শহরটিতে কোন গোরখোদক নেই

ফারজানা সুরভি:

শহরটিতে গোরখোদক পাওয়া যাচ্ছে না।

কবরে তিন বছরের কন্যা শিশুর ধর্ষিত লাশ নামাতে গিয়ে, একজন গোরখোদক বুক চাপড়ে কাঁদেন। সেই শুরু!

উন্নয়নশীল শহরের শপিং মলে শ্যানেলের পারফিউম বিক্রি হয়। ক্ষমতার চেয়ারে বসে ‘পিলো পাসিং’ খেলে নগরপ্রধান। যে নারী ধর্ষিত হয়, সে চরিত্রহীনতার অপবাদে নিজেই একটা কবর খুঁড়ে শুয়ে পড়ে।

গোরখোদকদের হাত থেকে বেলচা খসে পড়ে। তাঁরা আশা করেন, কেউ একজন শিশুদের রক্ষা করবে! ছোট ছোট কবর খুঁড়তে খুঁড়তে আর কাঁদতে হবে না। কবরস্থানে তবু একের পরে এক শিশুর বিক্ষত লাশ আসে।

মায়েরা বুকে কাপড় দিয়ে বেঁধে নেয় কন্যা শিশুদের। সন্তানকে বাঁচাতে তাদের দেবী ও দানবীর রূপ নিতে হয়। কিন্তু মায়েদের ঘুম আসে! একজন মা চোখ বন্ধ করা মাত্র তার বুকের কাপড় খুলে কন্যা সন্তানকে নিয়ে যায় কেউ। তিন দিন পরে শিশুটির ছেঁড়া জামা পাওয়া যায়।

বুদ্ধিজীবীদের পরামর্শে নগরপ্রধান তখন নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। শহরটি ‘মসজিদের শহর’ হিসেবে পরিচিত। প্রতিটি মসজিদের পাশে একটি করে পতিতালয় স্থাপন করা হয়। ধর্ষক ও ধর্মীয় নেতাগণ সরকারের প্রতি সন্তুষ্ট!

সেক্সের এমন সরকারি সুযোগ প্রাপ্তির পরেও ধর্ষণ থামে না।

কামের অভাবে তো আর কেউ শিশু ছিঁড়ে খায় না! নরখাদক কি মাংসের অভাবে মানুষ খায়? মানুষ খাওয়া যে তার স্বভাব!

যে শহর মানুষ খাওয়ার জন্য তাকে হাত তালি দেয়, সে শহরে কেন সে মাংস খাওয়া ছেড়ে দিবে?

এমন অবস্থায় গোরখোদকগণ পেশা বদলে ফেলেন। যারা অন্য কোনো কাজ জানেন না, তাঁরা ভিক্ষা করেন। এনজিওগুলো বিনামূল্যে মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসার প্রস্তাব দেয়। তবু শহরটিতে গোরখোদক পাওয়া যায় না।

কয়েকজন মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তা সরকারি খরচে বিদেশ ভ্রমণ করেন। আমদানি হয় কবর খোঁড়ার অত্যাধুনিক যন্ত্র। সে যন্ত্র একশো কবর খোঁড়ার ক্ষমতা রাখে। কোনো মানুষ ছাড়া! তবু শিশুদের ছোট ছোট কবরে শহর উপচে পড়ে।

কন্যা শিশু মায়ের পেটে থাকতেই হিজাব পরে। শুক্রবারের ওয়াজে বড় হুজুর বলেছেন, “নারীদের পর্দার অভাব বয়ে এনেছে অনাচার। পর্দাহীন নারী দেখে উত্তেজিত পুরুষ বাধ্য হয়, শিশু মাংস খেতে!” কিন্তু সব কন্যাকে সিন্দুকে ঢুকানোর পরেও ধর্ষণ বন্ধ হয় না। বরং বাক্সের মধ্যে দম আটকে মারা যায় ওরা।

শহরটির শেষ শিশুটি যেদিন মারা যায়, সেদিন গোরখোদকেরা পুরনো পেশাতে ফিরে আসে। কবর খুঁড়তে তাদের আর অনুতাপ নেই।

প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকগণ এই শহরকে উন্নয়নশীল শহরে রূপান্তর করেছেন। ধর্ষকদের দায়মুক্তি দেয়ার জন্য নারীর দায়িত্ব সংক্রান্ত থিসিস রচনা করেছেন। শিশুদের জন্য কবর খোঁড়ার শক্তি গোরখোদকদের ছিল না কখনো। তবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য কবর খুঁড়তে কোন গ্লানি নেই।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.