আইডেনটিটি ক্রাইসিস

tania morrshedতানিয়া মোর্শেদ: আদিকাল থেকেই ধর্ম মানুষের আশ্রয়। পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের এই আশ্রয়ের প্রয়োজন। মানসিকভাবে যারা অনেক শক্তিশালী, তাদের কারও কারও এই আশ্রয়ের প্রয়োজন নেই।

ভাবা হয়ে থাকে ধর্ম মানুষকে আলোকিত করবে, মানুষকে “মানুষ” হতে সাহায্য করবে। কিন্তু এই ভাবনা কতটুকু বাস্তবতা পায়? যখনই ধর্মকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয় (যে ধর্মই হোক না কেন) বলা হয়ে থাকে যে, ঠিক মতো বোঝা/ব্যাখ্যা হচ্ছে না! ধর্মকে (যেকোনো ধর্ম) প্রশ্নবিদ্ধ করে কিন্তু সেই মানুষগুলোর আচরণ, যারা ধর্ম পালনই শুধু করে না, তাদের নিজের ধর্মকে “শ্রেষ্ঠ” ধর্ম বলে প্রচার/প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। আর ধর্মগুরুদের কাছে বিদ্যা/বুদ্ধি/যুক্তি সবকিছু নতজানু হয়ে যায়। কোনো প্রশ্ন করা নিষেধ, তা যতই যৌক্তিক হোক না কেন।

গত কুড়ি বৎসর ধরে দেখছি, বাংলাদেশী মুসলমানরা অতি ধার্মিক হয়ে যাচ্ছেন। প্রবাসে এই ধারণা চলতি যে, ধর্মের ছত্রছায়ায় থাকলে সন্তানরা ঠিক পথে থাকবে। মানে মুসলমান থাকবে। বাংগালীত্ব নিয়ে এদের মাথা ব্যথা নেই। অধিকাংশ প্রবাসী বাংলাদেশী “আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে” ভোগেন, তাই ধর্মকে আঁকড়ে ধরেন। আমার প্রশ্ন, আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভুগলে তো বাংগালী/বাংলাদেশী সংস্কৃতিকেই আঁকড়ে ধরা দরকার! অন্য যে কোনো দেশের মুসলমানের আইডেনটিটি কি বাংলাদেশীর আইডেনটিটি?

তার মানে হচ্ছে, প্রবাসের অধিকাংশ বাংলাদেশী “আইডেনটিটি” বলতে ধর্মীয় পরিচয় বোঝেন, বাংগালীত্ব/বাংলাদেশী পরিচয় নয়।

এখন আসি বাংলাদেশের কথায়। স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে এধরনের এতোসংখ্যক “ধার্মিক” কি ছিল বাংলাদেশে! অবশ্যই নয়। তবে কি বাংলাদেশের মানুষও আইডেনটিটি ক্রাইসিসে ভুগছেন বাংলাদেশে বাস করেও? এখন শতকরা ৯৯ ভাগ মানুষ বলেন,”আল্লাহ হাফেজ”।

খোদা হাফেজ নয়। মানে আরবীতে, ফার্সীতে নয়। তবে কি অচিরেই “পানি” না শুনে আরবীতে কিছু একটা শুনবো? ধর্মের আলো তো মানুষকে “মানুষ” করছে না! তা সে রামুর অর্ধশিক্ষিত/মূর্খ মাদ্রাসার ছাত্রই হোক, বিএনপি, আওয়ামী লীগ হোক, জামাত, শিবির যেই হোক আর নিউ জার্সিতে পড়তে আসা আধুনিক দেখতে ছাত্রই হোক।

বাবা-মায়েরা কি সন্তানদের “পাক্কা মুসলমান” বানানোর চাইতে “মানুষ” করাতে নজর দেবেন? সন্তান কতটা ধার্মিক তাতে বাবা-মা’র হয়ত পুরোটাই যায় আসে, কিন্তু পৃথিবীর কিছু যায় আসে না। কিন্তু সে কতটুকু “মানুষ” তাতে পৃথিবীর পুরোটাই যায় আসে, হয়ত বাবা-মা’র কিছুই যায় আসে না। আর সন্তান জন্ম দিলেই সে যেহেতু পৃথিবীর নাগরিক, তাই পৃথিবীর প্রতি বাবা-মা’র দায়বদ্ধতা থাকবেই।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.