কাম অন বেবি…প্লিজ গ্রো আপ!!!

সান্দ্রা নন্দিনী:

আমাদের এই উপমহাদেশে ছেলেমেয়েদের মেলামেশার স্বাভাবিক কোনও পরিবেশ নেই বলে এদের মধ্যকার সম্পর্ক অস্বাভাবিক, জড়সড় এবং প্রেম-প্রীতি-ভালবাসা অথবা আরও পরিষ্কারভাবে বলতে গেলে একটা সেক্সনির্ভর সুড়সুড়িপ্রধান সম্পর্কের বাইরে আর বেরুতে পারে না।

এখানে একটা ছেলের সাথে একটা মেয়ের স্বাভাবিক ও অত্যন্ত ভদ্রতাপূর্ণ আচরণের অনুবাদও ‘লটর-ঘটর’ কিংবা ‘ডালমে কুছ কালা হ্যায়’ হিসেবে হয়। আর স্বাভাবিক সৌজন্য দেখিয়ে কোনও মেয়ে বা ছেলে বিপরীত লিঙ্গের কারওসাথে মিশতে চাইলে বা তার ব্যাপারে আগ্রহী হওয়া মানেই তার সাথে ‘ওইরকম’ কোনও সম্পর্কে যাওয়ার চেষ্টার বহিঃপ্রকাশ!

তাই পাড়া-মহল্লা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মস্থল কিংবা একালের ফেসবুকে বিপরীত কারও সাথে(বার বার লিঙ্গ লিঙ্গ লিখতে অসহ্য লাগছে!!) কথা বলা, মেশা কিংবা তার প্রতি আগ্রহ বা কৌতুহল প্রকাশ করা অত্যন্ত গর্হিত একটি বিষয়।

আর এতে তারা নিজেরা তো অস্বস্তিবোধ করেই তাতে আরও ঘি ঢালার কাজটি অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে পালন করে চলেন আশেপাশের মানুষজন। এমনকি পরিবারের সদস্যরাও এর বাইরে নয়।
দু’জন ছেলেমেয়েকে একসাথে দু’দিনের বেশি তিনদিন কথা বলতে, মিশতে বা ফেসবুকে সময় দিতে দেখা মানেই বেশ রগরগে, জম্পেশ একটা আলোচনার সুযোগ পাওয়া গেল। এরপর এটা নিয়ে চলবে ফিসফাস, পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় টিটকারি-টিপ্পুনি কিংবা একে অন্যকে কনুইয়ের খোঁচা বা চিমটি দিয়ে মজার একটা দৃশ্য দেখানো ইত্যাদি ইত্যাদি…।

আবার এদের মধ্যে কোনও এক বা দু’জনই যদি বিবাহিত, সেপারেটেড অথবা ডিভোর্সি হয়, উফ! তাহলে তো ছবি পুরোই ব্লকবাস্টার হিট! পাবলিক যা খাবে না! যাকে বলে একেবারে কেএফসি’র কুড়মুড়ে, মুচমুচে হট এন্ড স্পাইসি ফ্রায়েড চিকেনের মর্যাদা পাবে সে কাহিনী! যাই বলেন ‘পরকীয়া’ কিন্তু সবসময়ই খুব চালু টক-মিষ্টি-ঝাল চানাচুরমার্কা বিষয় আমাদের কাছে!

অথচ নারী-পুরুষের মধ্যকার সম্পর্ক কত ধরন, রকম, কত রংয়ের আর কত যে বৈচিত্র্যময় হতে পারে, তা শুধুমাত্র অনভ্যস্ততার কারণে আমাদের এই মহান সমাজের মাথামোটা মানুষগুলোর দৃষ্টি এড়িয়ে যায়!

নারী-পুরুষ মানে তো ভিন্ন কোনও বিষয় নয়, তারা মানুষই হয়। তাই দু’জন মানুষের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠাটাও খুব স্বাভাবিক। কেবল নারী-পুরুষ বলেই তারা প্রেমিক-প্রেমিকা কিংবা লিটনের ফ্ল্যাটে গিয়ে দিনের পর দিন চুটিয়ে সেক্স করে যাচ্ছে এমন ভাবাটা এবার বন্ধ করা যায় কিনা একটু ভেবে দেখতে পারেন।

দুইজন প্রতিবেশী, সহপাঠী, সহকর্মী, বন্ধুর বর বা বউ, বড় বা ছোট ভাই কিংবা বোনের বন্ধু, কোনও ফেসবুক-বন্ধু অথবা তারও বন্ধুর বন্ধুর সাথে যদি স্বভাব-রুচি-পছন্দ-অপছন্দ-ভালোলাগা-মন্দলাগা-আগ্রহের বিষয় মিলে গিয়ে একটা খুব চমৎকার সম্পর্ক গড়ে ওঠেই, তাহলে আপনার বা আমার কী সমস্যা সেখানে? যারসাথে মনের-রুচির-সংস্কৃতির মিল বেশি হয় সেই তো বন্ধু হয়। হতে পারে তাদের দু’জনের বয়স, আর্থিক অবস্থা বা সামাজিক অবস্থানের মাঝখানে এক যোজন দূরত্ব। তারপরও তো দারুণ একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে এগুলোর কোনটিই বাধা হওয়ার ক্ষমতা রাখে না।

তবু ভাই যাই বলা হোক না কেন আপনি তো সেসবের ধার ধারেন না, কেননা ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ দেখে আপনি জেনে গেছেন যে ছেলে-মেয়ে, নারী-পুরুষের মধ্যে কখনো নির্মল বন্ধুত্ব হতে পারে না, মাঝখানে প্রেম এসে খাড়া হয়ে যাবেই যাবে! যত্তসব বুলশিট, বোগাস আর রাবিশ কথাবার্তা। আর তাছাড়া দু’জন মানুষ যদি ভাবে যে তারা তাদের সম্পর্ককে শারীরিকভাবেও এগিয়ে নেবে তাতেই বা আপনি কিংবা আমি নাক গলানোর কেরে ভাই?

মানুষে মানুষে সম্পর্ক খুব নিজস্ব-স্বতঃস্ফূর্ত ছন্দে বয়ে চলে। আমরা অত্যন্ত নিম্নমানের মানসিকতার বলেই এই ছন্দকে বুঝতে না পেরে প্রথমত এড়িয়ে চলি, তারপর যদি বুঝেও যাই, তখন সমাজ তথা চারপাশের মানুষ কীভাবে নেবে, কী বলবে না বলবে ভেবে-টেবে সে সম্পর্ককে একেবারে বলাৎকার করে তার স্বতঃস্ফূর্ততা পুরোপুরি নষ্ট করে দেই এবং সম্পর্কের লাগাম টেনে ধরে তা পারিবারিক-সামাজিক-রাষ্ট্রীয় ছাঁচে ফেলে হালাল করার চেষ্টা করি। আর না পারলে সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেই। কেননা আমরা যে সৃষ্টির সেরা জীব – মানুষ। আর মানুষ মানেই তো সামাজিক জীব। সমাজ নিয়েই আমাদের চলতে হয়। সমাজের মানুষ ছাড়া আমরা এক মুহূর্তও চলতে পারি না ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি…ব্ল্যা ব্ল্যা ব্ল্যা…চলছে চলবে…!!!

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.