প্রমা ইসরাত:
কচ জুম্মাবারে রওনা দিলো, তার উদ্দেশ্য সঞ্জীবনী বিদ্যা অর্জন করা।
কচ দেবতাদের পুত্র, তবুও বিদ্যা অর্জনের জন্য শুক্রাচার্য এর কাছে এলো। বিদ্যা অর্জনের জন্য চীন দেশে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে, আর এটা তো অসুরলোক।
কচ সেখানে পৌঁছালে দেবযানীকে দেখতে পেলো। কচ দেখতে টল, ডার্ক, হ্যান্ডসাম। দেবযানীও বিদ্যা-বুদ্ধি-সৌন্দর্যে দারুণ, দেবযানী সেখানে নীল পতাকা হাতে মিছিল করছিলো।

কচ দেখলো, দেবযানীকে পটাতে হবে।
কচ দেবযানী’র পিছনে পিছনে নীল পতাকার মিছিলে ঢুকে গেলো।
দেবযানী তার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে মুগ্ধ হয়ে গেলো। দেবযানী দেখলো, কচ কী সুন্দর আবৃত্তি করে, গান গায়, ছবি আঁকে। দেবযানী শুক্রাচার্যের কাছে আবদার করলো, তাকে যেনো তাদের কমরেড বানিয়ে দেয়া হয়।
শুক্রাচার্য উদার, প্রগতিশীল, তিনি তাকে আগে নীল পতাকার নিচে যেতে বললেন, পাশাপাশি লাল পতাকার কথা তাকে বলতে লাগলেন।
কচ তার চার্মিং ভাব দেখিয়ে দেবযানী’র উপর লাভ বোম্বিং করতে থাকলো।
আশেপাশের অনেকেই এই নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলো।
কারণ কচ এর সাথে জ্যোতি’র, যার কিনা সব থেকে ভালো দেয়াল ও পোস্টার লেখার হাত ছিলো, তার সাথে তর্ক লেগে গিয়েছিলো।
কচ বলেছিলো আপনারা শুধু ‘জয়বাংলা’ বলেন কেন? পরের লাইনটা বললে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়?
এটা কি রাশিয়া? যে ওখানে বৃষ্টি হলে এইখানে ছাতা ধরবেন?
অন্যান্য সবাই বললো, এটা কী ধরনের কথা? আমাদের আদর্শ মানুষের মুক্তির আদর্শ। শ্রেণিহীন সমাজের চিরবাসনায়, দিন বদলের গানে ভরা চেতনায় আমরা চলি। আপনি কি বলতে চাচ্ছেন এই ৫৬ হাজার বর্গমাইলেই মানুষ আছে?
কচ বললো, হ্যাঁ এই ৫৬ হাজার বর্গমাইল পুরোটাতেই শুধু ওই দুটি স্লোগান চলার কথা ছিলো।
জ্যোতি বললো, ছিলো, যদি আপনি ইতিহাস ঠিকমতো জেনে নিতেন তবে।
আমরা প্রথম লাইনটি নিয়ে তো আপত্তি করিনি। সেটা অস্বীকার করা সম্ভব না।
কিন্তু দ্বিতীয় লাইনটি মানুষের উপর জোর করে চাপিয়ে দেয়া।
আপনারা যে নীতি করেন, তা ভোগ ও দখলের, সেটা পেশী শক্তি প্রদর্শনের, এই নীতি শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের নীতি না।
কচ বললো, ও আর আপনাদের এই সকল কথা কি এই সাধারণ মানুষ বোঝে?
আপনারা তো তত্ত্ব নিয়ে ঝগড়া করে, আলাদা হওয়া লোক।
এই নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে গেলো চারপাশ।
শুক্রাচার্য সবাইকে ডেকে বেশি বেশি পড়াশোনা করার উপদেশ দিলেন।
এর মধ্যে কচ এর উদ্দেশ্য সফল হলো।
শুক্রাচার্য ভাবলো, তাকে লাল পতাকা তুলে দেবেন কিনা।
কচ বললো, তার নৌকা রেডি, সে এখন দেবালয়ে চলে যাবে।
শুক্রাচার্যের জোর করার ছিলো না, কারণ নীল পতাকা, লাল পতাকার অঙ্গসংগঠন না।
দেবযানী এর মধ্যেই কচের সাথে একগামী সম্পর্কে কমিটেড।
তার ভেতরে কচ ছাড়া আর কিছুই নাই।
কচ বললো, তুমি অসুরকন্যা, উই আর জাস্ট গুড ফ্রেন্ডস।
আমার মা অনেক কনজারভেটিভ। বিয়ের পর এইসব নাচ গান ছেড়ে দিতে হবে, পর্দানশীন হয়ে থাকতে হবে।
আমি বরং তোমাকে বর দেই,
তুমি ভুলিয়া যাইবে সব বিপুল গৌরবে…
দেবযানী রাগে, দুঃখে অপমানে কচকে অভিশাপ দিলো, যে তার অবস্থা হবে ধোপার কুকুরের মতো, না ঘরকা না ঘাটকা।
কচ বললো
তুমি নারী, স্ত্রী কন্যা ভগিনী মা,
তোমার হৃদয় থাকবে কোমল
মেয়েদের রাগ থাকতে নেই। এমন করলে কেউ তোমাকে বিয়ে করবে না।
দেবযানী বললো,
নারী? স্ত্রী, কন্যা ভগিনী মাতা?
কোমল হৃদয়, বিকজ আমি নারী? রাগ থাকতে নেই বিকজ আমি নারী? এই নারীর মূল্যায়ন?
how পুরুষতান্ত্রিক is this?
কচ বললো, such a নারীবাদী you are!!
মগডালে বসা রবীন্দ্রনাথ কপাল চাপড়ে বলে উঠলেন
– বিদায় অভিশাপ!!