শীলা মোস্তাফা:
“Dissociation is a psychological defense mechanisms, helps people to cope with traumatic situations by removing themselves from them.”
হাইড এন্ড সিক খেলতে খেলতে
তুমি যখন চুপি চুপি আমার ঘরে এলে
ঠোঁটে আঙুল দিয়ে জানালে চুপ করে থাকতে
আমি চুপ করে রইলাম,
আমিও তোমার মতো করে ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে
তোমাকেও চুপ করে থাকতে বললাম।
আমরা দুজনে লুকোবো নিঃশব্দে
কেউ খুঁজে পাবে না আমাদের।
(হায় বোকা মেয়ে, এতো অন্য এক হাইড এন্ড সিক!)
সেদিন কি জানতাম
তুমি কোন দিনও এ খেলার কথা কাউকে বলবে না।
চুপ করেই থাকবে, এবং আমাকেও চুপ করিয়ে রাখবে।
তোমার অন্য রকম হাইড এন্ড সিক খেলায়
আমার আর লুকানোর জায়গা অবশিষ্ট রইলো না।
তোমার পায়ের শব্দ পেলেই
আমি আমার হাত দুটো বুকের মধ্য নিয়ে
নিজেকে জড়িয়ে ধরে রাখতাম।
এক পা দিয়ে পেঁচিয়ে ধরে রাখতাম অন্য পা।
তুমি সেই আড়ষ্ট হাত সরিয়ে
আমার ছোট্ট ফ্রকের নিচে,
আমার বুকে কী খুঁজতে!
আমার দু পায়ের মাঝে!
আমার কষ্ট হতো,
অনেক ব্যথা হতো, আমি কাঁদতাম ভয়ে, যন্ত্রণায়
তুমি আমার চোখের জল দেখোনি,
তুমি তখন গোলাপের পাপড়ি খোলায় মত্ত।
মা বলতেন, “তোর মামা তোকে কত ভালবাসেন, কত আদর করেন,
তোকে পড়ান, তোর জন্য চকোলেট নিয়ে আসেন,
সবসময় মামার কথা শুনবে, বড়দের কথা শুনবে!
লক্ষ্মী মেয়ে হয়ে থাকবে”
আমি মায়ের কথা শুনেছি
লক্ষ্মী মেয়ে হয়ে বড়দের কথা শুনেছি
আমি মায়ের ভালো মেয়ে।
তারপর একদিন যখন ব্যথায় যন্ত্রণায় আমি
চিৎকার করতে চেয়েছি,
তুমি আমার মুখে একটা একটা কাপড়
গুঁজে দিয়েছো।
তার সকল খেলা সাঙ্গ করে
কানের কাছে ফিস ফিস করে বলেছ
“সাবধান কাউকে বলবি না,
কেউ তোকে বিশ্বাস করবে না
ভালো মেয়ে হয়ে থাকিস”।
আমি কাউকে বলিনি
কী করে বলি!
ততদিনে শিখে গেছি মুক্তির মন্ত্র।
তোমার পায়ের শব্দ পেলেই
শরীর থেকে বেরিয়ে যাই,
চুপটি করে দূরে দাঁড়িয়ে
আমার শরীর নিয়ে তোমার খেলা দেখি
তুমি আমার শরীর দেখতে পেতে
আমায় দেখতে পেতে না।
আমাকে তুমি খুঁজতেও না,
তোমার উন্মাদ খেলা শুধু ছোট কুঁকড়ে থাকা আমার শরীর নিয়ে।
আহা যন্ত্রণা, ছিঁড়ে যাওয়ার যন্ত্রণা, নিজেকে হারানোর যন্ত্রণা,
চিৎকার করে কাঁদতে না পারার যন্ত্রণা,
নিঃশব্দে গোপন খেলার সাক্ষী হবার যন্ত্রণা।
আমি ঘরের এক কোণে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে
শরীরের যন্ত্রণা দেখি।
তারপর তুমি চলে গেলে
শরীরের কাছে এসে বসি,
হাত বুলিয়ে দেই, চোখের পানি মুছিয়ে দেই,
শরীরটাকে ধুয়ে মুছে, ফ্রক পরিয়ে বেড়িয়ে আসি।
তুমি তখন মায়ের সাথে বসে বিকালের চা খাচ্ছো!
মা বললেন “Home-work শেষ হয়েছে?
মামা না থাকলে কে তোর Home-work করে দিত?
বন্ধুদের সাথে
হাইড এন্ড সিক খেলতে যাবে?“
আমি আর হাইড এন্ড সিক
খেলি না মা,
আমি জেনে গেছি
আমাকে কেউ খুঁজে পায় না এ খেলায়।
কারও পায়ের শব্দ পেলে
আমি অশরীরী আত্মার মতো শরীর থেকে বেরিয়ে যাই
ভালো মেয়ে হয়ে
ঘরের ওই কোণে আড়ষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি, আর
অন্য এক শরীরের যন্ত্রণা দেখি।
ক্যালিফোর্নিয়া