুজন নারী-পুরুষ এবং তিনটি অল্প বয়সী ছেলেমেয়ে সাথে। তখনও কেউ আসেনি তাদের খাবারের অর্ডার নিতে। পরিবারটি নিজেদের মাঝে আলোচনা করছিল খাবারের মেনু বিষয়ে। শিশুরা সানন্দে মেনু দেখছে। পছন্দের খাবারে খুঁজছে।
শিশুদের একজন ওই নারীর গলা জড়িয়ে হ্যাপি বার্থ ডে গান গেয়ে উঠে। কথাবার্তা থেকে বোঝা গেলো পুত্র-পুত্রবধু এবং নাতি-নাতনিসহ দাদা-দাদী তারা। পুত্রবধুর জন্মদিনকে উপলক্ষ করে পরিবারটি ডিনারে এসেছে। খাবার অর্ডার করা নিয়ে সময় নিচ্ছিল পুত্র এবং পুত্রবধু।
শাশুড়ি বিরক্তি প্রকাশ করে বলেই ফেলেন, এই বয়সে বাচ্চাদের মতো জন্মদিন পালন করার আদিখ্যেতা অসহ্য! ব্যস, পরিবেশ গুমোট হয়ে উঠলো। যুবতী খাবার অর্ডার করতে অস্বীকৃতি জানালো। বাড়ি ফিরে যেতে চাইলো। চললো নিজেদের মাঝে ফিসফাস কথাবার্তা। ছেলে মাকে থামাবে, নাকি বৌয়ের মান ভাঙাবে এই বিশেষ দিনে! ঝলমলে উজ্জ্বল সময়টুকু বিষাদময় হয়ে উঠলো। জটিলতার আবহে থমকে গেল বিশেষ দিনের আনন্দময় সময়। ততক্ষণে আমি খাবার শেষে বিল পরিশোধ করে বেরিয়ে আসি।

আমি যখন প্রবাস জীবনের শুরুর দিকে একটি ফুড কর্পোরেশনে চাকুরি করতাম, সেই সময়কার এক সহকর্মিকে খুব মনে পড়ছিল সেদিন। কাজ শেষে আমরা যখন একটু গল্পে মশগুল হতাম, নিজেদের মাঝে নানান বিষয়ে হাসি ঠাট্টায় মেতে উঠতাম, তখন তাকে দেখতাম রুদ্ধশ্বাসে ট্রেন স্টেশনের দিকে ছুটতো। তার বাড়ি ফেরার বড় বেশি তাড়া। এতো তাড়া কীসের জানতে চাইলে বলতেন, যেসব নারী বিদেশ বিভূঁইয়ে শ্বশুর-শাশুড়ি নিয়ে একত্রে বসবাস করেন, তারা বড় বেশি দুর্ভাগা।
কেন? বাসায় মুরুব্বী স্থানীয় কেউ থাকলে যেকোনো পরিবারের জন্যে তা বাড়তি পাওয়া হবার কথা। বটবৃক্ষসম কেউ ছায়া দিয়ে আগলে রাখছেন গোটা পরিবারকে, এমনটি হবার কথা। কিন্তু আমার সহকর্মি বলেছেন ভিন্নকথা।

শাশুড়ি থাকায় বরং ব্যাপক যন্ত্রণায় আছেন তিনি। ট্রেন ঠিকমতো ধরতে না পারলে, বাড়িতে ফিরতে দেরি হলেই শাশুড়ি বিরামহীন প্রশ্ন করে যান। দেরি হইলো ক্যান, কাজ শেষে কই টো টো করতে যাও, ইত্যাদি। যদিও আমার সহকর্মির স্বামী বিষয়টি নিয়ে বিন্দুমাত্র শংকিত কিংবা চিন্তিত নন। তাদের নিজেদের মাঝে বিশ্বাস এবং বোঝাপড়া যথেষ্ট মজবুত।

আরেক পরিচিতজনের কথা বলি। প্রথমবার মা হবার সময়ে শাশুড়িকে এদেশে এনেছিলেন। গ্রীষ্মের বিকেলগুলোতে পার্কে দেখা হতো যখন, বেশ স্বতঃস্ফূর্ত উচ্চারণে বলতেন, শাশুড়ি এলে ভালোই হবে। বাড়িতে একজন মুরুব্বী থাকলে অনেকদিকেই চিন্তামুক্ত থাকা যায়। সন্তান জন্মদানের পর মাস ছয়েক আর দেখা নেই আমাদের। আচমকা একদিন ডাক্তারের ক্লিনিকে দেখা। আমরা আমাদের সন্তানদের নিয়ে ওয়েটিং এরিয়ায় অপেক্ষায়।
কেমন আছেন, জিজ্ঞেস করি। ভেবেছিলাম দ্বিগুণ উৎফুল্ল হয়ে শাশুড়ির সাথে ভালো সময় কাটানোর গল্প করবেন। কিন্তু না, মুখে আঁধার কালো মেঘ জমিয়ে জানালেন, মানসিক চাপের মাঝে সময় অতিবাহিত করছেন, এবং শাশুড়ি কবে দেশে ফিরে যাবেন সেই দিন গুনছেন।
কেন? ছোট্ট শিশুটিকে ঘন ঘন ব্রেস্ট ফিডিং করাচ্ছে না কেন, আলগা দুধ খাওয়াচ্ছে কেন, গায়ে তেল মালিশ না করে বেবি লোশান মাখাচ্ছে কেন, এমন অভিযোগ অনুযোগে অতিষ্ঠ করে পার করেছেন প্রথম কয় মাস। তারপর শুরু হল অন্য অভিযোগ। ব্লেন্ড করা খাবার খাওয়াচ্ছে কেন, হাতে মেখে খাওয়ায় না কেন, ডায়পার পরায় কেন, এটা বাচ্চাদের জন্যে অস্বাস্থ্যকর, নেংটি পরাইতে হবে … ইত্যাদি।
বাচ্চার মা জানালেন, এখানকার হাসপাতালগুলোতে শিশুদের লালন-পালন, কোন বয়সে কী খাওয়াতে হবে, কীভাবে পরিচর্যা করতে হবে, এমন সব বিষয়ে মায়েদের শিক্ষা দেয়া হয়, নির্দেশনা দেয়া হয়। ডাক্তারের কথা শুনবো নাকি শাশুড়ির কথা? তিনি বলেন, বিদেশে একজন মা তার সন্তানকে নিজের মতো করে পরিচর্যা করতেও বাধাগ্রস্ত হোন শাশুড়ি দ্বারা।

এবার আসি আমার ছেলের স্কুলের অন্য এক বাঙালি মায়ের কথায়। গ্রামের স্কুল শিক্ষক শাশুড়ি চাকুরিতে ইস্তফা দিয়ে এদেশে এসেছেন একমাত্র ছেলের কাছে থাকবেন সে পরিকল্পনায়। কিন্তু দুইমাস বাদেই ফিরে যান দেশে। আমরা ধরে নিয়েছিলাম বউ সহানুভূতিপরায়ণ হলে নিশ্চয়ই শাশুড়ি এদেশ ছেড়ে যেতেন না। যিনি মা তারও তো সন্তানের সাথে থাকবার অধিকার আছে। নিজে মা না হলে একজন মা কতটা ত্যাগ স্বীকার করে সন্তান লালন-পালন করেন, তা জানা হতো না পুরোপুরিভাবে।
একদিন নিজেই কথা প্রসঙ্গে জানতে চাইলেন, আপনাদের স্বামী-স্ত্রীর কথা কাটাকাটির সময়ে কি আপনার শাশুড়ি হস্তক্ষেপ করেন? আমি খুব স্পষ্টই বলি, ‘নাহ্‌’। অতঃপর তিনি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললেন, সংসারে নানান বিষয়ে স্বামী-স্ত্রীর মতবিরোধ দেখা দিতেই পারে। কমবেশি সব পরিবারেই এটি হয়ে থাকে। আমাদেরও হয়। ক্ষণিক বাদে সব ভুলে আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠি। কিন্তু বিরক্তির বিষয় হলো, কথা কাটাকাটির সময়ে শাশুড়ি অনবরত দরজা নক করতে থাকেন। আমাদের মাঝে উনার হস্তক্ষেপ করতেই হবে। স্বামী বারংবার তার মাকে বোঝাতে চেষ্টা করেন, আমাদের মাঝে তুমি কথা বলতে এসো না, মা। আমরা নিজেদের সমস্যা নিজেরা মিটিয়ে নিবো।
কিন্তু কে শোনে কার কথা! তিনি ছেলের পক্ষ নিয়ে বউকে উত্তপ্ত কথা শোনান। এতে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠে। কিন্তু পরবর্তীতে স্বামী-স্ত্রী স্বাভাবিক হয়ে উঠে। নিজেদের মাঝে হাসি ঠাট্টার সময় কাটায়, শপিং এ যায়। কিন্তু শাশুড়ি ভেতরে ক্ষোভ পুষে রাখে। সহজে ভুলে যেতে পারেন না। বউ শাশুড়ি কথা বন্ধ থাকে দিনের পর দিন। তার আর বিদেশ ভালো লাগে না। স্বেচ্ছায় ফিরে যান দেশে।

এবার আসি আরেকটি ঘটনায়। আমার বন্ধুর মুখ থেকে শোনা তার এক আত্মীয়ের গল্প এটি। পরিবারটি মিশিগান থাকে। এক ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে সংসার তাদের। উচ্চশিক্ষিত স্বামী। নয়টা পাঁচটা অফিস করেন। উইকএন্ডে সপরিবারে ঘুরতে যান দূরে কোথাও। রুটিন জীবন। সুখের জীবন। একদিন বাচ্চাদের দাদী এলো দেশ থেকে মিশিগানে বেড়াতে। তিনি লক্ষ্য করলেন, পুত্রবধূ রোজ বাচ্চাদের স্কুলে পাঠিয়ে, ঘরকন্নার কাজ সেরে ভিডিও কলে দেশে মা-বাবা, ভাই-বোনের সাথে কথা বলেন।
ব্যস, ছেলে অফিস শেষে বাড়ি ফিরলে জানান পুত্রবধূর দীর্ঘ সময় ফোনে কথা বলার বিষয়টি। এরপর থেকে কখনও রান্নায় লবন কম হলে স্বামীর তির্যক মন্তব্য, ‘সারাদিন ফোনে এতো কথা বললে রান্নায় মনোযোগ থাকবে ক্যামনে, সংসারে মনোযোগ নাই, এত কীসের কথা’ … ইত্যাদি। এমন করে প্রায়ই বিবাদ লেগে থাকে পরিবারটিতে। শান্ত পরিবারটি অশান্ত হয়ে উঠে। ছুটির দিনগুলোতে স্বামী-স্ত্রীর মুখ দেখাদেখি বন্ধ, ঘুরতে, বেড়াতে যাওয়া বন্ধ। একদিন বিবাদ চরমে গেলে তাদের মাঝে জীবনে প্রথমবারের মতো হাতাহাতি হয়। পুত্রবধুর শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। হাসপাতালে চিকিৎসা চলে। সোশ্যাল ওয়ার্কারদের উপর্যুপরি জিজ্ঞাসায় মেয়েটি কেঁদে ফেলে এবং স্বীকার করে পারিবারিক অশান্তির কথা। এরপর স্বামীকে ডেকে পাঠানো হয়। সময় বেঁধে দেয়া হয় মাকে দেশে ফেরত পাঠানোর। বেঁধে দেয়া সময়ের মাঝে মাকে দেশে পাঠানোর পরও সমস্যা পুরোপুরি মেটেনি। স্বামী ভদ্রলোককে নিয়মিত বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে হাজিরা দিতে হয়। পরিবারের সাথে, স্ত্রীর সাথে আচরণের বিষয়ে ক্লাস করতে হয়, শিক্ষা নিতে হয়।

এবার খুব কাছের এক পরিচিতের কথা বলি। ধরা যাক মেয়েটির নাম রেহানা। কনকনে শীতের সন্ধ্যা। নিউইয়র্কে শীতকালে পাঁচটা বাজতেই সন্ধ্যা ঘনায়। কিন্তু তাই বলে কিছুই তো আর থেমে থাকে না! কর্মস্থলে যাওয়া-আসা, উইকএন্ডে পার্টিতে যাওয়া, কিংবা অন্য যেকোনো প্রয়োজনে।

সেদিন ছিল শনিবার। দুপুর থেকেই শাশুড়ির ডাক্তার, মেডিকেইড কার্ড, হেলথ ইনস্যুরেন্স কার্ড সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যস্ত সময় কাটে রেহানার। এদিকে সন্ধ্যায় বান্ধবীর বাচ্চার জন্মদিনের দাওয়াত। বাড়ি ফিরে তৈরি হয়ে শাশুড়িকে বলেন,’আম্মা, যাচ্ছি, দুই ঘণ্টার মাঝেই ফিরে আসবো। বেশিক্ষণ থাকবো না। ‘শাশুড়ি চোখ কপালে তুলে রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে বলেন, ‘দু-ই ঘণ্টা! এই শীতের মইধ্যে বাইরে যাওনের দরকার কী?’ রেহানা ভাবে, সারাদিন ঠাণ্ডার মাঝে এতো কাজ করতে হয়েছে বাইরে, কই তখন তো বলেনি, এই শীতের মইধ্যে বাইরে যাওনের দরকার নাই!
মেয়েদের নিজের সামান্য আনন্দ, বিনোদনের জায়গাটুকুতেও বাধা! প্রতিনিয়ত এমন বাধা বিপত্তির কারণে রেহানা আর কখনোই তার শাশুড়িকে বলে বের হয় না। কোথায় যাচ্ছে, কেন যাচ্ছে, কখন ফিরবে কিছুই বলে না। তার ভাষায়, সম্মান ধরে রাখতে হয়, আদায় করে নিতে হয়। যেখানে রেহানার স্বামীর সাথে প্রতিক্ষণ কথা হচ্ছে, কোথায় কখন যাচ্ছে, আসছে, প্রযুক্তির কল্যাণে স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে জানান দিচ্ছে, নিজেদের মাঝে ভুল বুঝাবুঝির অবকাশ নেই, একের সাথে অপরের বোঝাপড়া ভালো, সেখানে কেনই বা অন্যজনের হস্তক্ষেপ মেনে নিবে?

আরেকজন মায়ের কথা বলি। ছোট ছোট তিনটি সন্তানকে নিয়ে কখনো স্কুলে, মসজিদে, কখনোবা লাইব্রেরীতে ছুটছেন দিনভর। স্বামীর একার উপার্জন, স্বামী যেন নিশ্চিন্তে কাজে বেশি মনোযোগ দিতে পারেন তাই একাই সংসারের বাজার থেকে শুরু করে বাচ্চাদের ডাক্তার, স্কুল মিটিং সব সামলান। বউমার এমন জীবন যাপনে বিরক্ত শাশুড়ি। বলেন, ‘হুদা কামে সারাদিন বাইরে বাইরে টো টো কইরা বেড়াও!’ এমন জীবন দেখতে নারাজ তিনি।
নিজের মেয়েরা বাইরে চাকুরি করছেন, বিদেশে নাতনি, নাত বউরা চাকুরি করছেন, কিন্তু পুত্রবধূ চাকুরি করতে চাইলে বলেন, ‘তোমার কাছে সংসার বড় নাকি চাকুরি বড়’! পুত্রবধূ যখন বিষয়টি বুঝিয়ে বলেন, ‘আপনার মেয়েরা, নাতনিরা, নাতবৌরা সংসার সামলে সুন্দরভাবে চাকুরিও তো করছে’, তখন শাশুড়ির বলেন, পুত্রবধু সঙ্গদোষে বেয়াদবি শিখেছে। সেই মা দীর্ঘশ্বাসের সাথে আমায় বলেন, ‘শাশুড়ি কখনোই মা হয় না, কখনোই না’। তিনি আরো বলেন, আপনি যখন সঠিক কথাটি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিবেন, তখন অবশ্যই আপনি চরম বেয়াদব। আপনি যদি নিজের ব্যক্তি স্বাধীনতা বিসর্জন দিয়ে সংসার করতে না পারেন, তবে অবশ্যই আপনি বেয়াদব।

বিদেশ বিভূঁইয়ে আমার চারপাশে একটু খেয়াল করলেই দেখতে পাই, বেশিরভাগ নারীই তাদের মাকে এদেশে নিয়ে আসেন। এতে ছোট ছোট সন্তানদের নিয়ে হিমশিম খাওয়া যান্ত্রিক এই জীবন অনেকটাই স্বস্তিদায়ক হয়। এর আরেকটি মূল কারণ হচ্ছে, মায়েদের বুঝিয়ে বলা যায়। মায়েরা মেয়েদের সমস্যাগুলোকে যেমন করে দেখে, শাশুড়িরা পুত্রবধূদের সেইভাবে সহনীয়, সহজভাবে দেখতে নারাজ। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, প্রত্যেকেরই নিজস্ব স্বাধীন একটি জীবন আছে। শাসনের নামে সে জীবনে কেউ অযাচিত হস্তক্ষেপ করুক, কেউই তা চায় না।

উপরে বর্ণিত চিত্রটি আমাদের চারপাশের খুব চেনা চিত্র। বর্ণিত ঘটনার শিকার প্রতিটি নারী দীর্ঘশ্বাসের সাথে যে লাইনটি আওড়িয়েছেন, তা হচ্ছে, ‘শাশুড়ি কখনোই মা হতে পারে না’। তবুও আমি বলি, হয়। শাশুড়িও মা হয় যদি পুত্র-পুত্রবধূর বিরোধের মাঝে হস্তক্ষেপ না করেন, পুত্রবধু সারাদিন কী করছেন না করছেন সেইসব বলে পুত্রের কান ভারী না করেন! সে যে সংসার, সন্তানের জন্যে দিনমান পরিশ্রম করছে সেজন্যে কিছু না করতে পারলেও অন্তত ‘হুদা কামে বাইরে টো টো করে’ টাইপের কথা বলে তার মন বিষিয়ে না তুলে।

আবার পুত্রবধুরাও শাশুড়ির দোষত্রুটি স্বামীর সাথে শেয়ার না করাটাই উত্তম। তোমার মা এটা বলেছে, ওটা বলেছে এমনটি বলাটা বোকামি। কেননা এতে হিতে বিপরীত হবার আশংকা শতভাগ। এতে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর মন বিষিয়ে উঠাটাই স্বাভাবিক।

মনে রাখবেন, যে কোনো সন্তানের কাছে মা, মা-ই। কোন মানুষই দোষত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়। প্রতিটি সন্তান জানে তার মায়ের দোষত্রুটি। কিন্তু স্ত্রীর মুখে যে স্বামীটি তার নিজের মায়ের দোষত্রুটির কথা নালিশ আকারে শুনলো, দিনশেষে তার করণীয় কী? সন্তান কি মায়ের বিচার করতে পারে? নাকি করাটা শোভন? তাই যতটুকু মানিয়ে নিয়ে পরিবেশ সহনীয় রাখা যায়, সে চেষ্টা করাই উত্তম। ভুলত্রুটিগুলো কাউকে না বলে বরং এড়িয়ে যাওয়াই উত্তম।

ফিরে যাই সেই শুরুর কথায়, রেস্তোরাঁর ঘটনায়। একজন শাশুড়ির কাছে পুত্রবধূর জন্মদিন পালন, বাইরে ডিনার করা আদিখ্যেতা হতে পারে। কিন্তু পুত্র, নাতি, নাতনিদের কাছে বিশেষ আনন্দে উদযাপনের দিন সেটি। শাশুড়ির হয়তো বয়স হয়েছে। অনেক কিছুই তার ভালো না লাগাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যুবতী পুত্রবধু, যুবক পুত্র, নাতি, নাতনি এদের তো এখনই আনন্দ করার সময়। তাদের আনন্দ উল্লাস করতে দিন। জীবনটাকে উদযাপন করতে দিন, যেমনটি তাদের বয়সে আপনিও করেছিলেন। পিছনে তাকিয়ে দেখুন তো, একদিন আপনিও কি করেননি?

কুইন্স, নিউইয়র্ক

শেয়ার করুন: