শাহরিয়া দিনা:
ঘরে সুন্দরী বউ রেখে অন্য মেয়ের সাথে শারীরিক সম্পর্কের খবর শুনে বা দেখে যেভাবে মানুষ বলে, এমন বউ রেখেও কেউ কীভাবে পারে! হাস্যকর লাগে, যেন বউ অসুন্দরী হলে বাইরে কিছু করাটা জায়েজ ছিল।
কার, কাকে, কেন, ভালো লাগে সেটা কে জানে? প্রিন্সেস ডায়নার রূপের কাছে ক্যামেলিয়া পার্কার কিছুই না। ‘ডায়না’ মুভিটা আমার লাইফে অন্যতম দেখা সেরা মুভি যা আমাকে ভাবিয়েছে অনেকদিন। মেধা যোগ্যতায় অনন্যা বিশ্বের কোটি মনে কাঙ্ক্ষিত, অথচ স্বামীর কাছে ছিলেন অবহেলিত। ভালোবাসার জন্য হাসনাতের কাছে ছুটে গেছেন কিশোরীর মতো সব নিরাপত্তার চোখ পলিয়ে। হাসনাত ভালোবাসা দিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু ছিলেন ভীষণ বদমেজাজি। টিকলো না সম্পর্ক। রাজকীয় সুখী নারীর আড়ালের এক দুঃখী প্রেমিকার জন্য সিনেমা শেষে আপনার মন খারাপ হবেই।
ক্লিনটনের মনিকা কেলেংকারির পরও হিলারি ছিলেন তার সাথে। অথবা আমাদের দেশের এরশাদকে ডিভোর্স দেয়নি রওশনও। মৃত্যু পর্যন্ত পাশে থেকেছেন। দেশে দেশে স্বামীর প্রভাব-প্রতিপত্তি দরকার মেয়েদের জীবনে।
এই সময়ের আলোচিত সংবাদ জামালপুরের ডিসি কাহিনীর স্রষ্টা সেই ডিসি’র বউও হয়তো থাকবেন তারই সাথে। টাকা ক্ষমতা থাকলে পুরুষের এমন একটু দোষ থাকতেই পারে ব্যাপার না। কিন্তু এটা আবার মেয়েদের বেলায় হলেই বিশাল ব্যাপার।
এদেশে বিয়ে হয় দুই পরবারের সামাজিক অবস্থা বিচারে। ছেলের দুলাভাইয়ের কয়টা বাড়ি, চাচাতো মামার কয়টা গাড়ি পাত্রীপক্ষ দম্ভভরে প্রচার করলেও অজানা রয়ে যায় ছেলেমেয়ের চরিত্রের ব্যাপারটি। আবার চরিত্র জিনিসটা ধ্রুবক না যে আজীবন অপরিবর্তিত থাকবে। একটা ছেলে যে কিনা ছাত্রজীবনে খুবই সৎ এবং ভালো ছিল সে-ও কিন্তু একটা সময়ে এসে দুর্নীতিবাজ, চরিত্রহীন হতে পারে। একটা হচ্ছে খারাপ ছিল খারাপই আছে, অন্যটা হচ্ছে ভালো ছিল খারাপ হয়েছে। আসলে আমাদের সমাজে বেশীরভাগ সুযোগের অভাবে চরিত্রবান বলেই হয়তো এমনটা দেখা যায়।
সেক্সুয়্যালিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার বিবাহিত জীবনে। একজন আরেকজনের চাহিদা পূরণ করতে না পারলে কেউ কাজের মেয়ের ঘরে যায়, কেউ ড্রাইভারকে বেডরুমে আনে, তবু সাইনবোর্ড ঠিক থাকে। পার্টনারের কাছ থেকে অপ্রাপ্তি বা যেকোনো কারণেই হোক অন্য কোথাও ভালোলাগা, ভালোবাসা তৈরি হতে পারে, কিন্তু কোন একজনকে ঠকিয়ে নয়। একটা মানুষকে দিনের পর দিন এভাবে ঠকানো মানে তাকে মানিসিক নির্যাতন করে ধীরে ধীরে মেরে ফেলা। সমাজে ভারসাম্যহীনতা তৈরি করা।
ডিভোর্স শুনলে এ সমাজ নাক সিঁটকায়, চরিত্রে দোষ আছে এমনটাও মনে করে। কিন্তু কী জানেন, ডিভোর্স কেউ শখ করে দেয় না, বাধ্য হয়েই দেয়। সংসার মানে স্বপ্ন। একটা স্বপ্নের কবর দেয়া কতটা কষ্টের এবং এর পিছনে থাকে কত স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা, তা ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ জানে না। ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর দিকে ঢেলে দেয়া সেইসব প্রতারকদের কেউ খুনি বলে না। বহাল তবিয়তে থেকে যায় তারা। আর্থিক নিরাপত্তার অভাব এবং সামজিক তিরস্কার জেনেও বাঁচতে চাইতে এবং ডিভোর্স দিতে একখানা আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন শক্ত মেরুদণ্ড লাগে। যা অনেকেরই অনুপস্থিত।
ধর্মীয় ব্যাপার যদি বাদও দেই, দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ নিজেদের ইচ্ছায় শারীরিক সম্পর্কে মিলিত হতে পারে, কিন্তু সংসার যেখানে একটা প্রতিশ্রুতির ব্যাপার সেখানে থেকে অন্যের সাথে এমন কিছু করাটা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই না। একজন প্রতারকের সাথে থাকলে সমাজ সংসার রক্ষা হয়, ছেড়ে দিলেই বরং খারাপ হয়ে যায়।
এদেশের নারীরা অনেকটাই অসহায়। ধর্মীয়, সামাজিক, পারিবারিক, বিচারিক, রাজনৈতিক সবদিক থেকে কষ্ট করতে হয়। প্রতারণা মেনে, প্রতারক জেনেও সয়ে যেতে হয়। আবার নিজ থেকে কিছু করতে গেলে সমাজের দোহাই দিয়ে নারী-পুরুষ সবাই বলবে ভাগ্য বলে মেনে নাও।
দুঃখজনক সত্যিটা হচ্ছে, নারীদের নিন্দায়, পেছনে টেনে ধরায় নারীরাই আবার এগিয়ে।