সাহাবউদ্দিন মাহমুদ:
এলাকায় চেয়ারম্যান সাহেবের অনেক ক্ষমতা, এলাকার সকল সমস্যা উনি একাই সমাধান করেন। সব ধরনের অন্যায়ের বিচার উনি নিজেই করেন। কেউ চুরি করলে, কেউ মারামারি করলে, কেউ কোনো মেয়ের সাথে প্রেম করলে তিনি একাই সব বিচার করেন।
ধর্মীয় বিষয়গুলো উনি খুব নজর রাখেন, কেউ নামাজ না পড়লে, কেউ রোজা না রাখলে, কোন মেয়ে পর্দা না করলে, এগুলোর বিচার উনি নিজ হাতেই করেন। উনি কয়েকবার হজ করেছেন। উনার নামের আগে আলহাজ্ব যুক্ত হয়েছে।
কিছুদিন আগে এলাকায় একটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, তিনি শক্তভাবে এটার বিচার করে দিয়েছেন, ধর্ষণের শিকার হয়েছে যে নারী, তেমন একটা সচ্ছল ফ্যামিলির না, ছেলেটাও বেকার। তিনি বুদ্ধি খাটিয়ে তাদের দুজনকে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন। এলাকার সবাই এই সিদ্ধান্তে খুশি এবং উপকৃত হয়।
এলাকায় মোটামুটি এই বিষয়ে একটা আইন তৈরি হয়ে গেছে, যে কেউ যে কাউকে ধর্ষণ করলেই তাদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হবে, এইরকম আরো অনেক ঘটেছে।
চেয়ারম্যান সাহেবের মেয়ে আমেরিকায় পড়াশোনা করে। বয়স পঁচিশের কাছাকাছি। কয়েক দিনের মধ্যে দেশে ফিরবে। এই নিয়ে চেয়ারম্যান সাহেব অনেক আনন্দিত। এলাকার মানুষ এই মেয়েটাকে খুব ভালোবাসে, মেয়েটা খুব ভদ্র, নম্র, গুরুজনদের সম্মান করে, আর সবসময় পর্দা করে চলে।
চেয়ারম্যান সাহেবের মেয়ে দেশে আসছে, চেয়ারম্যান সাহেব, চেয়ারম্যান সাহেবের বউ এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা অনেক খুশি, গ্রামের মানুষও খুশী।
চেয়ারম্যান সাহেবের বাড়িতে বাবুল নামের ৩০ বছরের এক যুবক কাজ করে, চেয়ারম্যানের গরুর খামার দেখাশোনা করা, বাড়ির বাজার করা, এবং বিভিন্ন সময় বাড়ির বিভিন্ন মানুষের কাজে সহযোগিতা করা, এটাই বাবুল এর কাজ।
চেয়ারম্যান সাহেবের মেয়ের ছবি তোলার খুব শখ। তাই চেয়ারম্যান সাহেবের মেয়ে ছবি তোলার জন্য বাইরে বের হবে, চেয়ারম্যান সাহেব একা যেতে নিষেধ করেছেন, বলেছেন বাবুল খুব বিশ্বস্ত, ও যেন বাবুলকে সঙ্গে নিয়ে যায়, মেয়েটা রাজি হলো। তারপর তারা আস্তে আস্তে নদীর পাড়ের দিকে যেতে শুরু করল। মেয়েটা নদীর পাড়ের ছবি তুলতেছে, গাছের ছবি, ফুল পাখির ছবি, এইসব ছবিগুলো তুলতে লাগলো। বাবুল একেবারেই নিশ্চুপ।
মেয়েটা বাবুলের কয়েকটা ছবি তুলল, বাবুলও খুশি হয়েছে, মেয়েটা ক্যামেরা নিয়ে বাবুলের সামনে এসে বাবুলকে ছবিগুলো দেখাতে লাগল। ছবিগুলো দেখতে দেখতে বাবুলের নজর পড়লো মেয়েটার স্তনের দিকে। বাবুল কী করবে বুঝতে পারছে না, তার মাথা ঘুরছে। সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। কিছুক্ষণ চিন্তা করার পরে বাবুল মেয়েটার গায়ে জাপটে ধরলো। মুহূর্তেই বুকের থেকে টেনে কাপড় খুলে ফেললো। বাবুল তার শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে মেয়েটাকে ধর্ষণ করলো। মেয়েটা চিৎকার চেঁচামেচি করলেও তার চিৎকার শোনার জন্য আশেপাশে কেউ ছিল না।
কিছুক্ষণ পরেই বাবুল হতভম্ব হয়ে পড়লো, কী করবে বুঝতে পারছিল না। বাবুল মেয়েটার দিকে তাকিয়ে দেখলো মেয়েটা কাঁদছে। বাবুল দৌড়ে পালাতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর এলাকার কিছু মানুষ মেয়েটাকে বাড়িতে নিয়ে এলো, মেয়েটা সবার সামনে বিষয়টা খুলে বললো। বিষয়টা শুনে চেয়ারম্যান সাহেব হতভম্ব।
চেয়ারম্যান সাহেব ধর্ম খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে করেন। তিনি এই বিষয়টা ধর্মীয় দিক থেকে দেখার চেষ্টা করলেন। তিনি মসজিদের ইমাম সাহেবকে বাসায় ডেকে আনলেন। ইমাম সাহেবকে বললেন কুরআন হাদিসের মতামত অনুসারে এখন আমাদের কী করা উচিত? ইমাম সাহেব খুব সাবলীল গলায় বললেন, আপনার মেয়ে নিজে যদি বলে যে ধর্ষণ হয়েছে, সেটা বিশ্বাসযোগ্য নয়, অন্তত এই বিষয়ে চারজন সাক্ষী দরকার। যেহেতু আমাদের ধর্ম মেনে চলতে হবে, তাই আপনার মেয়ের চারজন সাক্ষী ছাড়া আমরা এটা বিশ্বাস করতে পারছি না।
পরমুহূর্তেই এলাকার যুব সমাজ ক্ষেপে উঠলো, বললো ধর্মীয় বিষয় পরে, দীর্ঘদিন চেয়ারম্যান সাহেব এলাকায় যেভাবে বিচার করে আসছেন, ঠিক একইভাবে বিচার হবে। আর ওই ছেলেটার সবচেয়ে বড় শাস্তি হলো, এই মেয়েটার সাথে ছেলেটাকে বিয়ে দিয়ে দিতে হবে। অলরেডি আমরা সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি বিষয়টা, ছেলেটাকেও ধরে নিয়ে আসা হচ্ছে, কাজীকে খবর দেওয়া হয়েছে। আজকেই বিয়ে হবে।
মেয়েটা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে এলাকার মানুষের দিকে, মসজিদের ইমামের দিকে, নিজের বাবার দিকে। মেয়েটার আর কিছুই করার থাকলো না, মেয়েটা নিস্তব্ধ হয়ে বাকরুদ্ধ অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছে।
পাশে বসা চেয়ারম্যান সাহেব নির্বিকার তাকিয়ে আছে তার মেয়ের দিকে। নিজের তৈরি করা আইনের মাধ্যমে চেয়ারম্যান সাহেব নিজেই আজ ফেঁসে গেলেন।
(বাস্তবতার নিরিখে লেখা)
ব্লগার-অনলাইন একটিভিস্ট