এম আর ফারজানা:
দেশে গুজব, ধর্ষণ এখন মহামারি আকার ধারণ করেছে। গুজবের বলি হলো রানু, মা হারা হলো দুটি সন্তান। প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও গণরোষের শিকার হচ্ছে মানুষ, সন্দেহ হলেই ঝাঁপিয়ে পড়ছে, পিটিয়ে খুন করছে।
আজকে দেখলাম কুমিল্লায় কিছু ভিক্ষুক ন্যাশনাল আইডি কার্ড নিয়ে ভিক্ষা করতে নেমেছে, যাতে কেউ তাদের ছেলেধরা হিসেবে সন্দেহ না করে। কতোটা ভয়াবহ হলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
কুসংস্কার আমাদের সমাজের ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বিরাজ করছে এখন। মানুষ যেখানে প্রযুক্তির কল্যাণে মঙ্গল গ্রহে যাবার স্বপ্ন দেখছে, সেখানে আমরা পড়ে আছি গুজবে, কুসংস্কারে, ধর্ষণে।
গতকাল দেখলাম এক দম্পতি ঝগড়া লেগে দুজনেই দুজনকে বলছে ছেলেধরা। ফলাফল গণধোলাই।
আজকে দেখলাম চুয়াডাঙ্গায় মাদ্রাসার একটা বাচ্চা ছেলেকে বলাৎকার করে গলা কেটে বলছে, ছেলেধরা গলা কেটেছে। গুজবের অজুহাতে এখন ধর্ষক সুযোগ নিচ্ছে। এই সুযোগসন্ধানী মানুষ এরাও কুসংস্কারে আছন্ন। এ অবস্থা একদিনে তৈরি হয়নি। ধর্ষকরা একেক পর এক ধর্ষণ করে পার পেয়ে গেছে। আর এ কারণেই তারা আরও বেপরোয়া হয়েছে উঠছে।
এবং গুজবের এই সুযোগে তারা হয়ে উঠছে দানব।
কারা গুজব ছড়ায়?
ধর্মান্ধ, অসভ্য, সুযোগসন্ধানী, কুসংস্কারছন্ন এরাই গুজব ছড়ায় নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য। গত কয়েকদিনে যা দেখছি সমাজে এদের সংখ্যাই বেশী। এবং গুজব বিশ্বাস ও করে ঐ ধরনের মানুষরা।
দেশের প্রত্যেক মাদ্রাসায়, স্কুল, কলেজে সিসি ক্যামেরা থাকলে দেখা যেতো কী ভয়াবহ ধর্ষণের চিত্র! পত্রিকার পাতায় যা আসে বাস্তবে এর চেয়ে অনেক বেশি। কোন কোন এলাকায় তো প্রভাবশালী এতো প্রভাব বিস্তার করে যে অপরাধীরা তাদের ছায়াতলে আশ্রয় নেয়। ফলে সাংবাদিকরা রিপোর্ট করতেও ভয় পায়।
আজকে দেখলাম, একটা শিশু বলাৎকার শিকার হয়ে সেই বলাৎকারকারীকে খুন করে টিভি স্ক্রিনে লিখে রেখেছে ‘ধর্ষণ বন্ধ করুন’। কী পরিমাণ নির্মম নির্যাতন তার উপর দিয়ে গেছে তা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেছি।
শুধু একজন নয়, একদিন নয় বহুবার বহু সময় বহুজনের দ্বারা সে বলাৎকার হয়েছে। কিছুদিন আগে নারায়ণগঞ্জে দেখছি দীর্ঘদিন ধরে বছরের পর বছর বাচ্চাদের ধর্ষণ করে আসছে। আসলে ধর্ষকের ফিরিস্তি দিলে শেষ হবে না, সবচেয়ে যে বিষয়টা এখন ভয়ংকর হয়ে উঠেছে, ধর্ষণ করে গলা কেটে নাম দিচ্ছে ছেলেধরার। যেন চোরের উপর বাটপারি।
এসব থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় হচ্ছে কঠোর বিচার, এবং সচেতনতা। সমাজের সচেতন নাগরিকদের এ ব্যাপারে এগিয়ে আসা, পাশাপাশি বিচারের কার্যকারিতা। আইন থাকলে তো হবে না কঠোর বিচার গুজবকারী, ধর্ষণকারীদের বুঝাতে হবে। শাস্তি তাকে পেতে হবে। আর না হয় এভাবে চলতে থাকলে আমরা চলে যাবো আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগে।
নিউ জার্সি যুক্তরাষ্ট্র থেকে।
২৪ জুলাই ২০১৯।