উইমেন চ্যাপ্টার ডেস্ক: জোরপূর্বক বিয়ে ঠেকাতে অবশেষে নড়ে-চড়ে বসেছে যুক্তরাজ্য সরকার। বিভিন্ন দেশের বংশোদ্ভুত মেয়েদের পরিবার জোর করে ওই দেশে নিয়ে গিয়ে জোর করে বিয়েতে বাধ্য করার ঘটনা দেশটির প্রশাসনের নজরে আসার পর তারা কঠোর আইন করে তা নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছেন। এমন অপরাধ প্রমাণ হলে কিশোরীর বাবা-মাকে জেল খাটতে হতে পারে বলেও কর্তৃপক্ষ হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন।
বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্ক সাইমন্ডস এর বরাত দিয়ে এসব কথা বলা হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন, এটা ঠেকাতে তারা আইন করে একে বেআইনী ঘোষণা করার লক্ষ্যে কাজ করছেন।
সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, প্রতিবছর পাঁচ হাজারেরও বেশি কিশোরী মেয়েকে জোরপূর্বক বিয়েতে বাধ্য করানো হয়। শুধুমাত্র গত বছরের জুন থেকে আগস্টেই যুক্তরাজ্য সরকার এ সম্পর্কিত প্রায় চারশ অভিযোগ গ্রহণ করেছে। এদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশের বয়স ১৬ বছরের কম। কর্তৃপক্ষ লক্ষ্য করেছেন যে, এধরনের ঘটনা স্কুল ছুটি, বিশেষ করে গ্রীষ্মের লম্বা ছুটির সময় হয়ে থাকে।
প্রায় ত্রিশ বছর আগের এধরনের ঘটনার শিকার পাকিস্তানি মেয়ে শামীম আলীর ঘটনা বিবিসি ব্রেকফাস্ট অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হয়। ব্রিটেন প্রবাসী শামীম আলী বর্তমানে ম্যানচেস্টার সিটি কাউন্সিলন এবং জোরপূর্বক বিয়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী। তিনি ওই অনুষ্ঠানে বলেন, ‘ত্রিশ বছর আগের তুলনায় অবস্থার সামান্যই পরিবর্তন হয়েছে। আমাকেও ১৩ বছর বয়সে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আমি জানতাম না কি হতে যাচ্ছে। আমাকে শুধু বলা হয়েছিল, আমাকে আর রান্নাবান্না বা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করতে হবেনা। আমাকে জোর করে বিয়েতে বাধ্য করার এক সপ্তাহ আগে আমি জানতে পারি। আমি লোকটিকে এর পূর্বে কখনো দেখিনি। আমি একেবারেই জ্ঞানশূণ্য হয়ে পড়ি, এমনকি আমি জানতামও না, আমি কোথায় আছি।’
এধরণের ঘটনা ঠেকাতে সচেতনতা বাড়ানোর ডাক দিয়েছে যুক্তরাজ্য প্রশাসন। জোরপূর্বক বিয়ের সম্ভাব্য আক্রন্তদের পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের প্রয়োজনীয় তথ্য ও উপদেশ দেয়ার জন্য কাজ করতে বলা হয়েছে। শিক্ষক, ডাক্তার, বিমানবন্দরের স্টাফদেরকেরও এ বিষয়ে সচেতন থাকতে বলা হয়েছে।
সাইমন্ডস বলেন, ‘গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে অল্পবয়সী মেয়েদের জোরপূর্বক বিয়ের ঘটনার জন্য সবচাইতে মোক্ষম সময়। এসময় ওদের বিদেশে নিয়ে গিয়ে বিয়েতে বাধ্য করানো হয়।’ ‘Our Marriage: It’s Your Choice’ শীর্ষক কার্ড তৈরি করা হয়েছে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে। মন্ত্রী জানান, এই কার্ডে জোরপূর্বক বিয়ের ক্ষেত্রে যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে তাদের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এই কার্ডের মাধ্যমে ওরা জানবে যে এরকম পরিস্থিতিতে পড়লে তারা ফোর্সড ম্যারেজ ইউনিটে সহায়তা চাইতে পারবে, তারা দেশে কিংবা বিদেশে যেখানেই থাকুক না কেন।
মন্ত্রী বলেন, কোথায় কিশোরীরা তাদের পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে ভাববে, তার পরিবর্তে তাদের জীবন পর্যবসিত হচ্ছে এক আতংকে।
ফ্রিডম চ্যারিটি নামের এক সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা আনিতা প্রেম বলেন, কিশোরীরা হয়তো তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে বাইরে যাচ্ছে পারিবারিক কোন বিয়েতে অংশ নিতে যাচ্ছে শুনে, কিন্তু শেষপর্যন্ত তা তাদের নিজেদের বিয়েতেই রূপ নিচ্ছে। কাজেই তাদের জানা উচিত, এরকম অবস্থায় পড়লে কাদের সাথে তারা যোগাযোগ করবে।
তবে শামীম আলী বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন না যে, জোরপূর্বক বিয়েকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হলে তার কোন প্রভাব ফেলবে তার কমিউনিটিতে। তখন এটি ঘটবে গোপনে। কারণ কোনো কিশোর-কিশোরীই চায় না তাদের মা-বাবা জেল খাটুক, আর এটাই মূল কারণ।
ছায়া অভিবাসন মন্ত্রী ক্রিস ব্রায়ান্ট এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এই ইস্যুটি সামনে চলে আসা জরুরি ছিল। কিন্তু যখন স্কুল ছুটি হয়ে গেছে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ছুটিতে চলে গেছে, তখন এটি কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে তিনি চিন্তিত। তার মতে, এটি হওয়া উচিত ছিল ছুটির আগে।
সরকার এক্ষেত্রে জোরপূর্বক বিয়েকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করে স্কটল্যান্ডের উদাহরণ ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসেও স্থাপন করার পরিকল্পনা করছে। এর ফলে এরকম বিয়েতে বাধ্য করার কারণে বাবা-মাকে কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। অপরাধ দমন মন্ত্রী জেরেমি ব্রাউনি বলেন, এধরনের ঘটনা ভয়াবহ মানবাধিকার লংঘন। সেকারণেই আইন করে একে নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছি আমরা।