মিলার মতোন মেয়েও যখন ন্যায়বিচার প্রার্থী!

শাহরিয়া খান দিনা:

জনপ্রিয় রকস্টার মিলা ইসলাম বর্তমানে মিডিয়া জগতে আলোচনার বিষয়। গত কদিন ধরেই তিনি সংবাদ সম্মেলনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে তার সাবেক প্রেমিক ও স্বামীর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতনের অভিযোগ এনেছেন। সেইসাথে একজন নামকরা অভিনেত্রীর নামও বের হয়ে এসেছে মিলার স্বামীর সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়ানোর অভিযোগে।

সংবাদ সম্মেলনে মিলাকে পুরো ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে অঝোর ধারায় কাঁদতে দেখা গেছে। একসময়ের দুর্দান্ত পারফরমেন্স করা মিলা অনেকদিন ধরেই গানের জগত থেকে উধাও। তিনি জানিয়েছেন, গত সাত-আট বছর ধরে তিনি পারিবারিক এই নির্যাতনের জের ধরেই মিডিয়া থেকে দূরে সরে থেকেছেন। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি।

২০১৭ সালের মে মাসে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেছিলেন বৈমানিক পারভেজ সানজারিকে। দীর্ঘদিনের প্রেম পরিণয়ে রূপ নিলেও পরে তা বিচ্ছেদে গড়ায়।

সংগীতশিল্পী মিলা’র মতো আধুনিকা এবং স্বাবলম্বী মেয়ে যখন ভালোবাসার মানুষটাকে বিয়ে করে ক্যারিয়ার পর্যন্ত ছেড়ে দেন এবং পরবর্তীতে যখন নারী নির্যাতনের মামলা করেন স্বামীর বিরুদ্ধে, নিজের উপর করা নির্যাতনের বর্ণনা দেন সংবাদ সম্মেলনে, তখন এর পেছনে থাকা ভালোবাসাটাই দেখি আমি, দেখি প্রতারিত হবার দীর্ঘশ্বাস, বিচার না পাওয়া ক্ষোভের প্রকাশ। যদিও ফেইসবুক বিশেষজ্ঞগণ প্রত্যেকটা সংবাদপত্রের কমেন্ট সেকশনে গিয়ে মিলা’কে লোভী টাকার জন্য এমন করছে ব্লা ব্লা বলছে তো এ আর নতুন কী! মেয়ে দেখলেই খ, ম, চ বর্গীয় গালি লিখে কমেন্টস করা শ্রেণির কথা তো সবাই জানেনই।

শাহরিয়া খান দিনা

একটা সম্পর্কে যখন একজন প্রতারিত হোন, সম্পর্কটা যখন ভেঙ্গে যায় সেটা সহ্য করা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। সম্পর্ক জিনিসটাই বেশ জটিল। সবাইকে এক কাতারে ফেলা যায় না সাজেশান দিতে গিয়ে। বিধাতার অদ্ভুত খেয়াল, মাটির তৈরি মানুষকে দেয়া হলো কাঁচের তৈরি মন! এই কাঁচটা যখন ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে, এগুলোকে গুছিয়ে ঠিকঠাক বাক্সবন্দী করে ফেলা সহজসাধ্য কোন ব্যাপার নয়।

অনেকেই আছেন যারা সংসারটা ধরে রাখতে একতরফাভাবে হেন কোন চেষ্টা নাই, করে না। ইহলৌকিক আধ্যাত্মিক সব অর্থাৎ কেস-মামলা, সালিশ-বৈঠক, তাবিজ-কবচ, হাত-পা ধরা সব…সব কিছুই….বাট শেষ রক্ষা হয় না।

কেউ যেতে চাইলে, মন উঠে গেলে তারে হাজারও চেষ্টাতেও ধরে রাখা যায় না। হ্যাঁ, তার চলার রাস্তায় পাশাপাশি হেঁটে বোঝানোর চেষ্টা করা যায় তুমি আমার কতোটা, তোমারে ছাড়া অসহ্য দুনিয়া! কিন্তু তার পথ আটকে রাখলে সে আপনাকে কাঁটা ভাববে, আর সেটা উপরে ফেলবেই যেকোনো উপায়। কিন্তু সব পরিস্থিতিতে চুপচাপ চলে আসাও যায় না, কারণ যদি কেউ অত্যাচারিত হয় তো তার অধিকার আছে ক্রিমিনালদের বিচার চাওয়া। সংবাদ সম্মেলনে মিলা বলেন, আমি তাকে দুষ্টু বলবো না। হি ইজ এ ক্রিমিনাল।

ওপেন সিক্রেট, টাকা এবং ক্ষমতা থাকলে আইনের ফাঁক-ফোকর গলিয়ে বেরিয়ে যাওয়াটা অসম্ভব নয় এখানে। একজন পরিচিত মুখ সেলিব্রিটি মেয়েকে যদি তার উপর অত্যাচার নির্যাতনের বিচার পাওয়ার জন্য মিডিয়ার সামনে এসে কাঁদতে হয়, তাহলে অন্য সাধারণ কত মেয়েরা যারা মিডিয়া পর্যন্ত আসতেও পারে না, তাদের কী অবস্থা তা সহজেই অনুমেয়।

গত ১৭ এপ্রিল মিলার ফেইসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন –
“কত কত জীবিত ‘নুসরাত’ আইন এর কাছে দাঁড়ান দিনের পর দিন। কিন্তু না মেরে ফেলা পর্যন্ত তাদের জন্য কোনও আওয়াজ উঠবে না। দুই বছর হয়ে যাচ্ছে, কোর্ট এ উল্টা জঘন্য ভাবে চিৎকার দিয়ে অপবাদ দেয়া হয় আমাকে। বিচার তো দূর। দাখিল করা ‘খ’ ধারার চার্জশিট আমাকে না বুঝতে দিয়ে ‘গ’ ধারায় মামলা চার্জ গঠন করা হয়। আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। আমার জানা ছিল, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় কোন রকমের হস্তক্ষেপে নেত্রীর কঠোর নিষেধ রয়েছে। তিন বার আদালতের আদেশ টানা অমান্য করলে জামিন বাতিল হবার কথা। পাঁচ বার আমাকে কোর্ট নানান বুঝ দিয়ে পার্মানেন্ট জামিন দেয়। আমি এখন বলতেও পারি নাই শেষের দিন আমার শাশুড়ি আমার স্বামীর কথায় আমাকে কিভাবে বাথরুম থেকে দরজা ভেঙে বিনা কাপড় পরিহিত অবস্থায় জঘন্য ভাবে টেনে আমার দেবর তার স্ত্রী এবং তার স্ত্রীর বাবা মায়ের সামনে এক ঘন্টা গালিগালাজ করতে থাকে। আমার বাবা ভাইবার এ ভিডিও কলের মাধ্যমে পুরাটা ঘটনা দেখে। এক পর্যায়ে আমি হাত জোড় করে ভিক্ষা চাই এই বলে ‘আম্মু আমাকে মেয়ে বলে নিয়ে আসছিলেন।.আমার গায়ে কাপড় নাই, দয়া করে আমাকে ঘরের দরজা বন্ধ করে যা বলার বলেন। কিন্তু এই অপমান করেন না। ভিডিওটা এখনও আমার কাছে আছে।

দেশের শিল্পী আমি? আজকে এইটাও বলে ফেললাম, এর চাইতে কাপড় পরা অবস্থায় আমার গায়ে আগুন দিয়ে দিত। আমি যাই বললাম তাতে পুরা মিডিয়া, শিল্পীরা, আমার ভক্তরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করার কথা। কাপড় ছাড়া ঐ ছেলেকে রাস্তায় নামিয়ে জুতার বাড়ি দিয়ে মারার কথা। তাই না? আমার এই পোস্টটাই তো সবার শেয়ার করার কথা তাই না? কেউ করবে নাহ্‌। কেউ নাহ। কারণ আমি বেঁচে আছি। এই মিলা কেন এখনও প্রতিদিন চিৎকার করে কাঁদে, উত্তর পাও তোমরা?”

কয়েকদিন আগেই বিচার চাওয়ার অপরাধে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয় নুসরাতকে। সে ঘটনার নির্মমতা কাঁদিয়েছে এদেশের সকল বিবেকবান মানুষকে। এমন আর কেউ মারা যাক সেটা কারোই কাম্য নয়। অপরাধের ন্যায্য বিচার নিশ্চিত হোক, বন্ধ হোক নারীর প্রতি সকল সহিংসতা।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.