উইমেন চ্যাপ্টার:
‘এক টাকায় আহার’ বিতরণকারী বেসরকারি চ্যারিটি সংস্থা বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন এখন সুবিধাবঞ্চিত মেয়েদের মধ্যে মাত্র পাঁচ টাকায় স্যানিটারি প্যাড বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে। সংস্থাটিরই অন্তর্ভুক্ত বাসন্তী গার্মেন্টস তৈরি করছে এই প্যাড।
সংস্থাটি এক বিবৃতিতে লিখেছে, ‘মেয়েদের জীবনে ঋতুস্রাবের সপ্তাহটি প্রচণ্ড যন্ত্রণার। কিন্তু এই কষ্টের অনুভূতির চেয়ে মেয়েদের কাছে বেশি মুখ্য থাকে বিব্রত এবং লজ্জাবোধের অনুভূতিগুলো। সমাজ এই পিরিয়ড বা মাসিক সংক্রান্ত পুরো বিষয়টাকেই ট্যাবু বানিয়ে দিয়ে এমন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে যে এ থেকে উত্তরণের বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে না।
একটা বিষয় অবাক লাগে যে এই যন্ত্রণার সময়টি ঘিরেও ব্যবসা আছে। যে পণ্যটা এই সময়ে খুবই আবশ্যক সেটি বিক্রিতে অনেকে লাভের ক্যালকুলেটর চাপে। ফলে বাধ্য হয়ে অস্বাস্থ্যকর কাপড় ব্যবহার করায় ক্যান্সারের মতো মারণঘাতী রোগ ছাড়াও নানা ধরনের শারীরিক জটিলতার ঝুঁকি থাকে।
এর সমাধানে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন সস্তায় সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মাঝে স্যানিটারি প্যাড পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। মাত্র পাঁচ টাকায় এই প্যাড পাওয়া যাবে বিভিন্ন বস্তি এবং স্টেশনগুলোতে। ইতিমধ্যে ফাউন্ডেশনের বাসন্তী গার্মেন্টসে প্রডাকশন শুরু হয়েছে’।
বিবৃতিতে আরও জানায়, এখনও প্যাড প্রতি দুই টাকা করে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে তাদের। তবে আশা করছে যে উৎপাদন খরচ আরও কমানো সম্ভব হবে।
পিরিয়ডকালীন অবস্থা সম্পর্কে সচেতন করতে প্রথম তিন লাখ প্যাড বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে, যা আগামী মাস থেকেই শুরু হবে বিভিন্ন স্কুলগুলোতে। পরবর্তিতে মাত্র পাঁচ টাকায় বিক্রি করা হবে। প্রতি প্যাকেটের দাম পড়বে ২৫ টাকা, তবে তাদের বিক্রয়ের আপাতত চ্যানেল নেই, প্রথমে তিন লাখ বিতরণ হবে। সংখ্যাটা আরও বাড়বে দিনে দিনে।
এরকম প্রজেক্ট কেন নিলেন, এর উত্তরে কিশোর বলেন, ‘ মা’কে ন্যাকড়া ব্যবহার করতে দেখছি আজীবন, বুদ্ধি হওয়ার পর বুঝি এই ন্যাকড়া ক্যান্সারও আনতে পারে। এখনও সাহস করে বলা হয়নি মা’কে প্যাড ব্যবহার করতে। মা’কে নিয়ে সে ভয় অনুপ্রাণিত করছে প্যাড নিয়ে কাজ করার পিছনে। আর সস্তায় বানানোর চাপটা অনুভব করছি আরেকটা ঘটনা থেকে – আমার খুব কাছের এক বন্ধু আছে যে কয়েক দুপুর আধাপেটে থাকতো প্যাডের টাকা ম্যানেজ করতে।তিনি আরও বলেন, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে এ নিয়ে পরিকল্পনা করলেও তিন বছরের কাছাকাছি শুধু এসব নিয়ে গবেষণায় ছিলাম। প্রথমে নিজেরাই কাজটা শূন্য থেকে করার ইচ্ছা ছিলো, পরে তা ব্যর্থ হয়, এরপর বিভিন্ন স্টেজ পার করে শেষ পর্যন্ত আজকের এই আউটসোর্স মডেল।
উইমেন চ্যাপ্টার এর পক্ষ থেকে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনকে অনেক ধন্যবাদ দেশের মেয়েদের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা চিন্তা করে এরকম একটি উদ্যোগ নেয়ার জন্য।