তালাকনামা এবং ধর্মের ধ্যাষ্টামো

সরিতা আহমেদ:

ভারতে গত ৩০ শে জুলাই ২০১৯ একটা ঐতিহাসিক বিল পাশ হয়েছে পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষে। নাম – ‘প্রটেকশান অফ রাইটস অন ম্যারেজ ট্যু উইমেন বিল’ সংক্ষেপে ‘তিন তালাক (তালাক-এ-বিদ্দত) বিল ২০১৯’। যে দেশে হিন্দুত্ববাদীদের সাথে ছদ্ম সেকুলারদের এতো রমরমা সেখানে এই বিল উত্থাপনের জন্য ভোটাভুটিতে ৯৯ টি ভোট পড়ে এই তালাক নিষেধ বিলের পক্ষে, ৮৬ টি ভোট পড়ে বিপক্ষে। খুব স্পষ্টভাবেই বিলবিরোধী এই জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে মিডিয়া থেকে আম জনতায় বিতর্ক ঘনায়।

আর তারপর থেকে সব টিভি চ্যানেলে, রাস্তার চায়ের ঠেকে অথবা মধ্যবিত্তের বাড়ির ডাইনিং টেবিলে কাজিয়ার ছড়াছড়ি।
কাজিয়া হচ্ছিল তালাকনামা নিয়ে।

কাজিয়ার শুরুটা এমন হয়েছিল – “মুসলিমদের মধ্যে বিয়ের সময় “কবুল, কবুল, কবুল” বলাটা যদি হবু স্ত্রীর অধিকারে থাকে, তবে “তালাক তালাক তালাক” বলার অধিকার একা স্বামীর থাকবে কেন?”
ইন্টারেস্টিং প্রশ্ন নিঃসন্দেহে।
তাতে একজন বলে, ইসলামে তালাক দেওয়ার অধিকার কেবল স্বামীকেই দেওয়া হয়েছে, স্ত্রীর হাতে তা দেওয়া হয়নি। কেননা নারীদের স্বভাবে সাধারণত তাড়াহুড়ো করার প্রবণতাটা বেশি।

বড্ড ইম্পালসিভ! তাই তাদের তালাকের ক্ষমতা দিলে ছোটখাটো বিষয়েও তাড়াহুড়ো করে তালাক দিয়ে দেওয়ার আশঙ্কা বেশি। সুতরাং অধিক পরিমাণে বিবাহ বিচ্ছেদ রোধেই ইসলাম নারীদের তালাকের ক্ষমতা দেয়নি।

বহিরাগত হিসেবে আমি মনে মনে রিভাইস করছিলাম ইসলাম শাস্ত্রে নারীদের ব্যাপারে কী কী শস্ত্র শানানো রয়েছে।
‘তালাক’ শব্দটি নাকি অত্যন্ত ঘৃণ্য আল্লাপাকের কাছে। কোনও লোক এই শব্দ উচ্চারণ করলে তাতে নাকি “আল্লাহর সিংহাসন কেঁপে ওঠে।”
-এইটা জ্ঞান হওয়ার পর থেকে নিজের বাপ-চাচা, পাড়ার মোল্লা, মাস্তান, হাজি এবং পাজি প্রায় সকল শ্রেণির মুসলমানদের মুখেই শুনেছি।

লেখক: সরিতা আহমেদ

তা এমন কাঁপাকাঁপি বাচক ঘৃণ্য শব্দ আল্লাপাক তার বইয়ে স্থান দেন কেন! বললেই তো পারতেন, বিয়ের ঝামেলা কাঁধে বেশিদিন বইতে না পারলে নিজ নিজ সম্মান নিয়ে নাগরিক দেশের আইন অনুযায়ী কেটে পড়াই শ্রেয়। এতোই যদি ‘তালাক’ শব্দে আল্লাহর চেয়ার টলমল করে, তবে দুনিয়াজুড়ে যে হারে ফোনে, স্কাইপে-তে, চিরকুটে, টিস্যু পেপারে পুরুষরা তালাক দিচ্ছে, তাতে তো আল্লাহর চেয়ারচ্যুত হয়ে মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়ার কথা!

এ কথা মুমীনদের বলা যাবে না। রে রে করে তেড়ে আসবে চাপাতি হাতে। কারণ তাদের আল্লা কেবল তরবারির ডগায় ‘সবক শেখাতে’ বলেছে। যে আল্লাপাক সিংহাসন টলিয়ে দেওয়ার মতো তালাক প্রথার হক দেয় শুধু পুরুষের হাতে, সেই একই আল্লাপাক নাকি নারীদের দিয়েছে সর্বোচ্চ সম্মান।

সেটা কেমন, তালাক নিয়ে কোরান কী বলছে একটু দেখে নিই –

“তুমি যদি স্ত্রীর অবাধ্যতা কিংবা আনুগত্যের কিছু অভাব অনুভব করো, তবে
(ক) সর্বপ্রথম সবর করো এবং তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে মানসিকভাবে তাকে সংশোধন করো। এতে যদি কাজ হয়ে যায় তাহলে বিষয়টি এখানেই মিটে গেল।
(খ) আর যদি এতে কাজ না হয়, তাহলে তাকে সতর্ক করার জন্য এবং নিজের অসন্তুষ্টি প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে একই ঘরে পৃথক বিছানায় শয়ন করবে।
(গ) আর যদি এটাতেও কাজ না হয়, তাহলে তৃতীয় পর্যায়ে স্ত্রীকে প্রহার করো।”

উল্লেখ্য এখানে, “তুমি” হচ্ছে মানুষ, অর্থাৎ পুরুষ। ইসলামে কোরানসম্মত মানুষ হলো একমাত্র ‘পুরুষলোক’, মহিলারা সেই ‘তুমি’দের ‘মাল’, অর্থাৎ সম্পত্তি।
ইসলামের নবীরা তাই নারী নামক ‘মাল’দের উদ্ধার এবং সম্মান প্রদানের জন্য কেবল বিয়ের পথই বেছে নিয়েছিলেন। অন্য কোনওভাবে কন্যাদের উদ্ধারের কথা মনে আসেনি তাদের।

ধর্মীয় কিতাবে ছড়িয়ে রয়েছে কীভাবে আল্লাহকে শিখণ্ডী খাড়া করে, তাঁর বাণীকে ইচ্ছেমতো স্থানে ব্যবহার করে নবীরা ৬ থেকে ৫৬ অবধি সব বয়সী মেয়েদের যত্রতত্র বিয়ে করে তাদের উদ্ধারের জন্য সারা জীবন নানা ধর্মীয় বাণী কপচে ‘জাহান্নামের আগুন’ থেকে সতর্ক করেছেন,
আল্লাহ নামক জুজুর ভয়ে তাদের সম্পত্তি হাতিয়েছেন,
অথবা মারধর করে ‘উচিত শিক্ষা দিয়েছেন …আর তাদের ধর্মজাত উত্তরসুরীরা বিগত ১৪০০+ সাল থেকে সেইভাবেই মেয়েদের নিজেদের ‘মাল’ মনে করেই একের পর এক বিয়ে এবং তালাক দিয়েই চলেছে।

পুরুষের ব্যাভিচার নিয়ে কোনোদিন ধর্মীয় কেতাব কথা বলে না। অথচ ইতিহাস- হাদিস- পুরাণ সব সাক্ষী – পৃথিবীতে সবচেয়ে ব্যাভিচারি জাত – পুরুষ মানুষ। কিন্তু সব আইনের দণ্ডমুণ্ড পুরুষের হাতেই ন্যস্ত মেয়েদের শায়েস্তা করার জন্য! সেইজন্যই আসলে মেয়েদের তিন তালাকের অধিকার দেয়নি শরিয়ত। মেয়েদের হাতে তালাকের ভার গেলে একটা পুরুষও সেটার কবল থেকে রেহাই পেত না। দিনের পর দিন মেয়েদের আল্লাপাকের জুজু দেখিয়ে দমিয়ে, কাঁদিয়ে, পরাধীন করে রাখা যেত না। মিথ্যে সংসারকে টিকিয়ে রাখতে ‘পাপ- পুণ্য – জান্নাত-জাহান্নাম ‘ ইত্যাদির জুজুতে মেয়েদের মুরগী করা যেত না।

– এই হক কথাটা আল্লাহর সাচ্চাবাচ্চারা জানে। তাই মুসলমান অশিক্ষিত দরিদ্র ও দুর্বল শ্রেণীর নারীদের জন্য ইসলাম এক মোক্ষম আফিম দিয়েছে – ইসলাম নারীকে দিয়েছে সর্বোচ্চ সম্মান।

১। শায়রা বানু (বিয়ের ১৫ বছর বাদে সামান্য ঝগড়ায় তিন তালাক দেওয়া চিরকুট চিঠি পেয়েছেন স্বামীর কাছে)
২। ইশরাত জাহান (পরপর কন্যা সন্তান জন্মের খেসারত হিসেবে টেলিফোনে তিন তালাক পেয়েছেন)
৩। গুলশান পারভীন (বনিবনা হচ্ছে না, তাই হঠাৎ স্বামীর কাছ থেকে ১০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে তিন তালাক পেয়েছেন)
৪। আফরিন রহমান (ম্যাট্রিমোনিয়াল সাইট ঘেঁটে বিয়ের পরে বছর ঘোরার পরেই অতিরিক্ত পণের ঝামেলায় স্পিড পোস্টে তিন তালাক পেয়েছেন)
৫। আতীয়া সাবরি (কন্যা জন্মের খেসারতে চিরকুটে তিন তালাক পেয়েছেন হঠাতই)

এরাই সেই পাঁচজন সাহসিনী, যাঁদের ইসলাম নাকি এভাবেই ‘সর্বোচ্চ সম্মান’ দিয়েছিল! আজ তাঁদের হাতেই ভারতের কোটি কোটি মুসলিম মেয়ে আইনের পথে যাওয়ার সুযোগটুকু পেয়েছে।
এখন দেখার এই বিল ‘আইন’হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে ফাইল বন্দীই থেকে যাচ্ছে, নাকি বাস্তবায়িত হতে পারছে!

কারণ পুলিশ তো আবার “ওদের নিয়ে ” কিছু বলতে করতে পারে না। কেস নিতে চায় না কারণ “ওদেরকে কিছু বলা যাবে না -দাদা/দিদিকে বলে দেবে!” টাইপ ফোবিয়া আছে।

এই ফোবিয়া থেকেই হয়তো বা দেশের প্রভাবশালী টপ-মিডিয়াগুলো তাদের টক-শোয়ে তিন শ্রেণির লোকজন আনছে –
১) যারা ধর্ম-জাত-পাত-বর্ণ ইত্যাদি নির্বিশেষে কেবল উদারনৈতিক চিন্তাভাবনা তথা প্রগতিশীল সামাজিক ইস্যু নিয়ে লড়ে যাচ্ছেন বহুদিন ধরে, এঁরা কোনও নির্বাচিত ধর্মীয় বিধান নিয়ে লেশমাত্র তাত্ত্বিক পড়াশুনার কথা ভাবেন না।
২) যারা মোল্লাতন্ত্রের ধারক ও বাহক হওয়ার জন্য যে কোনও যুগান্তকারী আইন পাস হলে তার কেবল বিরোধিতা করার জন্যই মুখ দেখাতে আসে – সেটা পলিটিক্যাল বা ধর্মীয় উভয় কারণেই।
আর ৩) শিল্পী-সাহিত্যিক শ্রেণির বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠির কেউ কেউ (এক্ষেত্রে মুসলিম বুদ্ধিজীবী), যারা এটা প্রমাণেই ব্যস্ত থাকেন যে কীভাবে কোরানের ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে। এরা কোনও দিন কোনও সংশোধনের দাবি তোলেন না। প্রতিটি কথায় মোল্লাদের কাউন্টার করার জন্য বেছে নেন ধর্মীয় পুস্তককেই। এবং এটাই দেখাতে চান যে মোল্লারা কত ভুল জানে, আর বুদ্ধিজীবী তাঁরা কত ঠিক জানেন!

এতে করে আসল টপিক থেকে ফোকাস সরে গিয়ে কোরান ও হাদিসের মতো প্রাচীন গ্রন্থে ঘুরপাক খেয়ে নারীদের সুরক্ষা বিধির বিষয়টাই ভণ্ডুল হয়ে যায়। যে বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠি চাইলেই নানা যুক্তি দিয়ে, বোধ দিয়ে তাদের শক্তিশালী কলম ও কথার মাধ্যমে আসল পয়েন্টে জোরদার সওয়াল করতে পারতেন, কিন্তু সেটা না করে তারা ‘সাপের মুখে চুমু আবার ব্যাঙের মুখেও চুমু খেয়ে’ দুকূল বাঁচানোর একটা নোংরা খেলা খেলেন।

মূল উদ্দেশ্য ধর্মীয় বিধান ভালো, মোল্লারা খারাপ, আর তাই নাকি পিছিয়ে পড়ছে মুসলমানরা! নিঃসন্দেহে এরাই সমাজের সবচেয়ে ভয়ংকর শ্রেণি!
অথচ এইসব পুঁথিবাদী কোরান-হাদিসের সাচ্চা অর্থ জানা বুদ্ধিজীবীরা তালাক নিয়ে কথা বলার আগে মুসলিম ‘নিকাহ’ নিয়ে কই কিছু বলেন না কেন?

আসুন দেখি সেটা কী!
নিকাহ হালাল, হিল্লা বিবাহ এবং মুতা বিবাহ – মুসলিম মেয়েদের ধর্মসম্মত গণিকা বানানোর কোরানসিদ্ধ বিধান। এ প্রসঙ্গে পাই –
মহান আল্লাহ্‌ বলেছেন:
“… তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয় বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে, তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করতে কোন পাপ নেই, যদি আল্লাহ্‌র হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে।” (সূরা বাকারাঃ আয়াতঃ ২:২৩০।)
“এক স্বামী তার স্ত্রীকে স্থায়ীভাবে তালাক দিয়েছে। সেই স্ত্রী অন্য এক পুরুষকে বিবাহ করলো। সেই পুরুষ মহিলাকে তালাক দিয়ে দিল। মহিলাটির আগের স্বামী তার তালাক দেওয়া স্ত্রীকে পুনরায় বিবাহ করতে পারবে কিনা? বিবি আয়েশা উত্তর দিলেন, ততক্ষণ হবে না যতক্ষণ না সে মহিলাটি ঐ পুরুষটির সাথে যৌন সঙ্গমের মিষ্টি স্বাদ উপভোগ করেছে।”
(মালিক মুয়াত্তা: হাদিস নম্বরঃ ২৮/৭/১৮।)

এসব অসুস্থ প্রাগ-ঐতিহাসিক ধর্মীয় বিধান থেকেই স্পষ্ট, ‘মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডে’র নামে এক সম্প্রদায়ের জন্য শরিয়তি নিয়ম প্যারালালি চালু রেখে এবং ভারতের মতো সর্বধর্মের দেশের সংবিধানের মৌলিক অধিকারের Article 25 (freedom of conscience and free profession, practice, and propagation of religion.) Article 26 (freedom to manage religious affairs.) এবং Article 29 (the protection of language, script, and culture of minorities.) কে ঢাল বানিয়ে আক্ষরিকভাবেই Right to Equality (Articles 14-18) –র মত সবেচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধিকারকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সংবিধান অবমাননাই শুধু না, লঙ্ঘন করা হচ্ছে।

মুসলিম পার্সোনাল ল’ –য়ের মতো শরিয়তি আইনব্যবস্থা চালু রাখা, উক্ত তিন প্রকার অমানুষিক বিয়ের চল এবং তিন তালাকের মতো ঘৃণ্য বিধান চালু রাখা মোল্লাতন্ত্রের ক্ষেত্রে অত্যন্ত স্বাভাবিক। কিন্তু গণতান্ত্রিক দেশের ক্ষেত্রে তা কাম্য নয় মোটেই।

আল্লাহ এবং রসুলকে ঢাল এবং উদাহরণ বানিয়ে আদালতে মেয়েদের যোনীসর্বস্ব পরিচিতিকে খুলে আম প্রদর্শন করার জন্য ১৪০০ বছর আগে বানানো কিছু নিকৃষ্ট নিয়ম তুলে ধরায় অন্যায়টা কতোটা মারাত্মক – সেটা সুপ্রিম কোর্ট তথা হালফিলের পার্লামেন্ট চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ায় মোল্লাদের ধর্মানুভূতিতে বেদম লেগেছে তা বলাই বাহুল্য।

সুতরাং তিন তালাক নিষিদ্ধ বিল পাশে ভারতের নানা প্রদেশের সাহসিনীদের জয়ে সিদ্দিকুল্লা, ওয়াইসিসহ তামাম শরিয়তবাদী লোকের জ্বলুনি হবে, তা আর নতুন কী!

কিন্তু ৯৯ টি ভোটে জয়ী ‘তালাক বিল’-এর বিপক্ষে যে ৮৬ টা ভোট পড়েছে – সেইসব ফ্যানাটিক ও মোল্লাপ্রেমী ‘ভোটে জেতা জনপ্রতিনিধি’রা পার্লামেন্ট নামক আস্তাকুঁড়ে এদ্দিন কোন অধিকারে এবং কীসের জোরে ঘাপটি মেরে বসে থাকতেন – তা আজ জাতি জানতে চায়।
দেশ কি তবে আক্ষরিকই ‘সিক্কুলার’ (সোশাল মিডিয়া উবাচ)!

সদ্য পাশ হওয়া তিন তালাক বিলের বিরুদ্ধে বলা অথবা সুপ্রীম কোর্টকে ২০১৭ সাল থেকে তালাক রায় নিয়ে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আসা মুসলিম ল’ বোর্ড যে আক্ষরিকই কিছু লিগ্যাল প্রস্টিটিউশানের দালাল নিয়ে চালিত হয় তা প্রমাণিত।
এদের প্রত্যেকের ‘পলিগ্যামী রোগ’ আছে বলেই বলতে পারে, “যাতে রাগের মাথায় বৌকে খুন না করে ফেলে, তাই তো তালাক থাকার বিধান! এটা তুলে দিলে মুসলিম সমাজ মেনে নেবে না।” অথবা “তালাক ও চার বিবাহ মুসলিমদের সুন্নত, নইলে মেয়েরা রাস্তাঘাটে সুরক্ষিত থাকতো না। রেপ হতো!”-এমন অসুস্থ চিন্তাভাবনা ১৪০০ বছরের ধামাধরা আফিমখোররাই করতে পারে।

এদের কথাতেই স্পষ্ট, মুসলিম বিবাহে তালাক দেওয়া মানে অন্য আরেকটি বিয়ে করার পথ সুগম করা। পুরুষের জন্যই এই ইন্সট্যান্ট তালাক দেওয়া ও কিছুদিনের মধ্যেই নতুন বিয়ে করাটা ধর্মসম্মত।
জমিয়তে হিন্দ হোক বা পার্সোনাল ল’ – নিজেদের মতো ইনিয়ে বিনিয়ে একটা বিষয়ই প্রতিষ্ঠা করছে যে,
‘নিকাহ’ (হিল্লা বিবাহ ও মুতা বিবাহসহ) ব্যাপারটা মুসলিম পুরুষের বহুগামিতার ছাড়পত্র, তথা একটা লিগ্যাল প্রস্টিটিউশান ছাড়া আর কিছুই না শরিয়ত নিয়মে।
এমন কেতাব সম্মত লিগ্যাল প্রস্টিটিউশান আর কারাই বা চালাতে পারে ১৪০০ বছর ধরে!

এই প্রসঙ্গে মনে পড়ছে, খুব ছোটবেলায় বাবার গ্রামের এক মহিলার কথা। সবেদাগাছের নিচে বিচার বসেছে। মহিলার স্বামী তিন তালাক দিয়েছে স্রেফ এই অজুহাতে যে তাদের কন্যা সন্তানটি আসলে তার ঔরসজাত নয়, স্বামীর মামার ঔরসজাত। এবার মুরুব্বিদের বিধানে সেই মহিলার নিকাহ হলো মামা শ্বশুরের সাথে। বছরখানেকের একরত্তি শিশু মেয়ে একবার এ বাড়ি, একবার ওবাড়ি করে দিন পার করছে। পরে প্রাক্তন স্বামীটি কোনো এক কারণে মারা যায় এবং মামা শ্বশুরের শারীরিক খিদে মেটার পর সেও তাকে তালাক দেয়। তদ্দিনে এই মহিলা দ্বিতীয়বার গর্ভবতী।

এবার প্রথম সন্তানের বাবা কে? প্রশ্নের সাথে আরেকটি জুড়ে যায়, দ্বিতীয় সন্তানের ভবিষ্যৎ কী? — এইসব বিষয়ে কাজিয়া উঠলে মুরুব্বিরা বিধান দেয় (আমার বাবাও তার মধ্যে অন্যতম) ওই বাচ্চাটি যদি মেয়ে না হয়ে ছেলে হতো, তাহলেও উত্তরাধিকার সম্পত্তি আদায় নিয়ে ভাবনার অবকাশ ছিল।
কিন্তু শরিয়ত মেয়েদের জন্য সেসব অধিকার রাখেনি … ইত্যাদি ইত্যাদি।

একজন নাবালিকা শিশু আর একজন অনাগত প্রাণের ভবিষ্যৎ সেদিন কী লেখা হয়েছিল তা জানার বা বোঝার ক্ষমতা আমার ছিল না।
শুধু এটুকু খবর পেয়েছিলাম ওই মহিলাকে বাড়িছাড়া করা হয় এবং একদিন দূরের এক পুকুরে তার লাশ পাওয়া যায়।
—-‘ইসলাম নারীকে দিয়েছে সর্বোচ্চ সম্মান’ – প্রমাণিত হয়।
সেটা ১৯৯৬-৯৭।
আজ ২০১৯ … ইসলামে নারীর সর্বোচ্চ সম্মান আজো প্রমাণিত হচ্ছে।

শেয়ার করুন: